লন্ডন: পবিত্র রমজানে লন্ডনের বাংলা টিভি চ্যানেলগুলোতে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান। এইসব অনুষ্ঠানের সময়টি দখলে নিয়েছে বিভিন্ন চ্যারিটি সংগঠন।
অবশ্য শুধু বাংলাদেশি চ্যানেলই নয়, টিভি পর্দায় রয়েছে পাকিস্তানিসহ অন্যান্য চ্যানেলগুলোও। যারা পরকালের লোভ দেখিয়ে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলমানদের কাছ থেকে সংগ্রহ করছেন মোটা অংকের অর্থ।
অথচ শুধু এবারই নয়, সেই প্রথম থেকেই এসব অর্থের গন্তব্য নিয়ে রয়েছে অনেকেরই প্রশ্ন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ বিস্তারই এসব অর্থের গন্তব্যের মূল কাজ এমনও খবর এসেছে মিডিয়ায়। এরপরও থেমে নেই ধর্মের নামে এই তহবিল সংগ্রহ।
অন্যান্য বারের মত এবারেও রমজানের শুরু থেকে ব্রিটেনের প্রতিটি বাংলা টিভি চ্যানেলে শুরু হয়েছে চ্যারিটির নামে এ তহবিল সংগ্রহ। প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে শুরু হওয়া এই চ্যারিটি এপিল চলে ভোর রাত পর্যন্ত। এটি চলবে পুরো রমজান মাস।
এইসব এপিলে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান রাত প্রতি ১ মিলিয়ন পাউন্ডেরও উপরে সংগ্রহ করছে। ধর্মীয় সাজে সজ্জিত শায়েখ, মওলানা, ইসলামীক স্কলার এমন পদবীধারীরা টিভি পর্দায় উপস্থিত হয়ে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে পরকালের লোভ দেখিয়ে সংগ্রহ করেন তহবিল।
অথচ এই তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে টিভি চ্যানেলগুলোর কাছ থেকে কিভাবে তারা এয়ার টাইম পাচ্ছেন, নিজেরা যে সময় দিচ্ছেন এটি কি ফ্রি না বিনিময়ে তারা কিছু নিচ্ছেন- এবিষয়গুলো পরিষ্কার করছেন না চ্যারিটি দাতাদের কাছে।
ফলে দাতাদের দানকরা অর্থের পুরো অংশ সঠিক গন্তব্যে যাচ্ছে কি না এ নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠেছে দাতাদের না জানিয়ে তাদের দানকরা অর্থ থেকে যদি টিভি চ্যানেলের এয়ারটাইম ভাড়া বা পর্দায় উপস্থিত এপিলদাতাদের পারিশ্রমিক কেটে রাখা হয় তা শরিয়ত অনুযায়ী কতটুকু সঠিক?
ব্রিটেনের সাম্প্রতিক সময়ের এইসব চ্যারিটি এপিল, দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের গরীব আত্মীয় স্বজনকেও তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আগে রমজান ঈদসহ বিভিন্ন সময় সামনে রেখে প্রবাসীরা দেশে বসবাসরত নিজেদের গরীব আত্মীয় স্বজনকে অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের টিভি চ্যারিটি এপিলের কারণে এই অর্থ এখন অনেক প্রবাসীই আর নিজেদের গরীব আত্মীয় স্বজনকে না দিয়ে টিভি চ্যারিটি এপিলে দান করছেন।
কোরবানি মাংস খাবেন এমন আশায় দেশে বসবাসরত আত্মীয় স্বজন আগে ঈদুল আযহার অপেক্ষায় থাকতেন, সেই অপেক্ষাও এখন বাধ সেধেছে ব্রিটেনের টিভি চ্যারিটি এপিল। ঈদুল আযহা আসার আগেই এখন বিভিন্ন সংগঠন কোরবানি এপিলের নামে দখল করে থাকে টিভি চ্যানেলগুলো। ফলে অনেক কোরবানি দাতাই তাদের অর্থ এখন আর দেশে না পাঠিয়ে এইসব চ্যারিটি সংস্থায় দান করে দিয়ে থাকেন।
তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ অন্যান্য উপলক্ষ্য্ গুলোরও খুব ভালো সদ্যবহার করছেন ধর্মের নামে প্রতিষ্ঠিত এইসব চ্যারিটি সংগঠন।
বিগত বছরগুলোতে এইসব চ্যারিটি সংগঠনের কোনো কোনটি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত এমন অভিযোগ পাওয়ার পর ব্রিটিশ চ্যারিটি কমিশন নজরধারী শুরু করে রমজানের তহবিল সংগ্রহের উপর। এবারও সেই নজরধারীতে রয়েছে টিভি চ্যানেলগুলোতে পরিচালিত চ্যারিটি কার্যক্রম। ব্রিটিশ চ্যারিটি কমিশন এ বিষয়ে বাড়িয়েছে ব্যাপক নজরদারি।
এক্ষেত্রে ‘চেঞ্জ দ্যা পিকচার’ নামে প্রচার মাধ্যমে ভিডিও ক্যাম্পেইন ছাড়াও গোপনীয় কিছু নজরদারী চালিয়ে যাচ্ছে কমিশন। চ্যারিটি কমিশন যাচাই বাচাই করে চ্যারিটি আহ্বানে সাড়া দিতে পরামর্শ দিয়েছে দাতাদের।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কমিশনের পলিসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন ডাইরেক্টর সারাহ আকিনসন জানান, পবিত্র রমজান অসহায় মানুষকে সাহায্য করার উপযুক্ত সময় হিসেবে মুসলমানদের কাছে বিবেচিত হলেও কেউ কেউ এই সময়টিকে অবৈধভাবে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করে।
তিনি বলেন, ধর্মপ্রাণ মুসলমান যাদের উদ্দেশে মুক্ত হস্তে এই দান করছেন, সেটি যাতে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে চ্যারিটি কমিশন এটি নিশ্চিত করতে চায়। আর এ লক্ষ্যেই আমরা দাতাদের সঠিক ও আইনগতভাবে বৈধ চ্যারিটি সংস্থায় দান করার পরামর্শ দিচ্ছি।
তার মতে, চ্যারিটি কার্যক্রমের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস টিকিয়ে রাখতেই কমিশন এটি করছে।
সারাহ দান করার আগে ১০টি বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্যে দাতাদের পরামর্শ দেন তিনি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, দানের আগে অনলাইন চ্যারিটি সার্চে গিয়ে চ্যারিটি সংগ্রহকারী সংগঠনটির নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিশ্চিত হওয়া, পাবলিক প্লেসে চ্যারিটি সংগ্রহকারী সংগঠনটির পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি আছে কিনা খোঁজ নেওয়া এবং রেডিও ও টিভি চ্যারিটি এপিলে অফকম রুল মানা হচ্ছে কি না তা খেয়াল রাখা ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৫ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৫
এসএইচ