লন্ডন: ব্রিটেন থেকে সাপ্তাহিক ডাস্টবিন কালেকশন বাংলাদেশে আনতে চান তারেক রহমান। বিএনপি’র এই সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের দীর্ঘ লন্ডনবাসে এই বিষয়টিতেই সবচেয়ে মন কেড়েছে।
তবে নিজ ঘরানার সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেও বেশ চোটপাট দেখিয়েছেন তারেক রহমান। ইফতার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন এমন একাধিক সাংবাদিক বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন। ওই ইফতার পার্টিতে তারেকের আচরণ অসৌজন্যমূলক ঠেকেছে অনেকের কাছেই। আর সেটাই হয়ে উঠেছে এখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ‘টক অব দ্য টাউন’।
ইফতারে উপস্থিত হওয়া একজন সাংবাদিকের মতে, প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যাওয়া, প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে রূঢ়ভাবে পাল্টা প্রশ্ন করে সাংবাদিকদের হাসিঠাট্টার পাত্র বানিয়ে ইফতারকেন্দ্রিক আড্ডার সময় পার করেন তারেক।
দলের নেতাদের নির্দেশে পেট্রোল বোমা আন্দোলন করতে গিয়ে যাদের অনেকেই এখন কারাগারে বা পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের প্রসঙ্গ এলেও তারেক সে ব্যাপারে কথা বলতে আগ্রহী ছিলেন না। তবে স্ত্রীকে ঈদে অন্তত একটি কাপড় হলেও কিনে দিতে চান এমনটি তিনি জানান সাংবাদিকদের।
নিজের সৌদি আরব সফরের বিষয়টি ইফতার মাহফিলেই স্পষ্ট করেন তারেক রহমান। আগামী ৮ জুলাই, বুধবার পবিত্র ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে লন্ডন ত্যাগ করছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, ওই দিনই ঢাকা থেকে তারেকের মা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সৌদি আরব পৌঁছাবেন।
ওই ইফতারে উপস্থিত বিএনপি ঘরানার সাংবাদিকরা যখন বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলেন তখন কিছু কিছু প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তারেক। এসময় তিনি প্রশ্নকারীদের রীতিমতো ‘সবক’ দেন ও পাল্টা প্রশ্ন করে ‘নাজেহাল’ করেন বলেই জানিয়েছেন উপস্থিত সাংবাদিকদের কয়েকজন।
ইফতার মাহফিলসূত্র জানায়, এসময় কথা ওঠে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে নিয়ে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ভারমুক্ত হবেন কি না জানতে চাওয়া হলে জবাবে তারেক বলে ওঠেন,‘আমার দল কিভাবে চলবে তা আমি জানি’।
‘আন্দোলনে বিএনপি’র ‘রণেভঙ্গ’ দেওয়ার দায় কে নেবে?’ –এই প্রশ্নকারী সাংবাদিককে তারেক অনেকটা রূঢ়ভাবেই বলেন, ‘আগে ৫০ বছরের ইতিহাস শিখে আসুন, তারপর প্রশ্ন করুন’।
গণতন্ত্রের সূতিকাগার ব্রিটেনে দীর্ঘ আট বছরের বসবাসের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের জন্যে নিয়ে যাওয়ার মতো কি আছে? এমন প্রশ্নে সাপ্তাহিক ডাস্টবিন কালেকশন করার কথা বলেন তারেক রহমান। এছাড়াও যানযট নিয়ন্ত্রণ তার কাছে ভালো লেগেছে বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ব্রিটেন সফরে বিএনপি’র কালো পতাকা প্রদর্শন দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তারেকের পাল্টা প্রশ্ন ছিল, ক্ষুণ্ন কেন করবে? ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে না?
সৌদি আরব সফর নিয়ে নানা প্রশ্ন করা হলেও তারেক রহমান সে ব্যাপারে জবাব এড়িয়ে যান। তবে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, এবারের সৌদি আরব যাত্রা শুধুই ওমরাহ পালনের জন্যে নয়। বাংলাদেশের আগামী সরকারবিরোধী রাজনীতির একটি খসড়া ছক হয়তো আঁকা হবে মা-ছেলের ওই সাক্ষাতে। শুধু সরকারবিরোধী রাজনীতিই নয়, ২০ দলীয় জোটের ভবিষ্যৎও হয়তো ঠিক হবে ওই সময়। জামাতের সাথে বিএনপি’র আগামী দিনের সম্পর্ক কেমন হবে, এনিয়েও সিদ্ধান্ত হবে সাক্ষাৎকালে।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে জামাতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বিদেশি ও দলের একাংশের চাপ থাকলেও লন্ডনের সাম্প্রতিক ইফতার মাহফিলগুলোর আলোচনায় কৌশলে এবিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন তারেক।
তবে বিএনপি ঘরানার কমিউনিটি একিটিভিস্টদের ইফতার মাহফিলে লন্ডনের জামায়াত নেতাদের পাশে নিয়ে ইফতার করা তার জামায়াতপ্রীতিরই প্রকাশ। আলোচনায় এমনও আছে যে, তারেকের পরামর্শেই ঢাকায় জামায়াতের ইফতার মাহফিলে খালেদা জিয়া উপস্থিত হয়েছিলেন।
লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনের দীর্ঘ আট বছর পর ইফতারকে উপলক্ষ করে সাংবাদিকদের সাথে এবারই প্রথম বৈঠক করেন তারেক রহমান। জামাতের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে কথা বলেন এমন কয়েকজন প্রগতিশীল সিনিয়র সাংবাদিক আমন্ত্রণই পাননি। এছাড়াও লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিককে দেখা যায়নি ইফতার মাহফিলে।
বাংলাদেশ সময় ১০৪০ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৫
এমএমকে/জেএম