লন্ডন: জিসিএসই ও এ লেভেলে বাংলাসহ অন্যান্য কমিউনিটি ভাষা শিক্ষা চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটেনের স্কুল মিনিস্টার নিক গিব।
স্থানীয় সময় বুধবার (২২ জুলাই) বাংলানিউজসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো ডিপার্টমেন্ট ফর এডুকেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নির্বাচন পূর্ব প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বুধবার স্কুল মিনিস্টার বাংলাসহ কমিউনিটি ভাষা শিক্ষা চালু রাখার ঘোষণা দেন।
চলতি বছরের ৭ই মে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনের আগে এডুকেশন সেক্রেটারি নিকি মরগান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, কনজারভেটিভ পার্টি ফের ক্ষমতায় আসলে ‘জিসিএসই’ ও ‘এ’ লেভেলে বাংলা, পোলিশ, পাঞ্জাবি, টার্কিস, গুজরাটিসহ অন্যান্য কমিউনিটি ভাষা শিক্ষা চালু রাখবে।
কমিউনিটি ভাষা শিক্ষা কিভাবে চালু রাখা যায় সে পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বোর্ডের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করারও ঘোষণা দেন স্কুল মিনিস্টার।
এর আগে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বোর্ড ঘোষণা দিয়েছিল, বেশ কিছু ভাষা শিক্ষা জিসিএসই ও এ- লেভেলে আর চালু রাখার প্রয়োজন নেই।
কমিউনিটি ভাষা শিক্ষা চালু রাখার ঘোষণা দিয়ে স্কুল মিনিস্টার নিক গিব বলেন, আধুনিক ব্রিটেনের জীবন-যাপনের জন্য নিজেকে তৈরি করতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কারিকুলামের অংশ হিসেবে বিদেশি ভাষা শিক্ষার সুযোগ থাকা উচিত। আর এক্ষেত্রে আরও বেশি করে কমিউনিটি ভাষাকে শিক্ষার আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, কিছু কিছু কমিউনিটি ভাষা শিক্ষা বাদ দেওয়ার বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের পরিকল্পনার পর সরকার এটি অব্যাহত রাখতে বোর্ডের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্কুল মিনিস্টারের মতে, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের এই পরিকল্পনার বিপরীতে কিভাবে কমিউনিটি ভাষা শিক্ষা অব্যাহত রাখা যায় তা নিয়ে বোর্ডসহ অন্যান্য এজেন্সির সঙ্গে কাজ করতে সরকার সংকল্পবদ্ধ।
নিক গিব বলেন, ব্রিটেনের মতো একটি আউটওয়ার্ড ফেইসিং দেশের প্রয়োজন উচ্চমানের ভাষাযোগ্যতা। এটি শুধু ফরাসি, জার্মান বা স্প্যানিশ দিয়ে হবে না। প্রয়োজন পোলিশ, বাংলা, গুজরাটি, পাঞ্জাবি ও টার্কিস ভাষার মত ভাষাগুলোও।
এদিকে, কমিউনিটি ভাষা শিক্ষা চালু রাখার সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশ ও পোল্যান্ডের হাইকমিশনার।
বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান স্কুল মিনিস্টারের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, মাল্টি কালচারাল ব্রিটিশ সোসাইটিতে বহু ভাষা শিক্ষার বিকল্প নেই। ২/১ টি ভাষা রেখে কমিউনিটির অন্যান্য ভাষা শিক্ষা বাদ দেওয়ার বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের পরিকল্পনার পর ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে এমন একটি ঘোষণা আসবে এটি আমরা আশা করেছিলাম। আমরা একে স্বাগত জানাই।
হাইকমিশনারের মতে, বহু ভাষা শিক্ষা বিশ্ব নাগরিক হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে, বহুজাতিক সমাজের নাগরিকদের পারস্পরিক উপলব্ধির যোগ্যতা এনে দেয়। সরকারের এই ঘোষণার পর জিসিএসই ও এ লেভেলে বাংলা ভাষা শিক্ষার সুযোগ নিতে সন্তানদের উৎসাহী করার জন্য হাইকমিশনার ব্রিটিশ-বাংলাদেশি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।
পোল্যান্ডের হাইকমিশনার উইটল্ড শবকো কমিউনিটি ভাষা শিক্ষা অব্যাহত রাখার স্কুল মিনিস্টারের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ারের জন্য দ্বিতীয় ভাষা যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, এটি উপলব্ধি করার জন্য ব্রিটেনের শিক্ষা বিভাগকে আমি ধন্যবাদ জানাই। ব্রিটেনে বসবাসরত নিজেদের নাগরিকদের স্বার্থে পোলিশ শিক্ষা বিভাগ প্রয়োজনে ব্রিটেনের শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করতেও আগ্রহী বলে মন্তব্য করেন হাইকমিশনার উইটল্ড শবকো।
বাংলাসহ বেশ কিছু ভাষা জিসিএসই এবং এ লেভেল পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির প্রসারে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিরা এনিয়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে ক্যাম্পেইনও শুরু করেন। এমনসব বহুমুখি ক্যাম্পেইন বিবেচনায় নিয়েই নির্বাচনের আগে এডুকেশন সেক্রেটারি নিকী মরগান ঘোষণা দেন, কনজারভেটিভ পার্টি ফের ক্ষমতায় গেলে কমিউনিটি ভাষা শিক্ষার সুযোগ অব্যাহত রাখবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৫
জেডএস