লন্ডন: গত বছরের পার্লামেন্ট নির্বাচন ক্যাম্পেইনে বঙ্গবন্ধুর নাতনী ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার দলীয় এমপি টিউলিপ সিদ্দিকির ধর্ম বিশ্বাসই তার বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে বিরোধীরা, বললেন তিনি।
লন্ডন মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখে শীর্ষস্থানীয় ব্রিটিশ জাতীয় দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তার এ স্মৃতিচারণ উঠে আসে।
তিনি বলেন, টিনএজ বয়সে আমি লেবার পার্টিতে যোগ দিলেও যখন পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিলাম, তখনই প্রথম শুনলাম আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে আমারই ধর্মবিশ্বাসকে।
এই নেতিবাচক প্রচারণা আমার স্থানীয়দের লেবার সদস্যদের মধ্য থেকে নয়, এটি হচ্ছে বাইরে থেকে। আমাকে বলা হয়, আমার নামের শেষ অংশটি ব্যবহার করলে নির্বাচনে জিততে পারবো না। টিউলিপ সিদ্দিক নামে কাউকে ভোটাররা ভোট দেবে না। কেউ কেউ কৌশলী পরামর্শ দেন ‘নামের শেষে তোমার স্বামীর নাম যুক্ত করলে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন তোমার জন্যে সহজ হবে’, বলেন তিনি।
টিউলিপ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ধর্মকেই বারবার ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের সামনের ক্যাম্পইনে বলা হয়েছে, আমার স্বামী একজন ইহুদি আর ইহুদি ভোটারদের কাছে বলা হয়েছে, আমি একজন কট্টর মুসলমান। অপপ্রচারে এমনভাবে আমাকে তুলে ধরা হলো- একজন কট্টর মুসলমান হওয়ার কারণে আমি যেমন কারও কাছে বিষাক্ত, ঠিক তেমনি প্রকৃত মুসলমান নই এই কারণে আবার কারও কাছে আমি বিষাক্ত।
ইহুদি কমিউনিটির কেন্দ্রস্থল হ্যাম্পস্টেড এলাকায় আমি বেড়ে উঠলেও কখনো অনুভব করিনি আমি বাইরের কেউ। ক্রিসমাস ট্রি সাথে নিয়ে আমরা যেমন একসাথে নৈশভোজ করেছি, একইভাবে ঈদে উপহার নিয়ে আমার প্রতিবেশীরাও এসেছেন আমাদের ঘরে। আমরা একত্র হয়েছি, লন্ডনার হিসেবে। এই উপলক্ষগুলো ধর্মের কারণে নয়, এক কমিউনিটির চেতনা থেকেই, বলেন টিউলিপ।
আমার পরিবার বহুজাতিক ব্রিটেনকে ধারণ করেছেন নিজের অন্তরে, উদারভাবে।
নির্বাচনী ফল ঘোষণার সেই রাতের কথা উল্লেখ করে টিউলিপ বলেন, জাতীয়ভাবে লেবারের জন্যে কঠিন রাত হলেও আমার এলাকায় আমি নিশ্চিত করেছিলাম লেবারের মেজরিটি। তবে আমার নাম পরিবর্তন করে নয়, শত অপপ্রচারের মধ্যেও হ্যামস্টেড ও কিলবার্নের ভোটার আমাকে ভোট দিয়েছিলো টিউলিপ সিদ্দিক হিসেবেই।
মেয়র নির্বাচনে তার দলের প্রার্থী সাদিক খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের ব্যক্তিগত আক্রমণের জবাব দিতে টিউলিপ বলেন, কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক চেয়ার ব্যারোনেস ওয়ারসির মতের সাথে আমি খুব একটা সহমত পোষণ না করলেও লন্ডন মেয়র নির্বাচন নিয়ে তার একটি মন্তব্য আমাকে ব্যাপক তাড়িত করেছে। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘লন্ডনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে সাদিক খান যদি একজন প্রকৃত মুসলমান হিসেবে গ্রহণযোগ্য না হন, তাহলে কোন মুসলমান গ্রহণযোগ্য’।
টিউলিপ আরও বলেন, আমি ও ওয়ারসির মধ্যে একটি মিল আছে। আমরা দু’জনই এথনিক মাইনোরিটিভুক্ত নারী। মুসলমান পরিবারের হয়েও আমরা বিশ্ব রাজনীতিতে ঢোকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার বলতে দ্বিধা নেই যে, ওয়ারসিকেও বিভিন্ন সময় ইসলামোফোবিয়া মোকাবেলা করতে হয়েছে।
আমার সময়ে ভোটাররা যেমন সব অপপ্রচারের জবাব দিয়েছিলো ভোটের মাধ্যমে, একইভাবে ভোটাররা মেয়র নির্বাচনেও সেভাবে জবাব দেবে সাদিক খানের পক্ষে, আশাবাদ টিউলিপের।
তিনি বলেন, ন্যায় বিচারের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া একজন হিসেবেই সাদিক খানকে আমি চিনি। কনজারভেটিভ পার্টির বর্ণবাদী অপপ্রচার শুরুর আগে পর্যন্ত সাদিক খানের ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে ভাবার চিন্তাই করিনি আমি!
কনজারভেটিভ দলীয় প্রার্থী জ্যাক গোল্ডস্মিথের ক্যাম্পেইনের সমালোচনা করে টিউলিপ বলেন, আমি জানি না গোল্ডস্মিথের নির্বাচনী ক্যাম্পেইন কেন এত নোংরামির দিকে ধাবিত হলো। স্মিথ নিজে একজন ভদ্রলোক। আমার মনে হয়, অনেকের ভাবনা গোল্ডস্মিথ নয় তার ক্যাম্পেনাররাই এটি করছে। তবে শুধুমাত্র এই যুক্তিই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনে জিততে শক্ত প্রচারণা নিয়েই মাঠে নামতে হয়, কিন্তু জ্যাক গোল্ডস্মিথের প্রচারণায় উচ্চাকাঙ্ক্ষা মানবতাকে ছাড়িয়ে গেছে বলেই আমি মনে করি।
আশা করি, লন্ডনের শুভবুদ্ধির মানুষরা বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৬
এটি