ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লন্ডন

ব্রিটেনের নির্বাচনে প্রার্থী হলেন যেসব বাংলাদেশি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫১ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১৭
ব্রিটেনের নির্বাচনে প্রার্থী হলেন যেসব বাংলাদেশি

লন্ডন: প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে গত বুধবার (০৩ মে) দেখা করে পার্লামেন্ট বিলুপ্তের তথ্য জানান। ফলে বুধবার থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে ০৮ জুনের মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হলো। 

ইতোমধ্যে লেবার পার্টি, কনজারভেটিভ পার্টি ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি তাদের বেশ কয়েকটি নির্বাচনী পলিসি বিচ্ছিন্নভাবে ঘোষণা করেছে। কোনো দলই এখন পর্যন্ত নির্বাচনী ম্যানুফেস্টু ঘোষণা দেয়নি।

তবে চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সব দল তাদের ম্যানুফেস্টু ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে।  

এখন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে মোট ১০ জন ব্রিটিশ বাংলাদেশি। এর মধ্যে লেবার পার্টির সাতজন, লিবারেল ডেমোক্রেটের একজন এবং স্বতন্ত্র দুইজন। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ, মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময়সীমা হচ্ছে ১১ মে। লেবার পার্টি ০৮ জুনের সাধারণ নির্বাচনে তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে।  

এই তালিকায় তিন ব্রিটিশ বাংলাদেশি সাবেক এমপিসহ কমপক্ষে সাতজন প্রার্থিতা পেয়েছেন। তারা হলেন- বেথনালগ্রিন অ্যান্ড বো’তে রোশানারা আলী, হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন থেকে টিউলিপ সিদ্দিক, ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাক্টন থেকে ড. রুপা হক, ওয়েলিং অ্যান্ড হ্যাটফিল্ড থেকে ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া, স্কটল্যান্ডের এডিনবরা সাউথ ওয়েস্ট থেকে ফয়সল চৌধুরী এমবিই, পোর্টসমাউথ নর্থ থেকে আব্দুল্লাহ রুমাল খান এবং বেকেনহাম থেকে মেরিনা আহমেদ।  

লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি লুটন সাউথ আসনে প্রার্থী দিয়েছে ব্রিটিশ বাংলাদেশি আশুক আহমদ এমবিই-কে। আর বেথনালগ্রিন বো আসনে প্রার্থী হয়েছেন ইমাম ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আজমল মাশরুর এবং পপলার ও লাইম হাউজ থেকে প্রার্থী হয়েছেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি লিডার কাউন্সিলার ওলিউর রহমান।  
লেবার পার্টি এবার লন্ডনে মোট ৭৩টি আসনের মধ্যে ৩৮ জন নারী এবং ৩৫ জন পুরুষকে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। এবারের মনোনয়নে স্থানীয় সংগঠনের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা ছিলো না। আঞ্চলিক বোর্ড এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটি মিলে আবেদনপত্রের উপর ভিত্তি করে প্রার্থীদের মনোয়ন দেয়। নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব এমপি এবং ২০১৫ সালের সব অকৃতকার্য প্রার্থীরা কোনো ধরনের মনোনয়ন প্রক্রিয়া ছাড়াই প্রার্থিতা পান। কেবলমাত্র যেসব আসনে গতবারের প্রার্থীরা অপারগতা প্রকাশ করেছেন বা যেসব এমপি আর নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন সেসব আসনেই নতুন প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটি মোট নয়জন সদস্য এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।  

এই প্রার্থীদের মধ্যে কেবলমাত্র রোশানারা আলী ছাড়া সবার ক্ষেত্রেই জয়ের ব্যাপারে আশংকা রয়েছে। গত নির্বাচনে ভোটের ব্যবধান সবচেয়ে কম ছিলো রুপা হকের। তার সংখ্যাগরিষ্টতা ছিলো মাত্র ২৭৪ ভোট। সংবাদ পত্রের সূত্র অনুযায়ী, এই আসনটি লন্ডনের মধ্যে লেবারের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সিট।  

এদিকে, টিউলিপ সিদ্দিক হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে ২৩ হাজার ৯শ ৭৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।  কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী সাইমন মার্কাস পান ২২ হাজার ৮শ ৪৯ ভোট। এই আসনে এথনিক মাইনোরিটি ভোটারদের সংখ্যা তেমন না থাকায় আবারও থাকে কঠিন নির্বাচনী পরীক্ষায় মুখোমুখি হতে হবে। তার নির্বাচনী ফলাফলের ব্যাপারে এখনও কেউ নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না।  

অন্যদিকে, বেথনালগ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে দু’বার এমপি নির্বাচিত হন রোশানারা আলী। তার সংখ্যাগরিষ্টতা ২৪ হাজার ৩শ ১৭ ভোট। রোশানারার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিলো ৩২ হাজার ৩শ ৮৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টরি পার্টির মেথিউ স্মিথ পান আট হাজার ৭০ ভোট। আগামী ০৮ জুনের নির্বাচনে রোশানারার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না বলে অনেকেই মনে করেন। এই আসনে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ইমাম আজমল মাশরুর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই আসনে জিততে হলে তাকে ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে হবে। একই আসনে গত ২০১০ সালের নির্বাচনে তিনি লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১০ হাজার ২শ ১০ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। আর তখন রোশানারা আলী পেয়েছিলেন ২১ হাজার ৭শ ৮৪ ভোট। এবারে নির্বাচনে আজমল মশরুরকে তার সাবেক দল লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির বিরুদ্ধেও লড়তে হবে।  

ওয়েলিং অ্যান্ড হার্টফিল্ড আসনটি কনজারভেটিভ পার্টির নিরাপদ সিট। এই আসনের এমপি হচ্ছেন টরি পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান গ্র্যান্ড শাপ। গতবার একই আসনে নির্বাচন করে আনোয়ার বাবুল পান ১৩ হাজার ১শ ২৮ ভোট পেয়েছিলেন। বিজয়ী প্রার্থী গ্র্যান্ড শাপ পান ২৫ হাজার ২শ ৮১ ভোট। তার সংখ্যাগরিষ্টতা ছিলো ১২ হাজার ১শ ৫৩ ভোট।

বেকেনহাম আসনটিও কনজারভেটিভ পার্টির নিরাপদ সিট। বাঙালি মেরিনা আহমেদ গত নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ভোট পান নয় হাজার ৪শ ৮৪। আর বিজয়ী প্রার্থী বব স্টুয়ার্ট পান ২৭ হাজার ৯শ ৫৫ ভোট। তার সংখ্যাগরিষ্টতা ১৮ হাজার ৪শ ৭১ ভোট।  

পোর্টসমাউথ নর্থ আসনটিও টোরির নিরাপদ আসন। এই আসনে গত নির্বাচনে লেবার পার্টির জন ফেরেট ১০ হাজার ৮০৬ ভোট পান। আর বিজয়ী প্রার্থী কনজারভেটিভ পার্টি পেনি মর্ডান্ট পান ২১ হাজার ৩শ ৪৩ ভোট। এখানে সংখ্যাগরিষ্টতা ১০ হাজার ৫শ ৩৭ ভোট। এবার এই আসনে বাঙালি প্রার্থী রুমেল খানকে জিততে হলে এই সংখ্যাগরিষ্টতার বেশি ভোট পেতে হবে।  

স্কটল্যান্ডের এডিনবারা সাউথ ওয়েস্ট আসনটি লেবার পার্টির ছিলো। লেবার পার্টির সাবেক চ্যান্সেলার আলিস্টার ডালিং ২০১০ সাল পর্যন্ত এই আসনের এমপি ছিলেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি)‘র জোয়ারে লেবার পার্টি সিটটি হারায়। এই আসনের বর্তমান এমপি এসএনপির জোয়ার্না চেরির সংখ্যাগরিষ্টতা আট হাজার ১শ ৩৫ ভোট। লেবার পার্টির প্রার্থী রিকি হেন্ডারসন পেয়েছিলেন ১৪ হাজার ৩৩ ভোট। আর বিজয়ী প্রার্থী জোয়ানা পেয়েছেন ২২ হাজার ১শ ৬৮ ভোট। এই আসনে ভালো করে প্রচারাভিযান চালালে এবং গত নির্বাচনের চেয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি ভোট পেলে ফয়সল চৌধুরীর গলায় বিজয়ের মালা পরতে পারে। নতুন প্রার্থীদের মধ্যে বাঙালি ফয়সল চৌধুরীর আসনে ভোটের পার্থক্য সবচেয়ে কম।  

লুটন সাউথ আসনটি মূলত লেবারের নিরাপদ আসন। এখানে গেবিন শুকার ২০১৫ সালের নির্বাচনে ১৮ হাজার ৬শ ৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। একই আসনে গত নির্বাচনে লিবারেল ডেমোক্রেট থেকে প্রার্থী হয়ে আশুক আহমদ এমবিই তিন হাজার ১শ ৮৩ ভোট পান। এই আসনে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে কনজারভেটিভ পার্টির ক্যাটি রেডমন্ড। তার প্রাপ্ত ভোট ছিলো ১২ হাজার ৯শ ৪৯। একই আসনে তৃতীয় স্থান লাভ করেন ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টির মুহাম্মদ রহমান। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা পাঁচ হাজার ১শ ২৯। এই আসনে লেবার পার্টির সংখ্যাগরিষ্টতা পাঁচ হাজার ৭শ ১১ ভোট।  

পপলার অ্যান্ড লাইম হাউজ আসনটি লেবারের নিরাপদ সিট। এখানে লেবারের এমপি রয়েছেন সাবেক মিনিস্টার জীম ফিজপ্রেট্রিক। এই আসনে তার সংখ্যাগরিষ্টতা ১৬ হাজার ৯শ ২৪ ভোট।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৭
এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

লন্ডন এর সর্বশেষ