সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্স ফোর্স উপদ্রুত এলাকায় বালুর ব্যাগ সরবরাহ করেছে। উভচর মালবাহী যানবাহন মোতায়েন করছে ও আটকাপড়া বাসিন্দাদের ছাদ থেকে হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উত্তরাঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে সাধারণত ভারী বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। তবে এ বছর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) কর্তৃপক্ষ পানি নিষ্কাশনের পথ খুলে দেয়। বন্যার পানির স্রোতের গতিকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলছেন কর্তৃপক্ষ। বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত টাউন্সভিলে গাড়িগুলো পানিতে প্রায় ডুবে গেছে।
স্থানীয় বেতারের সাংবাদিক গাবি এলগুড সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘জীবনে আমরা বন্যায় এতো বেশি পানি দেখিনি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে এলে আপনি মনে করতে পারেন যে, এর চেয়ে বেশি পানি বাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়নি। ’
ভয়াবহ এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্থানীয়দের আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার কারণে অন্ধকারেই দিনাতিপাত করার পাশাপাশি কুমির ও জলাশয়গুলোর অন্যান্য হিংস্র সরীসৃপ প্রাণী থেকেও সতর্ক থাকতে হচ্ছে। বন্যা উপদ্রুত টাউন্সভিলে বেশ কয়েকটি লোনাপানির কুমির দেখা গেছে।
জরুরি সংস্থাগুলো ভয়াবহ এ দুর্যোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছে না। শুধু রোববার রাতেই উদ্ধারকর্মীরা ১৮ জনকে পানি থেকে উদ্ধার করেছে। এরা বন্যার পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছিল।
রাজ্যপ্রধান আনাস্তাসিয়া প্যালাজজুক বলেন, ১ হাজার ১০০ জনের বেশি জরুরি সহায়তা চেয়েছে। টাউন্সভিলের প্রায় ৪০০ বাসিন্দা নিকটস্থ লাভারাক সেনা ব্যারাকে আশ্রয় নিয়েছে। রেডক্রসও দুর্গতদের সহায়তা ও উদ্ধার তৎপরতায় এগিয়ে এসেছে।
স্থানীয় কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার স্কট উইন্টার বলেন, ‘রাতভর ছোট নৌযানের সাহায্যে মানুষদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ’ প্যালাজজুক আগামী দিনগুলোতে উপদ্রুত অঞ্চলগুলোর বাসিন্দারা আরও কঠিন সময়ের সম্মুখীন হতে পারেন বলে সতর্ক করেছেন। ভয়াবহ বন্যায় স্কুল ও আদালতগুলো বন্ধ রয়েছে। আরও বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি নদীতে জরুরি সতর্কতা বহাল রাখা হয়েছে।
এরগোনের মুখপাত্র এমা অলিভেরি বলেন, ১৬ হাজারের বেশি লোক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় অন্ধকারের মধ্যে রয়েছেন। কখন পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারছেন না।
আবহাওয়া ব্যুরো জানায়, টাউন্সভিল থেকে সামান্য উত্তরে ইনগাম শহরে সোমবার সকালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ১০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলেন, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ২০ হাজার বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যেতে পারে। প্যালাজজুক বলেন, ‘২০ বছরের মধ্যে না, ১০০ বছরে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। ’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এর আগে এ ধরনের বন্যা দেখিনি। ’
আবহাওয়া ব্যুরোর মুখপাত্র অ্যাডাম ব্লাজাক বলেন, বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাছাড়া বৃষ্টিপাত কমে আসার পরও বন্যার পানি নেমে যেতে কিছুটা সময় লাগবে।
টাউন্সভিলের বাসিন্দা ক্রিস ব্রুকহাউস জাতীয় সম্প্রচার কেন্দ্র এবিসিকে বলেন, ‘আমি এর আগে কখনো এমন বন্যা দেখিনি। ’
তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ি বন্যার পানিতে এক মিটারেও বেশি তলিয়ে গেছে। তবে এবারের এ বৃষ্টিপাত কুইন্সল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলে খরা কবলিত কৃষকদের স্বস্তি এনে দিয়েছে। অঞ্চলটিতে মারাত্মক খরা চলছিল।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৯
টিএম/আরবি/