বুকিত বিনতাং, কুয়ালালামপুর থেকে: প্রথমার্ধের ১১ মিনিটে মার্সেলোর আত্মঘাতী গোলের সঙ্গে সঙ্গে সুরিয়ানি রেস্তোরাঁর অর্ধেক দর্শক চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠেন। বোঝার আর কিছুই বাকি নেই, এরা আর্জেন্টিনার সাপোর্টার।
মালয়েশিয়ার সবচেয়ে জমজমাট জায়গা বুকিত বিনতাং। এখানে ট্যুরিস্টে ট্যুরিস্টে গায়ে ধাক্কা খায় রাস্তায় হাঁটার সময়। ক্লাব আর রেস্তোরাঁয় হৈ হৈ থাকে সবসময়। বৃহস্পতিবার সকালেই খেলা শুরু হয়েছে বলতে হবে। ব্রাজিল আর ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে। কারণ স্থানীয় সময় রাত ৪ টায় খেলা শুরু হয়ে শেষ হয়েছে পৌনে ৬টা নাগাদ।
খেলার শুরুতে ক্রোয়েশিয়াকে হুমকি মনে হলেও, নেইমার বাহিনী কিন্তু ৯০ মিনিটে একেবারে বধ করলো শুকারের উত্তরসূরীদের।
২৭ মিনিটে হলুদ কার্ড পাওয়ার ঠিক ২ মিনিট পর এক অসাধারণ শটে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান নেইমার। নেইমারের সঙ্গে নেচে ওঠেন ব্রাজিল সমর্থকরাও। এ সমর্থকদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সঙ্গে রয়েছেন মালয়ীরাও। খেলা দেখতে আসাদের মধ্যে রয়েছেন চাইনিজ, ইন্দোনেশিয়ান আর থাইরাও।
খেলা দেখার সময়টায়, জাতির বিভক্তিও কম। সমর্থনই বড় কথা।
মালয়ীরা ফুটবল পাগল। তাদের জাতীয় দলের পারফরমেন্স খুব হতাশাজনক হলেও, ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন দেখে তারা।
গত শুক্রবারে শাহআলম স্টেডিয়ামের আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় গাড়ি পার্কিয়ের জন্যে একটু ফাকাঁ নেই। কারণ স্থানীয় লীগ খেলা চলছে। স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ। বাইরে থেকেই দেখা যায়।
বাংলাদেশে নব্বই দশকে ফুটবলের যে জোয়াড় ছিল, এখানে সেটি রয়েছে। লীগ খেলার দিন, যে দুই প্রদেশের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, অনেক সময় সে প্রদেশের বাসিন্দাদের ছুটি দেওয়া হয়।
তবে মালয়ীরা ফুটবলে পাগল হলেও মাথায় পাগল নয়। বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহুর্তে মালয়েশিয়ায় আসলেও, এখনো একটাও ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার পতাকা চোখে পড়েনি। আর আমাদের দেশে এখন ভিনদেশি আসলেও বুঝতে পারবেন না। এটি দক্ষিণ আমেরিকার কোন দেশ নাকি ইউরোপের কোনো দেশ! না আসলেই বাংলাদেশে এসেছেন!
এরা ফুটবলে পাগল, তবে মাথায় পাগল হয়ে যায়নি। স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবস না হলেও দেশটির বিভিন্ন রেস্তোরাঁ আর দোকান বা বাড়িতে বরং ঝুলছে মালয়েশিয়ার পতাকা। আর আজকে সুরিয়ানি হোটেলে যে কয়জন ব্রাজিলের জার্সি গায়ে দিয়ে এসেছেন তাদের প্রায় সকলেই বাংলাদেশি!
মালয়ী মালিকের পরিচালিত সুরিয়ানির ঠিক বিপরীতেই রয়েছে একটি ভারতীয় রেঁস্তেরা। পানাহারের ব্যাবস্থা থাকায় প্রতি রাতে সেখানেই থাকে বেশি ভীড়। কিন্তু আজ টিভিতে ক্যাবল লাইনের সমস্যা থাকায়, সেখানে ভীড় নেই। বরং সুরিয়ানিতে যেহেতু দুই দিকে মুখ করে দুটি এলইডি টিভি রয়েছে সেখানেই ভীড় বেশি মানুষের।
রেস্তোরাঁয় অর্ডার পুরো লাটে উঠেছে। উঠবেতো অবশ্যই, দোকানি নিজেও খেলা দেখায় ব্যস্ত।
প্রথমার্ধ শেষ হলো ১-১ এ। এখানকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন খুব শক্ত নয় বোঝা যায়। রেঁস্তোরায় বসেই খেলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় ধুমপান। পুরুষদের পাশিপাশি এ ধোঁয়া উৎপাদনে বিশেষ দক্ষ চাইনিজ নারীরাও।
শেষ পর্যন্ত খেলার ফল এসে দাঁড়ালো ব্রাজিলের দেওয়া ৩ গোলের বিপরীতে, ক্রোয়েশিয়ার একটি। খেলার সময় এখানে সবাই আনন্দ করে। একে অপরের সঙ্গে অন্যদেশের দল নিয়ে ঝগড়ার অর্থ পায় না দর্শকরা।
খেলার শেষ মুহুর্তে অস্কারের গোল পরিপূর্ণ তৃপ্ততা এনে দিল ব্রাজিলের সমর্থকদের। বাংলাদেশের যারা খেলা দেখছিলেন, তাদের মধ্যে ফূর্তির মাত্রাটাও একটু বেশি। দেখতে দেখতে দিনের আলো ফুটছে। খেলা শেষ হওয়ার পর মুহুর্তের মধ্যে ফাকাঁ হয়ে গেলো রেঁস্তোরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৪