কুয়ালালামপুর: মালয়েশিয়ায় রমজান রোববার থেকে শুরু। প্রায় ১৪ লক্ষ বাংলাদেশি অবস্থান করছেন এ দেশে।
কথা হয়, রাইট এন্টারপ্রাইজ এর মো. আলামিন পাঠান আবির এর সঙ্গে। প্রায় ছয় বছর ধরে এখানে আছেন তিনি। মোবাইল দোকানের ব্যবসা। বললেন, আমাদের টার্গেট বাংলাদেশি। এখানে যতো দেশি মানুষ আছেন, তাদের চাহিদা মিটিয়ে সময় পাওয়া কঠিন। তবে বাংলাদেশে বাবা – মা এর সঙ্গে ইফতার করা অনেক মিস করেন তিনি। প্রতিদিন কথা হয় তাদের সঙ্গে। মাঝে মাঝে একাধিক বারই।
কোতারায়াতে পুরো রাস্তায় এক বিশাল জামায়াত হয়। এক দারুণ তৃপ্তি পাওয়া যায় সেদিন। কথা বলতে ক্রেতা চলে আসেন দোকানে। ‘ভাই, এ মোবাইলটার দাম কত?’ বললেন, ১৩০ টাকা। অবাক হলাম শুনে। আসলে এখানে বাঙালিরা রিঙ্গিত ব্যবহার করেন না। সবার মুখে টাকা।
দোকানে বেড়াতে এসেছেন মালয়েশিয়ায় অবস্থিত উলুমুল কুরআন ওয়াল হাদিস মাদ্রাসার শিক্ষক মওলানা কামাল হোসেন। তার ইফতারি হয় বেশির ভাগ সময় মালয়ীদের সঙ্গেই।
জানতে পারলাম, মালয়ীরা ইফতারি এর দিক থেকে আমাদের মত এত সৌখিন নয়। তাদের ইফতারি হয় ভাত, মাংস, মাছ, ফল-মূল দিয়ে। তিনি যখন ছোলা মুড়ি দিয়ে ইফতার করেন তখন সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। একটি, দুটো করে মুড়ি মুখে নিয়ে চেখে দেখে। খাবার দিক থেকে আমরা অনেক এগিয়ে। তবে মালয়ীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইফতার খাবার হল “কুয়ে” – বাংলায় পিঠা। প্রায় শত রকমের কুয়ে মালয়ীরা তৈরি করেন। বছরের প্রতিটি দিন তারা যেকোন পানীয় এর সঙ্গে বরফ ব্যবহার করেন। তাই, আমাদের মত কোন শরবত এর প্রচলনও কম।
কথা হল বাংলাদেশি কিছু ভাই যারা একটি রেমিটেন্স কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছেন। কুমিল্লা জেলার আব্দুল হান্নান, নরসিংদি জেলার বশির, শরিয়তপুর এর মো. জাহাঙ্গির বললেন, মালয়েশিয়ায় সাধারণ দিন আর রমজান এর মধ্যে পার্থক্য নেই। ‘আজ ছুটির দিন থাকা সত্ত্বেও কাজ করছি আমরা। ’
তারা আরো বলেন, ভাই, সবচেয়ে বড় কষ্ট, বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রীকে ছাড়া এখানে রমজান পালন করছি। যদি বাংলাদেশে এখান থেকে ৫০০০ টাকা কম দিয়েও কেউ চাকরি দিত তাও রাজি থাকতাম। কর্মসংস্থান এর অভাব আমাদের এখানে আসতে বাধ্য করেছে। বন্দি জীবন কাটে আমাদের। সাত দিনই কাজ।
নাহলে বাড়িতে টাকা পাঠানো সম্ভব না। মাঝে মাঝে টাকা পাঠানোর পর নিজের কাছে খুব অল্প পরিমাণ টাকা থাকে। তাই, ছুটির দিনও কাজ করি।
মো. আলিম শেখ এখানে থেকে অনেক খুশি। বললেন, ভাই, আমি অনেক ভাল আছি। আমার মত লেখাপড়া না জানা একটা লোক ২০০০ রিঙ্গিত আয় করি।
বাংলাদেশে থাকলে সেটা কখনই সম্ভব হত না। দেশের জন্য কিছু করতে চাই। ফ্যামিলির উন্নয়ন করতে চাই, আর ফ্যামিলির উন্নয়ন মানেই তো দেশের উন্নয়ন।
দিন ফুরিয়ে এলো। সবাই চলে গেলেন তাদের দিনের বেতন নিতে। মুখে সবার হাসি।
বাংলাদেশের মত সব ইফতার আইটেমই আছে। জিলাপি কেজি প্রতি ১০ রিঙ্গিত, বুন্দিয়া ১২ রিঙ্গিত, ছোলা ১২ রিঙ্গিত, পিয়াজু প্রতিটা এক রিঙ্গিত। এছাড়া রকমারি মিষ্টিতে ভরপুর। শত কষ্ট থাকা সত্ত্বেও সবার মুখে আনন্দ ভরা আমেজ। রমজান যেন এই সুখ বার্তাই নিয়ে এসেছে।
মালেয়েসিয়ায় প্রবাসি বাংলাদেশিরা লিখতে পারেন. [email protected] এ ঠিকানায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৪