ঢাকা: ফেরারি তামিমকে খুঁজছে মালয়েশিয়া পুলিশ। বহু কাজের কাজি এই বাংলাদেশি ভিসার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত তো করেছেনই, অনেক ব্যবসায়ীকে প্রতারিত করেও হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিরা কুয়ালালামপুর পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালে মামলা করা হয় তামিমের বিরুদ্ধে। আর মামলা দায়েরের পর থেকেই পতালক রয়েছেন এই প্রতারক।
ঢাকার কাওরানবাজারের ক্যাফে কুকারসের মালিক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনের অভিযোগ, বিজনেস রেসিডেন্স ভিসা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে তার ৮ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তামিম।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, ক্যাফে কুকারস প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯২ সালে। তামিমের মা চৈতী একসময় ক্যাফে কুকারসে চাকরি করতেন। এ সুবাধে তামিম তাকে মামা সম্বোধন করতেন।
ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার কারণে কামাল উদ্দিন বছরে কয়েকবার মালয়েশিয়ায় বেড়াতে যেতেন। সেখানকার আবহাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি বোধ করেন তিনি। এই প্রেক্ষিতে সেখানে কিছু ব্যবসা শুরুরও কথা ভাবেন তিনি।
তামিম তাকে একটি কোম্পানি খুলে বিজনেস রেসিডেন্স ভিসা পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখান। ভাগ্নে পরিচয়ের তামিম জানান, মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন অফিস এবং প্রশাসনের সঙ্গে ভাল পরিচয় থাকায় এসব কোনো সমস্যাই না। একটি স্টুডেন্ট কনসালট্যান্সি ফার্ম খুলে বাংলাদেশে কামালউদ্দিনকে এবং অস্ট্রেলিয়াতে আরেক বন্ধুকে অংশীদার করা হবে বলে জানান তিনি।
ওই মাসেই ট্যুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়া যান কামাল উদ্দিন। সেখানে তামিম এবং তার মায়ের বাসাতেই থাকতেন তিনি। কোম্পানি খোলা ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্যে ১২০০০ (প্রায় ৩০ হাজার টাকা) রিঙ্গিতের বেশি লাগবে না বলে তাকে জানিয়েছিলেন তামিম।
মালয়েশিয়া যাওয়ার ২ দিনের মাথাতেই জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে কামালউদ্দিনের কাছ থেকে ২ হাজার রিঙ্গিত চেয়ে নেয় তামিম। এরপর আনুষঙ্গিক খরচের কথা বলে, এক সপ্তাহ পরে আবারো ৬ হাজার রিঙ্গিত নেয় তামিম।
সপ্তাহ না ঘুরতেই অফিস স্পেস বরাদ্দের কথা বলে তামিম নেন ২ হাজার রিঙ্গিত। বুকিত বিনতাংয়ে একটি অফিসও দেখানো হয় কামালউদ্দিনকে। পরে তিনি জানতে পারেন এসব কিছুই ভুয়া।
তামিমের সঙ্গে কিছুদিন চলাচলের অভিজ্ঞতা থেকে কামাল বলেন, এক রাতে তিনি পেনাং থেকে ব্যাগ ভর্তি করে ২০০ পাসপোর্ট নিয়ে আসেন শ্রমিকদের। পরে জানতে পারি, শ্রমিকদের পাসপোর্ট নিয়েও প্রতারণা করেন তামিম।
তামিমের মায়ের ভিসার মেয়াদ শেষ হলে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এরপরই হঠাৎ একদিনের মধ্যে বাসা পরিবর্তন করে বুকিত বিনতাংয়ে কামালউদ্দিনকে নিয়ে একটি হোটেলে উঠেন তিনি। এর মধ্যে মালয়েশিয়ান এক প্রতারকের সঙ্গে কোম্পানি খোলা হবে, এ ধরনের কিছু কাগজপত্র দেখিয়ে আরো খরচ নেন কামাল উদ্দিনের কাছ থেকে। হোটেলে থাকার কয়েক হাজার রিঙ্গিত খরচও নিয়ে নেন তার কাছ থেকে।
কামাল বলেন, আমার হাতে একটি ফাইল ধরিয়ে দিয়ে বলেন, আপাতত দেশে চলে যান। শেষ দিনেও আমার কাছ থেকে দেড় হাজার রিঙ্গিত চেয়ে নেন তামিম।
দেশে আসার পর ফোন দিয়েও আর পাওয়া যায় না তামিমকে। পরে খোঁজ খবর নিয়ে কামাল জানতে পারেন, বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে কয়েক লক্ষ রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছেন তামিম। বর্তমানে মালয়েশিয়া পুলিশ তাকে খুঁজছে।
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মিনহাজুর রহমান বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন, তামিম তার কাছ থেকেও প্রতারণার মাধ্যমে ৫ হাজার রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন শ্রমিকের কাছ থেকে ভিসা ও পাসপোর্ট নবায়ন করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরো কয়েক লক্ষ রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক তামিম।
প্রবাসীদের অভিযোগ, তামিম কখনো স্টুডেন্ট কনসালট্যান্ট, কখনো শিল্পী, কখনো হোটেল ব্যবসায়ী পরিচয়ে মানুষের কাছে পৌছেন এবং প্রতারণা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৫