কুয়ালালামপুর: একুশে ফেব্রুয়ারি। বাড়ির একটি দুঃসংবাদ শুনে সিদ্ধান্ত নিলাম বাংলাদেশ যাব।
খুব কম সময়ের মধ্যে যাব বলে পরিচিত সকল এজেন্টকে কল দিলাম। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স, রিজেন্ট আর মালিন্দোর কোন টিকিট নেই। কিছু থাকলেও তা আমার সাধ্যের বাইরে। একদিন আগে টিকিট বুকিং দিতে চাইলে এই সমস্যাগুলোতে পড়তেই হয়।
কিছু বাজে অভিজ্ঞতার জন্যেই বাংলাদেশ বিমানকে তালিকার বাইরে রেখেছিলাম। মালয়েশিয়ান এয়ারের দুর্ঘটনা এবং মালিন্দোর সময়ক্ষেপণের ভয়াবহতা লক্ষ্য করেই এক রকম ঝোঁকের মাথায় বিমানে টিকিট কিনলাম।
এখানে বসবাসরত এক ছোট ভাই বললো, "ভাই, কয়েক দিন আগে একটা বিমানের ইঞ্জিন নষ্ট হইসে, ঢাকায় জরুরি অবতরণ করসে"।
বুকের ধুকধুকানিটা ধরে রেখে উল্টো রসিকতা করে বললাম, আরে মালয়েশিয়ান এয়ারের প্লেন যে কোথায় ল্যান্ড করবে সেটারই কোন খবর নাই। বিমান তো তাও বিমানবন্দরেই নামে। আর মরলে নিজের দেশের বিমানেই মরি। একটা সন্মাননাও পাইতে পারি। "
বিমানের ফ্লাইট রাত চারটায়। বেশ আগেই পৌঁছে গেলাম। মনের মাঝে আগে থেকেই একটি নেগেটিভ ধারণা নিয়ে রেখেছি। মানে বাংলাদেশ বিমান, সব কিছু সুন্দর মত হবে, এটা কাম্য নয়। তাই যে কোন ত্যাগ স্বীকারের জন্য মনস্থির করেছিলাম।
লাউঞ্জে বসে কানে হেডফোন লাগাব, এই সময় শুনি একজন জোরে জোরে বলছেন, বিমান এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছে কেন? নিশ্চিত কোন ঝামেলা আছে। এরপর তিনি তার যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ইতিহাস এবং বাংলাদেশ বিমানের হাজার বদনাম উচ্চ স্বরে বলতে থাকলেন। নিজেদের বদনাম করার স্বভাবটা আমাদের মোটেই গেল না।
ঠিক ঠাক তিনটা পঞ্চাশে প্লেনে উঠলাম। বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ই-আর। ঝকঝক করছে বসার চেয়ারগুলো। ক্রুদের আচরণেও বেশ পরিবর্তন দেখলাম। আগে এক সময় তারা যাত্রীদের ধমক দিয়ে কথা বলতেন। এবার আমূল পরিবর্তন।
আসনে বসতেই সামনের আয়তকার স্ক্রিনে বিনোদনের চমৎকার ব্যবস্থা। বাংলাদেশি ছায়াছবি, নাটক, বাংলা গানের কালেকশন রাখা হয়েছে। সবচেয়ে যেটা ভাল লাগল তা হল- ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাতেই নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি, হিন্দি ছবি এবং গানের ভাণ্ডারও রয়েছে।
নাম না জানা একজন বিমানবালার ব্যবহার নজর কাড়লো। জেলখানা থেকে মুক্তি পাওয়া এক বাংলাদেশি ভাই প্লেনে উঠার পর থেকেই ক্ষুধায় কাতরাচ্ছিলেন। যাত্রা শুরুর আগেই তিনি দৌড়ে গিয়ে তার জন্য খাবার এনে দেন। সাথে ঔষধও দিলেন এবং বললেন, " এটা খাবার খেয়ে খাবেন"। আজকের দিনে নিজের প্রাপ্য জিনিসও ঠিক মত পাওয়া যায় না। তাই তিনি যা করলেন তার জন্য ধন্যবাদ।
খাবার পরিবেশনাতেও বেশ মুগ্ধ হলাম। বেশ হাসিমুখে খাবার দেওয়া হচ্ছে। খাবারের মানও বেশ ভাল।
শার্টের ওপরে নাম দেখে টুকে নিলাম। বিমান ক্রুদের মাঝে ওয়াসিক এবং তৌহিদ চা-কফি পরিবেশন করছিলেন। সবাইকে জিজ্ঞেস করছিলেন, পানি লাগবে কি না?
নির্ধারিত সময়ের আগেই প্লেনটি ঢাকায় অবতরণ করল। যে ব্যক্তিটি লাউঞ্জে বসে বড় বড় কথা বলছিলেন তাকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। কিছু বলার অভিপ্রায়টা পূরণ হল না।
প্লেন থেকে বের হবার সময় ধন্যবাদ দিলাম সবাইকে। এই প্রথম দেশে ফেরার পর যাকেই দেখেছি তার কাছেই বাংলাদেশ বিমানের সুনাম করেছি। আর করব নাইবা কেন?
সব দিক থেকে সন্তুষ্ট থাকলেও, অনলাইন টিকেট ক্রয়ে বিমান খুশি করতে পারেনি। একটি চমৎকার ওয়েব সিস্টেম করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ক্রেডিট কার্ডে ক্রয়ের সময়ে বাড়তি চার্জটা অপ্রকাশিত ছিল। এ বিষয়ে বিমান কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
যাই হোক না কেন, বিমান পরিচালনায় এই অস্বাভাবিক পরিবর্তনের জন্য বিমানকে ধন্যবাদ। আশা করব তাদের এ উন্নতির ধারা সবসময়ই বজায় থাকবে। আর আমরাও আকাশে শান্তির নীড়ে করে বিদেশ ঘুরব।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৩ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৫