মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাঙালি শিশুদের মাতৃভাষা বাংলা শেখাতে গড়ে উঠেছে বাংলা ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রেড অ্যান্ড গ্রিন একাডেমি।
কুয়ালালামপুরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতিনীতি বিষয়েও শিক্ষা দেওয়া হয়।
বর্ণ শেখা, যুক্তাক্ষর, শব্দগঠন, বাংলা পড়তে, লিখতে ও বলতে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও সাধারণজ্ঞান শিক্ষাও দেওয়া হয় রেড অ্যান্ড গ্রিন একাডেমিতে। এছাড়া আরবিও শেখানো হয় এ প্রতিষ্ঠানে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে চলে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম।
রেড অ্যান্ড গ্রিন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক সারা তানভী বলেন, স্বাধীনতা দিবস, শহীদ দিবস, পহেলা বৈশাখসহ জাতীয় দিবস ও বাঙালি সংস্কৃতি পালনের মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশের সংস্কৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আর আমরা চাই আমাদের সন্তানরা বাংলায় কথা বলতে শিখুক।
প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাংলানিউজের কাছে তুলে ধরেন সারা তানভী। তিনি জানান, ২০১৪ সালে ১৮ অক্টোবর এ প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তৎকালীন হাইকমিশনার এ কে এম আতিকুর রহমান।
২০১০ সালে সপরিবারে মালয়েশিয়ায় যান সারা তানভী। মালয়েশিয়া গিয়ে তিনি দেখেন মালয়েশিয়ায় বাংলা ভাষা শেখার কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।
এখানে ছেলে মেয়েরা যদি বিদেশি ভাষা শেখে তাহলে তারা ওই ভাষার প্রতি মনোনিবেশ করবে। এতে তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ভুলে যাবে। দেশের প্রতি তাদের কোনো মমত্বও থাকবেনা বলে মনে করেন সারা।
সারা বলেন, যে দেশের মানুষ মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, সে দেশের সন্তানরা নিজের ভাষা না জেনে অন্য ভাষায় কথা বলবে এটা হতে পারে না। এই ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সারা বিশ্ব প্রতি বছর পালন করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তাই আমি সাহস করে নিজের অর্থ খরচ করে গড়ে তুলেছি প্রতিষ্ঠানটি।
সারা তানভীর মেয়ে ও স্বামী ওসমান গনি চৌধুরী বিনা পারিশ্রমিকে সময় দেন প্রতিষ্ঠানে।
সারা বলেন, মালয়েশিয়ার স্থানীয় একটা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে আমরা এই প্রতিষ্ঠানটি চালু করি। নার্সারি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত এখানে পাঠদান করা হয়।
সারা প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের খোঁজে ছুটে বেড়িয়েছেন মালয়েশিয়ার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। তার কর্মপরিধি ছড়িয়ে পড়েছে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটি থেকে শুরু করে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের মধ্যে।
বাংলা ভাষা শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিশেষ করে বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করে যাচ্ছেন সারা। কোথাও বাংলাদেশি সামাজিক কোনো আচার অনুষ্ঠান থাকলে আগ্রহী হয়ে ছুটে যান সেখানে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন সারার বাবা। তার মাও যুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হয়ে গর্ববোধ করেন তিনি।
সারা বলেন, মালয়েশিয়ায় আমি প্রবাসীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব। তার জন্য আমার কোনো সুবিধার প্রয়োজন নেই। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করলেই হবে না। তার পাশাপাশি দেশীয় সংস্কৃতিকেও ধারণ করতে হবে। সব কিছু বিবেচনা করে আমরা সপ্তাহে দুইদিন শিশুদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছি।
সারা বলেন, বিদেশে বাস করে এবং সে দেশের সংস্কৃতির মাঝে বড় হয়ে নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা করা বেশ কঠিন। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ছোটবেলায় শিশুরা মা-বাবার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহে তা ধরে রাখলেও যত বড় হয়, নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চা প্রায় ভুলেই যায়। তখন তাদের ওপর ভর করে ওই দেশের সংস্কৃতি।
ব্যক্তিগত জীবনে সারা তানভী এক কন্যা এবং এক পুত্র সন্তানের জননী। তিনি একজন সফল মা, একজন সফল স্ত্রী এবং চিরায়ত বাঙালি রীতি অনুযায়ী একজন সফল গৃহিণী।
এসব সামাজিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে তার স্বামীর সহযোগিতাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সারা তানভী। এক্ষেত্রে তিনি নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করেন। তার সব কাজেই স্বামী ওসমান গনি চৌধুরী উৎসাহ যুগিয়েছেন ও সহযোগিতা করেছেন বন্ধুর মতো।
মালয়েশিয়া প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে সারা তানভী বলেন, অভিভাবকদেরই আগে উদ্যোগী হতে হবে। ঘরে নিজেদের সন্তানদের সঙ্গে বাংলায় কথা বলার চর্চা রাখতে হবে। মালয়েশিয়ায় প্রতিষ্ঠানটি আমাদের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। এটা তখনই সফল হবে যখন মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা নিজ ইচ্ছায় তাদের সন্তানদের মাতৃভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাবেন।
সারার বাড়ি ঢাকায়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করেছেন। স্বামীর ওসমান গনি চোধুরী বাড়ি চট্রগ্রাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৫
এমএন/এসএন/আরআই