ঢাকা: সেকেন্ড হোম প্রক্রিয়াকরণের নামে হুন্ডির মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি টাকা মালয়েশিয়ার পাচার হচ্ছে। আর এই পাচারের মূল হোতা বলে চিহ্নিত ডা. শঙ্কর চন্দ্র পোদ্দার নামে সেখানে প্রবাসি এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী।
নিয়ম অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের সুবিধা গ্রহনকারীদের নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের বেশি বৈধভাবে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কিন্তু এতে কোনও সমস্য নেই, আছেন পোদ্দার। অভিযোগ আছে হুন্ডির মাধ্যমেই বিপুল পরিমান অর্থ মালয়েশিয়ায় ঢোকানোর সব ব্যবস্থা পাকা করে দিচ্ছেন তিনি।
বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী আর নেতারা তার মাধ্যমেই সেকেন্ড হোম সুবিধা গ্রহন করছেন বলে প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন এই পোদ্দার।
দীর্ঘ সময় ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থানকারী শঙ্কর চন্দ্র পোদ্দার এখন সবচেয়ে বড় সেকেন্ড হোম ব্যবসায়ী বলেই পরিচিত। খুঁটির জোরও তার পাকা। অভিযোগ আছে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মণির সঙ্গে ঘনিষ্টতার সুবাদেই মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রান্ট ব্যাবসায়ী হিসেবে নিজেকে সামনের সারিতে নিয়ে আসেন পোদ্দার।
এসময়ই দিপু মণির বন্ধু হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন তিনি। আর এই পরিচিতি নিয়ে, সেকেন্ড হোমের ব্যবসা রমরমা করে তোলেন।
তথ্য ঘেঁটে জানা যায়, ২০০৭ সাল থেকে রমরমা হয়ে ওঠে পোদ্দারের বাংলাদেশ থেকে মানব পাচার ব্যবসা।
চাউর আছে, কুয়ালালামপুরের বিভিন্ন অভিজাত রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন পোদ্দার। ক্লায়েন্টদের টাকা দেশ থেকে মালয়েশিয়ায় নেওয়ার পরিকল্পনা সাজান। মালয়েশিয়ায় প্রফেশনালদের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের নামে মূলত ক্লায়েন্ট সংগ্রহের কাজটি করেন তিনি।
২০১৪ সালের অক্টোবরের ১ তারিখ সন্ধ্যায় টাইম স্কয়ারের স্টারবাকসে বাংলাদেশের একজন গ্রাহকের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা যায় পোদ্দারকে। শুভ্রা নামে ওই গ্রাহককে হুন্ডির মাধ্যমে কালো টাকা মালয়েশিয়ায় আনার ব্যাবস্থা করে দেন পোদ্দার। বর্তমানে শুভ্রা মালয়েশিয়াতেই বসবাস করছেন। সম্প্রতি কেলাব আমানের একটি কমিউনিটি বৈঠকে পোদ্দার ও শুভ্রাকে এক সঙ্গে দেখা যায়।
তবে সেকেন্ড হোম ব্যবসার কথা বলে, ঠকবাজি আর জালিয়াতিরও অভিযোগ রয়েছে এই পোদ্দারের। বুকিত বিনতাংয়ের একজন ব্যাবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, সেকেন্ড হোমের কথা বলে তার ১৫ হাজার রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছেন পোদ্দার। প্রথম দিকে অর্থ ফেরত পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে পরে ঝামেলা এড়াতে ওই ব্যবসায়ী নিজেকে গুটিয়ে নেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ঢাকার বনানীতে গার্ডিয়ান নেটওয়ার্ক নামে একটি কনসালটেন্ট ফার্মের মাধ্যমে সেকেন্ড হোমের নামে জমজমাট হুন্ডি ব্যবসা ফেঁদেছেন এই ডাঃ পোদ্দার। এখানে নারী কর্মী নিয়োগ দিয়ে তাদের মাধ্যমেই সেকেন্ড হোম ক্লায়েন্টদের যোগাড় করছেন তিনি।
আর মালয়েশিয়ার পেতালিং জায়াতে গার্ডিয়ান নেটওয়ার্কের যে অফিসের কথা তিনি প্রচার করছেন তার কোনও অস্তিত্বই নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে সম্প্রতি ডা. শঙ্কর চন্দ্র পোদ্দারের নতুন এক চালের কথা বেশ শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক নেওয়ার নতুন ধান্দা শুরু করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের একজন বিনিয়োগকারীকে হাসপাতাল গড়ারও প্ররোচনা দিচ্ছেন তিনি।
চিকিৎসক হিসেবে মালয়েশিয়ায় প্রথম দিকে এই খাতেই ব্যবসা ফাঁদেন ডাঃ পোদ্দার। হেলথ ট্যুরিজম নামে ব্যবসা শুরু করে দেশ থেকে মালয়েশিয়ায় রোগী নেওয়ার ব্যবসা ছিলো তার। সেখানে ধরা পড়ে তার বড় ধরনের প্রতারণা। একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ঢাকার এক রোগীকে ৬ মাস হাসপাতালে রেখে ২০ লাখ টাকা কমিশন হাতিয়ে নেন এই পোদ্দার। পরে ওই ঘটনা জানাজানি হলে এমএইচটিসি থেকে সোল এজেন্ট হিসেবে পোদ্দারকে প্রত্যাহার করা হয়।
কুয়ালালামপুরে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অভিযোগ, মালয়েশিয়াতে সদ্য নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনারের নাম এরই মধ্যে ভাঙ্গিয়ে ফায়দা লোটার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ডাঃ পোদ্দার। প্রচার করছেন হাই কমিশনারের সঙ্গে তার ঘনিষ্টতার কথা।
বাংলাদেশ সময় ১০৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৫
এমএমকে