কুয়ালালামপুর থেকে ফিরে: নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্যে ভিসা নবায়ন করতে কুয়ালালামপুরের টিএমসি কলেজে পাসপোর্ট জমা দিয়েছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কয়েক মাস হয়ে গেলেও পাসপোর্ট ফেরৎ দিচ্ছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ।
টিএমসি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ হুমকি দিয়ে বলছে, পাসপোর্টগুলোর নামে পুলিশি মামলা রয়েছে। সহজে ছাড় হবে না। তবে এক থেকে ২ হাজার রিঙ্গিত ঘুষের বিনিময়ে মিলছে পাসপোর্ট।
রাজবাড়ির শিক্ষার্থী তুষার আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় ৪ মাস হয়েছে, তিনি ভিসা নবায়নের জন্যে পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। তবে এখন বলা হচ্ছে, তার পাসপোর্টের নামে পুলিশি মামলা রয়েছে। দেয়া যাবে না।
তুষার বলেন, আমি যতদিন পাসপোর্ট বহন করেছি। এমন কিছুই ঘটেনি যে পুলিশি মামলা হবে। কখনো পুলিশ চেকও করেনি। বাট এখন কলেজ কর্তৃপক্ষ এটা বলছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, প্রায় সব বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর পাসপোর্টই জিম্মি করে রেখেছে কলেজটির বিদেশি শিক্ষার্থী শাখা। সেখানে ঘুষ না দিলে বের হয় না পাসপোর্ট।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এখানে দৈনিক ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করি।
নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ বাদ দিয়ে এক হাজার রিঙ্গিত জমাতে দুই থেকে তিন মাস লেগে যায়। অথচ ঘুষ না দিলে পাসপোর্ট দিচ্ছে না এখন। এসবের পেছনে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করা বাংলাদেশি এজেন্টরা জড়িত বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা।
মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থীর নামে মানব পাচারের অন্যতম প্রতিষ্ঠান এই টিএমসি কলেজ।
আবার অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরাও প্রতারিত হয়ে কলেজটিতে ভর্তি হয়ে বিপাকে রয়েছে।
কুয়ালালামপুরের এ কলেজটির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের পাসপোর্ট জিম্মি রাখার অভিযোগ পুরনো। ভিভা শপিং মলের পাশ ঘেঁষে ৮৫ জালান লোক ভিউতে মেনারা উনচাং এমাস (ইউই৩) বিল্ডিং এর মাঝে জায়গা পেয়েছে কলেজটির ক্যাম্পাস।
টিএমসি কলেজে প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলাদেশী। প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ থেকে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী প্রতারিত হয়ে এখানে নতুন করে যোগ দিচ্ছেন। আবার অনেকেই শিক্ষার্থী সাইনবোর্ড ব্যবহার করে কাজ করতে যাচ্ছেন মালয়েশিয়াতে।
কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে ক্লাস হয় নামকাওয়াস্তে।
মোটামুটি সবাইকেই কাজের তাগিদেই এখানে আনা হয়। শিক্ষার্থীদের আয়ের টাকায় চলে কলেজটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ছাত্র বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের মালয়েশিয়া প্রবেশের পরপরই পাসপোর্ট আটকিয়ে রাখে।
অনেকের সে পাসপোর্ট পেতে চার মাস আবার কারও কারও ৬মাসও লেগে যায়।
সেমিস্টার ফি পরিশোধ করলে আবার ভিসা দেয়া হয়। এরপর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আবার পাসপোর্ট জমা দিতে হয় শিক্ষার্থীকে। এরপর আবারো চার থেকে ছয় মাস পাসপোর্ট ছাড়া ঘুরতে হয় শিক্ষার্থীদের। আর পরের সেমিস্টারের অর্থ জোগাতে করতে হচ্ছে কাজ।
বাংলাদেশকে মূল টার্গেট করে ঢাকাতে আঞ্চলিক অফিস স্থাপন করেছে টিএমসি কলেজ। এখানকার অ্যাডভাইজার অ্যান্ড হেড অব মার্কেটিং সোহেল মাসুদ বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। এর আগে তিনি নিজের দায়িত্ব সর্ম্পকে বাংলানিউজকে বলেছিলেন, ঢাকা থেকে আমরা কিছু কাগজ অ্যাপ্রোভালের জন্য পাঠাই। আমাদের বেশ কয়েকটি এজেন্ট রয়েছে। তারা শিক্ষার্থী জোগাড় করেন।
মাসুদ বলেন, কলেজটিতে লেকচারার হিসেবে একসময় কাজ করতেন। বর্তমানে প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করেন।
অভিযোগ রয়েছে যেসব শিক্ষার্থী পার্টটাইম চাকুরি করতে যেয়ে পুলিশের হাতে বন্দী হন, তাদের ছাত্র হিসেবে প্রমাণের ব্যাপারেও গড়িমসি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি বাংলাদেশের এক শিক্ষার্থী সানওয়ে পিরামিড শপিং মলের একটি কম্পিউটার দোকানে কাজ করা অবস্থায় আটক হন। ঐ শিক্ষার্থীকে নিজেদের ছাত্র বলে প্রমাণ দিতে বিলম্ব করছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশকে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়েই মুক্তি মিলে শিক্ষার্থীর।
বাংলাদেশ সময় ১৬৪৩ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৫
এমএন/এনএস