কুয়ালালামপুর থেকে ফিরে: স্টুডেন্ট ভিসায় কাজ করতে যাওয়া বাংলাদেশিদের চাপে গোডাউন হয়ে উঠেছে কুয়ালালামপুরের এস.এ.ই ইনস্টিটিউট। জাল সনদপত্র তৈরি করে বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠাচ্ছেন দালালেরা।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর হার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, অনেকেই এখন এ প্রতিষ্ঠানটিকে গোডাউন বলে উল্লেখ করেন।
কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশি মহলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিনই বাংলাদেশ থেকে গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী এ ইনস্টিটিউটের অধীনে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন। সত্যিকারের শিক্ষার্থী ছাড়াও রয়েছেন শ্রমিক।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সেলানগরের সুবাংজায়াতে জালান পার্সিয়ারান সুবাংয়ে লট ৮৩৮ নং ভবনের একটি কর্নারে গড়ে উঠেছে এই অসৎ প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে দুটি অফিস কক্ষ এবং কবুতরের খোয়ারের মতো ৪টি ক্লাস রুম নিয়ে গড়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত ‘ডিপ্লোমা ইন মিডিয়া টেকনোলজি’ নামে একটি কোর্সের ওপর ভর দিয়েই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। এই কোর্সে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। অনার্সে বিষয় রয়েছে ৩টি।
তবে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা জানান, সেসব বিষয়ে শিক্ষার্থীও নেই, ব্যবসাও নেই।
সুবাং জায়াতে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর মোড়কে আসা অধিকাংশই নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন কনস্ট্রাকসনে কাজ করেন। আর তাই ঢাকার এজেন্টরাও শ্রমিক এবং শিক্ষার্থী দুই ধরনের মানুষই পাঠান এখানে।
একজন শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, এখানে যতো শিক্ষার্থী আনা হয়েছে, তারা নিয়মিত ক্লাস করলে, এখানে দাঁড়িয়েও জায়গা হবে না।
এস.এ.ই’তে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী তুহিন মজুমদার গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। নিজের দূর সর্ম্পকের আত্মীয়ের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন তিনি। এরপর এখানে আসার পর আর সেই আত্মীয়ের খোঁজ নেই।
তিনি বলেন, আমি মিডিয়া নিয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখানে এসে দেখি সহপাঠীদের বেশিরভাগই মূলত শ্রমিক। আবার আমার মতো হতভাগ্যও রয়েছেন কয়েকজন।
বাংলাদেশি ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলংকার মানুষ আসে এ ইনস্টিটিউটের অধীনে। এখানে পুরোটাই মানব পাচারের ব্যবসা হচ্ছে।
ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া আরো কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকায় কনসালটেন্সি ফার্মগুলো এ প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী প্রতি বড় অংকের কমিশন পায়। তাই ভুল ব্যাখা দিয়ে শিক্ষার্থীদের এখানে পাঠায়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে যে ভবন দেখানো হয়েছে, সেটি কর্তৃপক্ষের পুরো নয়। কিন্তু ঢাকায় দালালেরা সেই ভবনের পুরোটাই ইনস্টিটিউট বলে প্রতারণা করে।
ঢাকার লালমাটিয়ায় অবস্থিত ইউনিভার্স এডুকেশন অ্যান্ড বিজনেস কনসালট্যান্ট নামের প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থী পাঠানে এস.এ.ই ইনস্টিটিউটে। শনিবার সকালে ফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, এখন এস.এ.ই ইনস্টিটিউট এবং এডামস কলেজে শিক্ষার্থী পাঠানো হয় বেশি। এ ক্ষেত্রে আড়াই লাখ টাকা খরচে শিক্ষার্থীকে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
তবে এস.এ.ই ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো সর্ম্পকে জানতে হলে অফিসে সরাসরি যোগাযোগের জন্য বলেন তিনি।
এই নিম্নমানের ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আনার জন্যে প্রায় অর্ধশত কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান রয়েছেন ঢাকায়। তাদের আবার এজেন্ট রয়েছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত আকর্ষনীয় বিজ্ঞাপন দেয় এসব কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান। আর এসব বিজ্ঞাপনে প্ররোচিত হয়ে ফাঁদে পা দেন শিক্ষার্থীরা।
ইনস্টিটিউটের একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রাকিব বাংলানিউজকে বলেন, পরিবারের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ করে এখানে এসেছি। দালালেরা বলেছিলেন, এদেশে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরি করা যাবে। এখানে এসে দেখি সব ভুল। এ প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা হয় না। আবার পার্টটাইম চাকরি করতে গেলেও রয়েছে পুলিশের ভয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৫
এমএন/এনএস/
** আটকে রেখেছে শিক্ষার্থীদের পাসপোর্ট
** মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থী প্রতারণা : নতুন ফাঁদ এডাম কলেজ