মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়া উপকূলে আটক বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীদের শিগগির ফেরত পাঠাতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস। ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পাশাপাশি ওই অভিবাসীদের থাকা-খাওয়ায় যেন কষ্ট না হয় সে বিষয়টিও দেখভাল করছেন দূতাবাস সংশ্লিষ্টরা।
গত ১১ মে মালয়েশিয়ার লংকাবি দ্বীপের উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয় হাজারোধিক অভিবাসী। এদের মধ্যে ৫০৬ জনই বাংলাদেশি বলে জানতে পারে দূতাবাস। বিষয়টি জানার পরপরই লংকাবি ছুটে যান বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার কনস্যুলার সাইদুল ইসলাম মুকুল।
সেখান গিয়ে উদ্ধার বাংলাদেশিদের খোঁজখবর নেন তিনি। এরপর লংকাবির ডেপুটি চিফ অব পুলিশ জামিল আহমেদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠকে দরিদ্র-অসহায় অভিবাসীদের ওপর যেন কোনো নির্যাতন না করা হয় সে ব্যাপারে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেন মুকুল। পরে তিনি কুয়ালা সুং গাই কম পুংয়ের অভিবাসন বিভাগের প্রধানের সঙ্গে আবারও অভিবাসীদের রাখার স্থান পরিদর্শন করে বাংলাদেশিদের খোঁজখবর নেন।
লংকাবি পরিদর্শন ও বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন সাইফুল ইসলাম মুকুল। তিনি বলেন, আটক বাংলাদেশিদের বেশিরভাগেরই বাড়ি নারায়ণগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরা জেলায়। এখন তাদের লংকাবি ইন্টার ন্যাশনাল শুটিং কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে তাদের কেদাহ প্রদেশের বান্টিং ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে।
হাইকমিশনের লেবার কনস্যুলার মুকুল বলেন, আমরা মালয়েশিয়া সরকারকে একটি চিঠি দিয়েছি। খুব শিগগির স্থানীয় সরকার বাংলাদেশিদের দেশে পাঠানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারে। আমরা সর্বোচ্চ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।
মানবপাচার রোধে সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অপরাধ একা কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির পক্ষে প্রতিকার সম্ভব নয়। কয়েকদিনের মধ্যে বাংলাদেশি ও মায়ানমারের হাজারো অভিবাসী আটক হওয়ায় সংবাদমাধ্যমে লেখালেখির কারণে মালয়েশিয়া সরকার এ বিষয়ে কড়া অবস্থানে চলে গেছে। তারা সমুদ্রেও নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এ কারণে দালালরা নিয়ে আসা অভিবাসীদের লংকাবি দ্বীপের জঙ্গলে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে। ফলে অনাহারে-অনিদ্রায় অনেকের মারা যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আটক বাংলাদেশিদের ব্যাপারে সরকারও অবগত জানিয়ে মুকুল বলেন, আমরা সরকারকে অভিহিত করেছি। শুনেছি নৌবাহিনীর একটি জাহাজ ২২ বা ২৩ মে মালয়েশিয়ায় পৌঁছাতে পারে। এ বিষয়ে ওই দিন বৈঠক হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আবার আমরা লংকাবি যাবো। আটক প্রত্যেক বাংলাদেশির নাম-পরিচয় সংগ্রহ করবো। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সহযোগিতায় শিগগির বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠাতে পারবো বলে আশা করছি।
সাইদুল ইসলাম মুকুল বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার অনেক বড়। বাংলাদেশ সরকার ও মালয়েশিয়া সরকারের মধ্যে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে বৈধ পথেই আসতে পারে বাংলাদেশিরা। সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম কূটনৈতিক তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি মানবপাচারকারীদের হাতে জিম্মি হয়ে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিসহ অভিবাসীদের প্রাণ হারানোর ঘটনায় পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় তোলপাড় চলছে। বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এই দালালদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে এরই মধ্যে কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ। কিন্তু প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপের মধ্যেই ইন্দোনেশিয়া উপকূলে দফায় দফায় অভিবাসী উদ্ধারের খবর আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৫
এইচএ/