মালয়েশিয়া থেকে ফিরে: চট্টগ্রামের রাউজানের ছেলে সাজ্জাদ গত বছরের মে মাসে যান জি.ই.সি.তে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া স্টাডি সেন্টার অফিসে। সেখানে কোয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি পেরাকের (Quest InternationalUniversity Perak, QIUP) ডেপুটি ডাইরেক্টর আনান্থ লাচুমানানের খপ্পরে পড়েন সাজ্জাদ।
সম্প্রতি কুয়ালালামপুরে সাজ্জাদ বাংলানিউজকে জানান, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তিনি। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেখে জি.ই.সি এর ও.আর. নিজাম রোডে ৬ এর ৬৬ নং বাড়ির ৪র্থ তলায় বাংলাদেশ মালয়েশিয়া স্টাডি সেন্টারে যান তিনি। সেখানে আনান্থ লাচুমানান স্পট এডমিশন করাচ্ছিলেন।
সাজ্জাদের অভিযোগ, আনান্থ আমাকে বলেন মালয়েশিয়াতে পার্ট টাইম কাজের সুবিধা রয়েছে। পড়াশোনার মানও ভাল। আইইএলটিএস লাগে না। আর নিজের যাবতীয় খরচ পার্ট টাইম চাকরি করেই আয় করা সম্ভব। আমার বাবাও সন্তুষ্ট হয়েছিলেন আনান্থের কথায়। বাবা আমাকে বলেন, আমি টিউশনি ফি দেবো, আর তুমি নিজের খরচটা ম্যানেজ করো।
তবে মালয়েশিয়া এসে ভ্রম কাটে সাজ্জাদের। একমাস দেরি করে নভেম্বরে আসেন তিনি। সাজ্জাদ বলেন, এখানে শিক্ষক বা শিক্ষার্থী কেউই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে সাহায্য করতে রাজি নন। প্রথম সেমিস্টারের ফলাফল খারাপ হয় আমার। আর নেই কোন পার্ট টাইম চাকরি। আনান্থকে তার পুরনো প্রতিশ্রুতি স্মরণ করিয়ে দেই। আনান্থ বলেন, মালয়েশিয়া সরকার শিক্ষার্থীদের পার্ট টাইম চাকরির অনুমোদন দেয় না।
সাজ্জাদ অভিযোগ করে বলেন, অথচ চট্টগ্রামে আনান্থ এবং বাংলাদেশ মালয়েশিয়া স্টাডি সেন্টারের কাউন্সিলর মোস্তাযুদ্দুলা শুভ দুজনেই পার্ট টাইম চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
বাজে পরিস্থিতি সামলাতে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি মালায়াতে ভর্তির চেষ্টা চালান সাজ্জাদ। বিষয়টি জানতে পারে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনভাইটেশন লেটার বা প্লেনের টিকেটের টাকার জন্যে এক সপ্তাহ সময় চান তিনি।
তবে এরই মধ্যে গত ১২ জুন সাজ্জাদের ভিসা বাতিল করে ইউনিভার্সিটি। ২৪ ঘণ্টারও কম সময় দিয়ে ১৩ জুন সকালে তাকে মালয়েশিয়া ছাড়তে বলা হয়।
নিয়মানুযায়ী ভিসা বাতিল করলে শিক্ষার্থীকে ইমিগ্রেশনের জন্যে ৭০০ রিঙ্গিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে ৩৫০ রিঙ্গিত সিকিউরিটি ফি ফেরৎ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে এসব কিছুই এখন পর্যন্ত ফেরৎ পাননি সাজ্জাদ।
তিনি জানান, একই কায়দায় প্রতারিত হয়ে চট্টগ্রাম থেকে তার আরো দুজন পরিচিত শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন এ মাসেই। তবে কোয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সমস্যার কথা তাদের জানালেও পেছানোর আর উপায় নেই। কারণ ইতিমধ্যেই সব টাকা বাংলাদেশ মালয়েশিয়া স্টাডি সেন্টারে জমা দিয়েছেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মালয়েশিয়ার একটি নামকাওয়াস্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি পেরাক। বিশ্ববিদ্যালয়টির ডেপুটি ডাইরেক্টর আনান্থ লাচুমানানকে দেশ থেকে শিক্ষার্থী পাচারের পথ প্রদর্শন করছেন বাংলাদেশ মালয়েশিয়া স্টাডি সেন্টার নামে একটি কনসালটেন্সি ফার্মের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রহিম খান মুকুল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মালয়েশিয়ায় পার্ট টাইম চাকরির লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করে এই বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা এবং আফ্রিকার দেশগুলোই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় বাজার। এর মধ্যে এশিয়ার দেশগুলোর শিক্ষার্থী জোগাড়ে বিশেষভাবে নিয়োজিত ভারতীয় বংশোদ্ভূত মালয় নাগরিক আনান্থ লাচুমানান।
পেরাক দারুল রিদজুয়ান ইপোহতে জালান রাজা পারমাসুইরি বায়নুন এর প্লাজা তেহ তেং সেং এর ৩য় তলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সিটি ক্যাম্পাস অবস্থিত। সেখানে কয়েকটি শ্রেণী কক্ষ আর একটি অফিস কক্ষ নিয়েই গড়ে উঠেছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়!
আবার সেলানগরের পেটালিং জায়ার জালান বারাতের সেকশন ৮ এর কিউআই টাওয়ারের ১৪ তলায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির আরেকটি অফিস। মূলত মালয়েশিয়ায় পার্ট টাইম চাকরির নামে যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়, তাদের অর্থেই চলে এ বিশ্ববিদ্যালয়।
তবে বরাবরের মতোই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আনান্থ। শনিবার সকালে তিনি ভাইবার সংযোগে বাংলানিউজকে বলেন, সাজ্জাদ পরীক্ষায় ৬টি বিষয়ের মধ্যে ৫টিতে অকৃতকার্য হয়েছেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর বাংলাদেশ মালয়েশিয়া স্টাডি সেন্টার হয়তো, পার্ট টাইম চাকরির অফার দিয়েছে, আমি দেইনি।
শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বাজে আচরণেরও অভিযোগ তোলেন আনান্থ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া স্টাডি সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রহিম খান মুকুলকে ফোন দিলেও নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৫
জেডএম