কুয়ালালামপুর থেকে ফিরে: বিদেশি শিক্ষার্থী আনার ক্ষেত্রে ব্ল্যাকলিষ্টে পড়া ভিক্টোরিয়া কলেজ এবার ক্লাস নেয়াও বন্ধ করেছে। গত মে মাসে শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে ১ ঘণ্টায় আগামী ১ বছরের স্বাক্ষর নিয়ে রেখেছে কলেজটি।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সেলিম (ছদ্মনাম) বাংলানিউজকে বলেন, তিনি কলেজটিতে ডিপ্লোমা ইন হোটেল ম্যানেজম্যান্টের ছাত্র। মে মাসে কলেজ থেকে ফোন দিয়ে ১ ঘণ্টার জন্যে যেতে বলা হয়। যাওয়ার পর, বলা হয় আগামী এক বছর আর কলেজে আসতে হবে না। কলেজের হাজিরা খাতা দিয়ে ১ বছরের জন্যে স্বাক্ষর করে দিতে বলা হয়।
সেলিম জানান, ২০১৪ সালের মে মাসে তিনি প্রথম মালয়েশিয়া আসেন। প্রথম বছরে সপ্তাহে দুদিন করে কলেজে আসতে হতো। পরে একদিন করে। ওই একদিনেই বাকি ৪ দিনের স্বাক্ষর নেওয়া হতো। তবে গত মে মাস থেকে আর ক্লাসই হবে না বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সম্প্রতি সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুয়ালালামপুরের জালান ইপোহ’র বাতু লিমার উইসমা ফু উয়েনে অবস্থিত কলেজটি। ভবনটির গ্রাউন্ড ফ্লোরে কলেজ কর্তৃপক্ষের অফিস এবং ৬ষ্ঠ তলায় কলেজটির ভিসা সর্ম্পকিত অফিস। এছাড়া আর কোনো ক্লাসরুমও নেই।
বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, একটি গোডাউনে ঢোকার ছোট দরজা কলেজটির গেট। সেখানে বাইরে ফুটপাথে বসে আছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। কলেজে ভিসার জন্যে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও হাতে পাচ্ছে না তারা। ৬ তলায় ভিসা প্রসেসিং সেন্টারে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীর ভীড়। কলেজের নিচ তলার সিড়ি থেকে শুরু ৬ তলার ভিসা প্রসেসিং সেন্টার সবখানেই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
বাংলাদেশের কক্সবাজারের শিক্ষার্থী সাইদুল (ছদ্মনাম) বাংলানিউজকে বলেন, ভিক্টোরিয়াকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বললে ভুল হবে। এর চেয়ে ভিসা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বলা যুক্তিযুক্ত। ১ বছরের স্বাক্ষর দিয়ে দেওয়ায় এখন আর কলেজের সঙ্গে একাডেমিক সম্পর্ক নেই। আগামী বছরে ভিসা নবায়ন করতে ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে পাসপোর্ট জমা দিতে হবে।
তিনি জানান, ভিসা নবায়ন করতে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার রিঙ্গিত (৮৫ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা) প্রয়োজন হয়। আর এটাই এখানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের থেকে প্রতি বছর কলেজ কর্তৃপক্ষের ব্যাবসা। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অর্থেই চলছে ভিক্টোরিয়া কলেজ। শিক্ষার্থীরা এক বছরে কষ্ট করে যা অায় করেন, পরের বছরের ভিসা নবায়নের জন্যে সে অর্থ জমা দেন। আর তার একটা অংশ পান দালালও।
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থীর নামে শ্রমিক পাঠানোর এজেন্টদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকেই রয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। ভুয়া সার্টিফিকেট, কাগজপত্র জমা দিয়েও ভর্তি করানো হয় এখানে।
কলেজের একজন শিক্ষার্থী সাগর (ছদ্মনাম) বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন এখন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে এ কলেজে আসেন। এদের সকলেরই ভিসা প্রসেস মে মাসের আগে সম্পন্ন হয়েছে।
কুয়ালালামপুরে কলেজটির একজন এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হন, তাকেই কর্তৃপক্ষ এজেন্ট বানিয়ে নেয়। নতুন শিক্ষার্থীকেই বলা হয়, পরে শিক্ষার্থী আনতে পারলে ১০ শতাংশ কমিশন দেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ঢাকায় এই কলেজের তিনজন বড় এজেন্টের নাম জানা যায়। তারা হলেন- লালমাটিয়ার সজিব এবং মালিবাগের ফয়সাল ও পারভেজ।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৬ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৫
এমএন/বিএস