কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া থেকে): ‘একজন শ্রমিক ইঞ্জিনিয়ার বা ডক্টর অন্য কোনো পেশাজীবীর পরিচয়ে এখানে এসে যাচ্ছে- এটি বাংলাদেশের ইমেজকে দারুণভাবে খর্ব করে। প্রফেশনাল কিংবা স্টুডেন্ট ভিসার আড়ালে যদি শ্রমিকরা এ দেশে আসে তাহলে তা দেশের মর্যাদার জন্যে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এ মন্তব্য মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহিদুল ইসলাম এর। সম্প্রতি নিজ বাসভবনে বাংলানিউজের মুখোমুখী হয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এ সময় একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসে প্রবাসী শ্রমিক নিয়ে তার উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার কথা। শোনান সম্ভাবনার গানও।
হাইকমিশনার বলেন, সারা বিশ্বে পরিশ্রমী জাতি হিসেবে বাঙালির বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। কিন্তু যখন একজন বাঙালি এখানে এসে জানতে পারেন যে, তাকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে এখানে আনা হয়েছে তখন তার ওপর বিশাল মানসিক চাপ পড়ে। সুতরাং কোনভাবেই স্টুডেন্ট বা প্রফেশনাল ভিসায় এখানে শ্রমিকের কাজ করতে আসা বাঞ্ছনীয় নয়।
এই সমস্যার কথা ঢাকায় জানানো হয়েছে জানিয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন, কিছু কিছু কাজ সবাইকে মিলেই করতে হয়। আমাদের প্রবাসী কল্যাণসহ সব মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে আন্তরিক।
মালয়েশিয়ায় বৈধ শ্রমিকদের বাইরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবৈধ শ্রমিক রয়েছে। তাদের বৈধতা না দিয়েই নতুন করে আরো ১৫ লাখ শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টি কি একটু গোলমেলে না? কিংবা আসলেই কি মালয়েশিয়ায় এতো শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে?- এসব প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত বলেন, আসলে এ বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারবে মালয়েশিয়া সরকার। তারাই বলতে পারবে, তাদের কতো শ্রমিক লাগবে।
তারাই শ্রমিক নিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রথম বছর তারা ৫ লাখ লোক নিয়োগ করবে। পরবর্তী দুই বছরে আরো দশ লাখ লোক নিয়োগ করবে। যখন তারা ১৫ লাখ লোক নিয়োগের কথা বলেছে, তখন কিন্তু তারা আরো স্পষ্ট করে দু’তিনটি জিনিস বলেছে। তারা বলেছে যে, ভবিষ্যতে তাদের আরো লোক লাগবে। তাদের আরো লোকের চাহিদা রয়েছে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা থেকে যতদূর বুঝতে পারি, এখানে শ্রমিকের যথেষ্ট সংকট রয়েছে।
এ সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ তাদের জন্যে উত্তম জায়গা। বাংলাদেশের শ্রমিকরা অত্যন্ত পরিশ্রমী। আর অন্যান্য দেশের নাগরিকদের তুলনায় এ দেশের আইন কানুন, নিয়ম, শৃঙ্খলা মেনে চলার ব্যাপারে আলাদা অবস্থান তৈরি করেছে। এটি এই দেশের কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সরকার সবাই বিশ্বাস করে। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ থেকে তারা সহসাই লোক নিয়োগ শুরু করবে। এর অংশ হিসেবে মালয়েশিয় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল চলতি মাসের শেষ কিংবা আগামী মাসের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে যাবে। আর চূড়ান্ত আলোচনার পর পরই শুরু হবে লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া।
অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও দুই ৯৭ হাজার লোককে তারা বৈধতা তারা দিয়েছে। যেটি ছিলো সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশির বৈধতা পাওয়ার ঘটনা। বৈধ করার পর-ও যদি বিভিন্ন পন্থায় কেউ অবৈধ পথে কিংবা সমুদ্র পথে এখানে এসে থাকেন তবে মালয়েশিয় সরকারের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগ আমরা সেভাবেই কাজে লাগাতে চাই যেভাবে জাতি হিসেবে আমাদের কল্যাণ হবে।
নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে সব কিছু ফের সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাবে কি না জানতে চাইলে শহিদুল ইসলাম বলেন, সরকার এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সর্তক। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক। কর্মীরা যাতে কম খরচে এখানে আসতে পারে তার উপায় বা পদ্ধতি খোঁজা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবেই মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে যাচ্ছেন। আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই একটি পদ্ধতি বের হয়ে আসবে।
সাধারণ শ্রমিকদের প্রতি মায়ের জায়গা থেকে সন্মান জানিয়ে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, শ্রমিকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব যেমন সরকারের, তেমনি সবার ওপরই কিছু না কিছু দায়িত্ব বর্তায়। সবাকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।
নতুন নিয়োগ নিয়ে টাকা পয়সার লেনদেন শুরু হওয়ার ব্যাপারে মনোযোগ আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এশন কোনো তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছেও এমন কোন তথ্য নেই। আমি কিন্তু খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, এর আগেও একটি মহল এভাবে ইমেজ সংকট তৈরি করেছিলো। সেটা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে আমরা সচেতন আর আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণে সর্তক।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৫
জেডএম