ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

জয়নালের চোখে অন্ধকার

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৫
জয়নালের চোখে অন্ধকার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পুত্রজায়া (মালয়েশিয়া থেকে): রংপুরের পীরগাছার জয়নাল আবেদীনের দু’চোখে এখন অন্ধকার। সামনে ঈদ।

বউ, ছেলেমেয়েদের ঈদের কাপড়ের জন্যে দেশ থেকে বার বার ফোন আসছে। তিনি ধরছেন না। উল্টো ফোন করছেন পরিচিতজনদের। কারো কাছে যদি কোন কাজের খবর থাকে- এ আশায়।

দেশে টাকা পাঠানো দূরের কথা, নিজের চলার মতো অর্থকড়ি হাতে নেই জয়নালের। কেবল জয়নাল একাই নয়, তার মতো হাজারো বাংলাদেশি এখন অবৈধ শ্রমিক হিসেবে কর্মহীন অবস্থায় মানবেতর দিনযাপন করছেন মালয়েশিয়ায়।

স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় জয়নাল এসেছিলেন বৈধ শ্রমিক হিসেবেই। তবে সেই মেয়াদ শেষের পর আর দেশে ফিরে যাননি। এখন তিনি অবৈধ। পুলিশ ধরলে ঘুষ দিয়ে কোনমতে চাকচিক্যের এই দেশে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছিলেন জয়নালরা। আর যার হাতেই অর্থই নেই, সে ঘুষ দেবেইবা কোথা থেকে?

স্বজনদের চেয়েও আপন স্বদেশি বন্ধুরা টাকা ধার দিয়ে ছুটিয়ে আনেন জয়নালকে।

পুত্রজায়ার একটি ছোটখাটো কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে দেখা হলো জয়নালের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দেশে সবাই জানে আমরা কত ভালো আছি। সেটা জেনেই তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটে আসেন এখানে। কেউ সমুদ্র পথে, কেউবা ভুল ভিসায় প্লেনে। অনেকে ছাত্র ভিসায় এসে কাজ করেন হোটেল ঝাড়ুদার হিসেবে। অনেকে ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার ভিসায় এসে কাজ করেন দোকানে দোকানে।

বৈধ যখন ছিলেন তখন জয়নাল দিনপ্রতি মজুরি পেতেন ৬৫ রিঙ্গিত। বাংলাদেশি অর্থে যা সাড়ে ১৪শ’ টাকার কিছু বেশি।

এখন অবৈধ হয়ে পড়ায় তার মজুরি কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ রিঙ্গিত। এর মধ্যে আবার নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনকারীদের দিতে হয় কমিশন। তবে নজরুলের ভাগ্য খারাপ। গত দেড় মাস ধরে কোন কাজ জোটেনি তার।

সেই কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে কথা হয় ইনচার্জ সাইফুলের ইসলামের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, নজরুলের জন্যে খারাপই লাগে। ওর হাতে কোন অর্থ নেই। আমরাই খাওয়াই। বসকে বলেও ওর জন্যে আমাদের এখানে কোন কাজ জোটাতে পারিনি। থাকবে কোথায়। আমাদের শ্রমিকদের সঙ্গেই একটি শেডে থাকে। কেউ অনুপস্থিত থাকলে নজরুল শোয় তার বিছানায়। আর বিছানার লোক থাকলে নজরুলকে থাকতে হয় মেঝেতে।

কুয়ালালামপুর, সেলাংগর, পেনাংসহ মালয়েশিয়ার শ্রমঘণ এলাকাগুলোতেও চোখে পড়বে অভিন্ন চিত্রের।

এই বাস্তবতায় কথা হয় এশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা মালয়েশিয়া ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ক্যারাম এশিয়ার আঞ্চলিক সমন্বয়কারী হারুন আল রশিদের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন,এই মূহৃর্তে কাজের সুযোগের তুলনায় জনশক্তি বেশি। যার কারণে কর্মহীন থাকতে হচ্ছে অনেককে।

তিনি জানান,আগামী তিন বছর পর্যায়ক্রমে আরো ১৫ লাখ শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করার সরকারি বার্তায় নড়েচড়ে বসেছেন দালাল, মানবপাচারকারী সিন্ডিকেট।

তারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে ভুল ভিসায় এদেশে পাঠিয়ে মূলত তাদের দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে।

মালয়েশিয়ায় কথা হয় রাজশাহীর আল আমিন নয়নের সঙ্গে। তিনি জানান, অভাব ঘোচাতে ২০০৭ সালে দালালদের মাধ্যমে দেশে তিন মাসের বেশি সময় তাকে থাকতে হয়েছে জঙ্গলে ও বন্দি জীবনে।

এ জন্য তাকে গুণতে হয়েছে আড়াই লাখ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৫
জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ