ঢাকা: সরকারিভাবে মালয়েশিয়া যেতে ২০১৩ সালে ১৪ লাখ মানুষ নাম নিবন্ধন করালেও দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ পান মাত্র আট হাজার মানুষ।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এবার বেসরকারিভাবে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রেও নিবন্ধিত কর্মী থেকে বাছাই করতে হবে।
বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রারও সরকারি ডাটাবেজে আগ্রহ নেই।
ফলে, ১৪ লাখ মানুষের ওই ডাটাবেজ কার্যত কোনো কাজে আসছে না। কম খরচে যারা মালয়েশিয়া যাওয়ার আশায় নাম নিবন্ধন করিয়েছিলেন, তারা বঞ্চিত হতে বসেছেন।
জনশক্তি রফতানিকারকরা বলছেন, সরকারের ওই ডাটাবেজ সঠিক প্রক্রিয়ায় করা হয়নি। কারণ, যখন ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছিল তখন শুধুমাত্র প্ল্যান্টেশন খাতে শ্রমিক চেয়েছিল মালয়েশিয়া। এখন প্রায় সব খাতেই শ্রমিক নিতে আগ্রহী দেশটি। এছাড়া সে সময়ে যারা নিবন্ধন করেছিলেন, তাদের অনেকেই হয়তো এখন মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহী হবেন না।
আর সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্ল্যান্টেশনের পাশাপাশি অন্যান্য খাতে কাজ করতে আগ্রহীরাও ওই সময় নাম নিবন্ধন করিয়েছিলেন। ফলে ডাটাবেজে শুধু প্লান্টেশন কর্মী আছে, এমনটি নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূলত বেশি লাভের আশায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সরকারি ডাটাবেজ থেকে শ্রমিক নিতে আগ্রহী নন। নিজস্ব কায়দায় দালালের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ্রমিক সংগ্রহে তাদের আগ্রহ বেশি। এতে বেশি টাকা আদায় করা সম্ভব।
এভাবে ইতোমধ্যে অনেক এজেন্সি আগাম টাকাও নেওয়া শুরু করেছে।
সিলেটের হবিগঞ্জের সালাম নামে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু ব্যক্তি সরকারি ডাটাবেজে নাম নিবন্ধন না করালেও আই ট্রেড নামে রিক্রুটিং এজেন্সির দালালের কাছে দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন।
অথচ একই এলাকার আবদুল্লাহ, যিনি নাম নিবন্ধন করিয়েছিলেন তিনি রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে ধরনা দিয়েও যাওয়ার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “আমি কম খরচে মালয়েশিয়া যেতে চাই বলেই নিবন্ধন করেছিলাম। সরকারিভাবে যেতে পারিনি বলে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কাছে গিয়েছি। তারা যে বিরাট অংকের টাকা খরচের কথা বলছে, তা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বেশি টাকা দিতে পারলেই যদি মালয়েশিয়া যাওয়া যাবে, তাহলে কেন এত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আমাদের নাম নিবন্ধন করানো হল?”
আবদুল্লাহ বলেন, “২০১৩ সালে নিবন্ধনের পর অল্প দিনে মালয়েশিয়া যেতে পারবো সে আশায় ছোটখাট কিছু চাকরির সুযোগ এলেও তা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। এখন আমি বেকার। ”
সরকার বললেও বায়রা নেতাদের মধ্যেও ডাটাবেজ থেকে শ্রমিক নেওয়ার আগ্রহ কম। উল্টো তারা নিজেদের সংগ্রহ করা শ্রমিকদের নাম সেখানে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলছে।
বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গ্রিনল্যান্ড ওভারসীজের সত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ আবদুল হাই বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকারি ডাটাবেজ থেকে শ্রমিক নিয়ে মালয়েশিয়ার চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। ’
কারণ হিসেবে তিনি বলেন,‘ওই নিবন্ধন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ছিল না। টাকার বিনিময়ে বা ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের সুপারিশে ওই সময় নিবন্ধন করানো হয়। এছাড়া ভিন্ন নামে একজন অন্যান্য নামেও নিবন্ধন করিয়েছেন। তাই ওই সরকারি ডাটাবেজ থেকে শ্রমিক নেওয়া সম্ভব নয়।
‘তবে সরকার যদি চায় তাহলে আমাদের বাছাই করা শ্রমিকদের নাম মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে ডাটাবেজভুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। তাহলে সরকারি তালিকা থেকেই শ্রমিক নেওয়া প্রতীয়মান হবে,’ যোগ করেন আবদুল হাই।
অপর একজন রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যারা সরকারিভাবে অল্প টাকায় মালয়েশিয়া যেতে নিবন্ধন করিয়েছেন, এখন তারা বেশি টাকায় বিদেশ যেতে চাইবেন না, এটাই স্বাভাবিক। ”
সরকারি ভাবে মাত্র ২৭-৩৩ হাজার টাকায় মালয়েশিয়াতে শ্রমকি পাঠানো হয়। এবার দেশটিতে বেসরকারিভাবে জনশক্তি রফতানি হওয়ার খবরে ইতোমধ্যে লাখ লাখ টাকার লেনদেন শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ আছে, দেশটির সঙ্গে এখনও চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা না মিটলেও আড়াই থেকে চার লাখ পর্যন্ত ভিসা প্রতি মূল্য ধরে টাকা নিচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো।
ডাটাবেজের প্রতি অনাগ্রহের সুর মিললো বায়রা সভাপতি আবুল বাশারের কণ্ঠেও।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমরা সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে ডাটাবেজ থেকে শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ইন্টারভিউ নেবেন। তারা যাদের বাছাই করবেন, তারাই সেখানে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
‘সেক্ষেত্রে বাছাই করা শ্রমিকরা যদি ডাটাবেজের বাইরের হন, তাহলে তাদের নাম ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কেননা, নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখন উন্মুক্ত আছে। ’
এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাধ্যতামূলকভাবে সরকারি ডাটাবেজ থেকে শ্রমিক বাছাই করতে হবে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ’
তবে তিনি এও বলেন,‘সবকিছু নির্ভর করছে মালয়েশিয়ার চাহিদার ওপর। আগমী ৯ আগস্ট দেশটির প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসার পরেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’
বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির অন্যতম বাজার মালয়েশিয়া। বর্তমানে সেখানে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি কাজ করছেন।
সম্প্রতি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় গণকবর আবিষ্কার এবং সাগরপথে মানুষের দুর্দশা নিয়ে হৈ-চৈ শুরুর পর ফের বাংলাদেশ থেকে বেসরকারিভাবে কর্মী নেওয়ার প্রস্তাব দেয় মালয়েশিয়া।
আগামী তিন বছরে ১৫ লাখ শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৫
জেপি/এমএ