ঢাকা: ডলারের তুলনায় দুর্বল হয়ে মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতের দাম ৪ এ পৌছেছে। ১৯৯৮ সালের বিপর্যয়কেও এবার হার মানিয়েছে এই পতন।
স্থানীয় ব্যাংকগুলোতে বুধবার সকাল ১১টা ২ মিনিটে রিঙ্গিতের অর্থমূল্য ডলারের বিপরীতে ৪ দশমিক ০০২৫ এ নেমে আসে। গত ১২ মাসে ডলারের বিপরীতে এ মূল্য ২০ শতাংশ কমেছে, যা এশিয়ার সবচেয়ে বাজে অবস্থান। ১৯৯৮ সালের জুলাই মাসে এ ডলারের বিপরীতে এ মূল্য ৩ দশমিক ৮৮ রিঙ্গিতে নেমে এসেছিল।
এরই মধ্যে চীনের মুদ্রা ইয়ুয়ানের মূল্যহ্রাসের প্রভাবও পড়েছে রিঙ্গিতের ওপর। তেল রপ্তানিতে ঘাটতি থেকে মালয়েশিয়া সরকারের আয় কমে যায়। যার প্রভাবে মালয়েশিয়া অতিমন্দায় এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে আর আমেরিকার সুদের হারে পিষ্ট হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাকের ১ এমডিবি (১ মালয়েশিয়ান ডেভলপমেন্ট বিএইচডি) থেকে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন রিঙ্গিতের অনুদান নিজের একাউন্টে সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি আলোচিত হয়ে উঠছে।
মালয়েশিয়ায় একটি প্যকিং কোম্পানিতে চাকরি করেন খুলনার ছেলে জাহিদ। বুধবার বিকেলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রিঙ্গিতের মূল্য যেভাবে কমছে বাড়িতে টাকা পাঠানো বেশ দুরুহ হয়ে উঠেছে।
তিনি জানান, মাসে ১৫০০ রিঙ্গিত আয় করেন তিনি। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ বেতনে বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা আয় করতেন তিনি। রিঙ্গিতের দাম পড়ে যাওয়ায় এখন তা ২৯ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। বাড়িতে টাকা পাঠানোও বন্ধ করতেও পারছেন না। আবার নিজেরও ওখানে চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
বাংলানিউজের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ২০১৩ এর ডিসেম্বরের পর থেকেই ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিতের মূল্য পড়তে থাকে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে ১ ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিতের মূল্য ছিল ২ দশমিক ৯৭ রিঙ্গিত। কিন্তু ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ১ ডলারের বিপরীতে ৩.৪০ রিঙ্গিত মূল্য হয়।
অর্থনৈতিক এ পতন ঠেকাতেই চলতি বছরের এপ্রিলের এক তারিখ জিএসটি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স) চালু করে মালয়েশিয়া সরকার। নাগরিকদের অসন্তুষ্টির মুখেও প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাক নিজে একটি দোকানে জিএসটি প্রদান করে পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে শুরু করেন এই ট্যাক্স গ্রহণ কার্যক্রম। ৬ শতাংশ ট্যাক্স যোগ হওয়ার ফলে ১০০ রিঙ্গিতের পণ্যের সঙ্গে সেবা গ্রহণকারী বা ক্রেতাকে দিতে হচ্ছে ১০৬ রিঙ্গিত।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, জিএসটি চালুর প্রথম এক সপ্তাহ রিঙ্গিতের মূল্য ডলারের তুলনায় কিছুটা ওঠার চেষ্টা করলেও আবার ধসে পড়ে।
এদিকে জিএসটি যোগ হওয়ার ফলে, বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে, খাওয়া এমনকি মোবাইল কার্ডের দামও বেড়ে গেছে ৬ শতাংশ হারে। কিন্তু আয় রয়েছে আগের মতোই। রিঙ্গিতের এ দরপতনে নাভিঃশ্বাস উঠেছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের।
সাইবার জায়ায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন টাঙ্গাইলের বুলবুল। তিনি ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে একটি কন্ডোতে থাকি। আগে বাসা ভাড়া দিতে হতো ২০০ রিঙ্গিত প্রতি জন। এখন তা দিতে হচ্ছে ২২০ রিঙ্গিত করে। জিএসটি’র কারণে ভাড়া ১২ রিঙ্গিত বাড়লেও মালিক আরো বেশি নিচ্ছেন ভাড়া। এছাড়াও পরিবহন ভাড়া, দৈনন্দিন খরচও বেড়েছে সব পণ্যের।
তিনি বলেন, মাসে প্রায় ১ হাজার রিঙ্গিত আয় করি। এক সময় প্রতি মাসে দেশে ১০ হাজার টাকা পাঠাতে পারতাম। গত কয়েক মাস ধরে টাকা পাঠানো বন্ধ রয়েছে। কারণ রিঙ্গিতের দাম কমে গেছে। আবার একই সঙ্গে মালয়েশিয়ায় খরচ বেড়ে গেছে।
কুয়ালালামপুরের বাহরাইন ফরেন কারেন্সি এক্সচেঞ্জের বিজনেস ডেভলপমেন্ট অফিসার এস কে ফয়েজ বাংলানিউজকে বলেন, রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ আগের তুলনায় ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। এখন দিনে ১০ জন বাংলাদেশি গ্রাহকও পাওয়া যাচ্ছে না। নেপাল ও পাকিস্তানিদেরও কমেছে বাড়িতে টাকা পাঠানো।
ফয়েজ বলেন, আজকের শেষ মূল্য তালিকা অনুযায়ী ১ রিঙ্গিতের বিনিময়ে টাকার মূল্য ১৯ দশমিক ৪০। প্রতিনিয়তই এটা কমছে। মানুষ এখন একেবারেই হুন্ডির ওপর ঝুকেঁ পড়ছেন। হুন্ডিতে টাকা পাঠালে প্রতি রিঙ্গিতে ৪০ থেকে ৫০ পয়সা বেশি পাওয়া যায়। এ কারণে হুন্ডি চক্রগুলোও এখন বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৫
এমএন/জেডএম