ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

বিতর্কেই কি রাজনীতির ইতি মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর?

রাজিউল হাসান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৫
বিতর্কেই কি রাজনীতির ইতি মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর? মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নজিব রাজাক

ঢাকা: সম্প্রতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নজিব রাজাক রাজনৈতিক তহবিলের ব্যাপারে নির্দেশিকা প্রস্তুতে একটি কমিটি গঠন করেছেন। সাদা চোখে এ ঘটনা অতি সাধারণ বলে মনে হলেও পর্দার পেছনের দৃশ্য মোটেই সাধারণ নয় বলেই মন্তব্য সমালোচকদের।

যে কারণে এই কমিটি গঠন, সেই কারণেই ৬২ বছর বয়সী নজিব রাজাকের রাজনীতির ইতি দেখতে পাচ্ছেন তারা।

মালয়েশিয়ার জাতীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত ইস্যু ‘ওয়ান মালয়েশিয়ান ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ (ওয়ানএমডিবি)’। বিতর্কটির জন্ম দেয় ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

চলতি বছরের জুলাই মাসে প্রকাশিত হয় ওই প্রতিবেদন। এতে মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তোলা হয়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ওয়ানএমডিবি ফান্ড থেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন রিংগিত (৫ হাজার ১৮৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা) জমা করা হয়েছে।

দেশটির আইন নির্বাচনের আগে দুই সপ্তাহের প্রচারণায় সর্বোচ্চ ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করে দিলেও রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থের উৎস প্রকাশের ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা রাখেনি। আইনের এই ফাঁক গলেই নজিব রাজাক এমন কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে বসেছেন বলে দাবি সমালোচকদের।

ওয়ানএমডিবি মালয়েশিয়ার সরকারের একটি কৌশলগত উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান। বৈশ্বিক সম্পর্কোন্নয়ন ও সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের ব্যবস্থা করে দেশের দীর্ঘ মেয়াদী অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। প্রথমে প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল তেরেঙ্গানু ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (টিআইএ)। ২০০৮ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরের বছর, ২০০৯ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ওয়ান মালয়েশিয়ান ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নজিব রাজাক। তিনি শুরু থেকেই বলছেন, এই অভিযোগ তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়।

মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনও বলেছে, নজিব রাজাকের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা পড়া অর্থ রাজনৈতিক অনুদান। এর সঙ্গে ওয়ানএমডিবি’র কোনো সম্পর্ক নেই।

তবে সমালোচকরা বলছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের মন্তব্য আইওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়। পরিস্থিতি নিজের পক্ষে রাখতেই নজিব রাজাক কমিশনকে দিয়ে এমনটা বলাচ্ছেন।

সমালোচকদের এ মন্তব্য আরও জোর পেয়েছে মালয়েশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী ও উন্নয়নের কর্ণধার বলে পরিচিত মাহাথির মোহাম্মদের মন্তব্যে। তিনি বলেছেন, সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করছেন নজিব। আত্মরক্ষায় এগুলোকে তিনি এখন কাজে লাগাচ্ছেন।

অনেকেই বলছেন, ওয়ানএমডিবি বিতর্কেই নজিব রাজাক তার রাজনীতির শেষ দেখতে পারেন। কারণ বিরোধী জোট ও জনগণের মধ্যে তো অবশ্যই, নিজের দলেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি।

মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিনকে বরখাস্তের ঘটনা এ সমালোচনার আগুনে আরও ঘী ঢেলেছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে নির্ধারিত সময়ের তিন মাস আগেই অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল গণি পাতাইলকে অবসরে পাঠানো নজিব রাজাককে আরও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল গণি পাতাইল ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারিতে কাজ করা টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে ছিলেন। আর উপপ্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিনকে ক্ষমতাসীন জোট ‘বরিসন ন্যাশনাল’র প্রধান দল ইউনাইটেড মালয়েজ ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএনএমও) নজিবের বিকল্প বলে মনে করা হতো।

সমালোচকরা বলছেন, মুহিদ্দিনকে বরখাস্ত করে নজিব নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বিমুক্ত করেছেন। কারণ ইউএনএমও’র ভেতরে মুহিদ্দিন অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন নেতা। অন্যদিকে আব্দুল গণিকে সরিয়ে তিনি তদন্তের কাজ ধীর করে দিয়েছেন।

১৯৫৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দীর্ঘদিন ইউএনএমও সরকারের ক্ষমতায় থাকলেও ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রথম জনপ্রিয়তার ভাটা দেখে দলটি। দলের মধ্যে সমালোচনা, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া নজিব রাজাকের পরিকল্পনায় ও পদক্ষেপে ত্রুটি থাকাতেই এমন দিন দেখতে হচ্ছে তাদের। অনেকে ২০১৭ সালের নির্বাচনে বিরোধীজোটের কাছে হেরে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন।

জনগণের মধ্যেও বেশ সমালোচিত নজিব রাজাক। ‘বেরসিহ’ নামে একটি সুশীল সমাজ সংগঠন তার পদত্যাগের দাবি করেছে এরই মধ্যে। চলতি মাসের শেষ দিকে তারা পদত্যাগের দাবিতে ৠালির ঘোষণাও দিয়ে রেখেছে।

সমালোচক ও বিশ্লেষক মহল বলছেন, শক্ত হাতে এখন পর্যন্ত সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখলেও তা কতদিন নজিব রাজাক ধরে রাখতে পারবেন তা যথেষ্ট চিন্তার দাবি রাখে। সেই সঙ্গে ওয়ানএমডিবি বিতর্কই তার রাজনীতির ইতি টেনে দেয় কি না, সেটাও দেখার বিষয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৫
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ