মালয়েশিয়া: আজ ৩১ আগস্ট (সোমবার)। মালয়েশিয়ার স্বাধীনতা দিবস।
স্বাধীনতা লাভের পর খণ্ডিত ভূমি নিয়ে গঠিত মালয়েশিয়া রাষ্ট্র হিসেবে পৌঁছে গেছে ঈর্ষণীয় উচ্চতায়। অর্থনৈতিক সক্ষমতা আর সাংস্কৃতিক স্বকীয়তার বিচারে এখন মালয়েশিয়াকে এশিয়ার ইউরোপীয় রাষ্ট্রও বলা হয়ে থাকে।
সুদূর অতীতে মালয় অঞ্চলে ছিল হিন্দু-বৌদ্ধ শাসকদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য। ত্রয়োদশ শতকে এই দ্বীপপুঞ্জে আগমন ঘটে ইসলামের। পঞ্চদশ শতকে মালাক্কান সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থনৈতিক কারণে মধ্য এশিয়া, ভারত ও আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে মালয় অঞ্চলের নিয়মিত যোগাযোগ গড়ে ওঠে।
১৫১১ সালে পর্তুগিজ নাবিক অ্যাফোনসো দ্য আলবুকার্ক এই অঞ্চলে নৌ অভিযান পরিচালনা করেন। এটাই ছিল মালয় অঞ্চলে প্রথম ইউরোপীয় অভিযান। ১৫৭১ সালে এই অঞ্চলে স্প্যানিশদের আগমন ঘটে। ব্রিটিশরা প্রথম মালয় অঞ্চলে আসে ১৭ শতকে। ১৮৯৫ সালে ফেডারেটেড মালয় স্টেটস গঠিত হয়।
অর্থনৈতিক কারণেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা ছাড়াও ডাচ ও ফরাসিদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে মালয় অঞ্চল। ব্রিটিশরা প্রথম বসতি স্থাপন করে মালয় অঞ্চলের পেনাঙে। ১৮১৯ সালে মালয় অঞ্চলে পুরোপুরি ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময় মালয়ের বিভিন্ন এলাকার শাসক সুলতানদের সঙ্গে ব্রিটিশ শাসকদের সুসর্ম্পক ছিল। ১৮২৪ সালে মালয়ের ওপর ব্রিটিশ শাসন পাকাপোক্তের জন্য অ্যাংলো-ডাচ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুসারে মালয় অঞ্চলকে দুইভাগে ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডের মধ্য ভাগ করা হয়।
১৮২৬ সালের মধ্যে ব্রিটিশরা পেনাং, মালাক্কা, লাবুয়ান দ্বীপের উপর পরিপূর্ণ শাসন প্রতিষ্ঠা করে। সেখানে প্রতিষ্ঠা হয় ব্রিটিশ কলোনি। ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া এখানে সরাসরি বাণিজ্য করে। ১৮৭৪ সালে স্বাক্ষরিত পাংকর চুক্তি অনুসারে বিভিন্ন রাজ্যের সুলতানরা ব্রিটিশ এলাকার শাসনের সুযোগ পায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মালয় অঞ্চল রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। জাপানি আক্রমণে বিক্ষত হয়ে ওঠে এই অঞ্চল। ব্রিটিশরা চীন, ফরাসিদের সহায়তায় মালয় অঞ্চলে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৪৬ সালের ১ এপ্রিল মালয়ান ইউনিয়ন গঠিত হয়। এ সময় মালয় অঞ্চলে স্বাধিকার চেতনা জন্ম নেয়।
এ স্বাধিকারের চেতনা থেকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে স্থানীয়রা। ১৯৪৮ সালের ৩১ জানুয়ারি ফেডারেশন অব মালয় গঠিত হয়। স্বাধিকার আন্দোলনের জন্য মালয় অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। অবশেষে ১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট টেংকু আব্দুর রহমান তখনকার মালয়ের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার ভিত্তিতে ১৯৬৩ সালে গঠিত হয় ফেডারেশন অব মালয়েশিয়া।
স্বাধীনতার পর প্রায় ছয় দশকের মধ্যে মালয়েশিয়া যে উচ্চতায় পৌঁছেছে তার পেছনে আছে অনেক লড়াই-সংগ্রামের গল্প। এই লড়াইয়ের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে পুরো মালয়েশিয়ান জাতির কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে আছেন ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী ড. মাহাথির মোহাম্মদ। তার গৃহীত ‘ভিশন ২০২০’ বাস্তবায়নেই বিশ্বদরবারে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে মালয়েশিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৫
এইচএ