ঢাকা: কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে অভিনব প্রতারণার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশি নাগরিক আবুল কালাম আজাদ খান। সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তার কাছ থেকে ২০০ ডলার হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা।
আজাদ জানান, মালয়েশিয়ার পর্যটন পুলিশে এ সম্পর্কে তিনি মামলা করেন। এছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর্যটন শাখাকেও বিষয়টি জানান। তবে এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
বিশেষ করে রাতের বেলায় কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে আসা যাত্রীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে দেয়া আজাদের অভিযোগ
৮ জানুয়ারি
মালয়েশিয়া সময় ভোর সোয়া ৪টায় মালিন্দো এয়ারলাইন্সে ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর পৌছাই। ভারতের বাইরে দ্বিতীয় কোন দেশে এটি আমার প্রথম ভ্রমণ।
ভোর সোয়া ৪টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন পর্ব শেষ হয়। এয়ারপোর্টের তৃতীয় তলার শেষ দরজা দিয়ে বের হচ্ছিলাম আমি। এ সময় তিনজন প্রতারক আমার কাছে আসেন এবং নিজেদের মালয়েশিয়া সরকারের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। তারা নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে পর্যটকদের হোটেলের বুকিং এবং ফিরতি ফ্লাইটের টিকিট চেক করবেন বলে জানান।
তারা আমার এয়ার টিকেট নিয়ে যান এবং বলেন, আমার হোটেল বুকিং না থাকাতে ৫৬০ রিঙ্গিত পেনাল্টি দিতে হবে। অন্যথায় আমাকে ঢাকা ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে। আমার কাছে তখন রিঙ্গিত না থাকায় তারা আমার কাছ থেকে ২০০ ডলার রেখে দেন এবং ৫৬০ রিঙ্গিতের একটি রিসিট ধরিয়ে দেন। আমাকে জোর করে একটি ট্যাক্সিতে উঠিয়ে দেয়া হয়।
ট্যাক্সির দরজা আটকানো হলে, তারা আমার এয়ার টিকিট ফিরিয়ে দেন এবং চায়না টাউনের পাশের একটি স্থানে নামিয়ে দেন। রিসিটটি আবারো দেখলে আমি বুঝতে পারি, প্রতারণার শিকার হয়েছি।
ওই দিনই কুয়ালালামপুর ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে আমি একটি অভিযোগ দাখিল করি। তারা আমাকে কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট থানায় পাঠান একটি রিপোর্ট দিয়ে, তাদের বলা হয় যতো দ্রুত সম্ভব আমার টাকা উদ্ধার করে দিতে। এয়ারপোর্ট থানায় বিস্তারিত দিতে আমি ৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করি। দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিরা মামলাটি নেন এবং টাকার রিসিটের একটি ফটোকপিও রাখেন। তবে তদন্ত শেষের কোন ডেটলাইন তিনি আমাকে দেননি। এরপর আমি কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে যাই প্রতারকদের শনাক্ত করতে। এয়ারপোর্টের ৫ তলায় পুলিশের কাছে যাই। তারা আমাকে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া প্রতারকদের স্ক্রিন শট দেন।
৯ জানুয়ারি
আমি ধারণা করেছিলাম, এই প্রতারকরা প্রতিনিয়তই এটা করেন। এয়ারপোর্টে অবস্থান নিয়ে তাদের চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নিই। আবারো ৩য় তলায় ভোররাত সাড়ে ৩টা থেকে ৫টায় তাদের দেখতে পাই। আমি সিসি ক্যামেরার ভিডিওর প্রেক্ষিতে তাদের ধরার জন্যে এয়ারপোর্ট পুলিশকে অনুরোধ করি। এছাড়াও তদন্ত কর্মকর্তা বিরাকে ফোন দিই। তবে দুর্ভাগ্য যে, পুলিশ তাদের আটক করেনি। বারবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি বিরাকে।
আমি নিজেই ওই প্রতারকদের সরকারি পরিচয়পত্র দেখাতে বলি। তারা সেটা না করে আমাকে সিসি ক্যামেরার আওতার বাইরে নিয়ে যেতে চায় এবং মানি রিসিটটি ছিনিয়ে নিতে চায়। তাদের সহযোগী ট্যাক্সি ড্রাইভার প্রস্তাব দেন, মামলা তুলে নিলে আমার টাকা ফিরিয়ে দেয়া হবে।
৯ জানুয়ারির পরে
আমি বিরার মোবাইলে ২ বার ম্যাসেজ করি এবং ২ বার ফোন দেই। তিনি শুধু একবার আমার ফোন রিসিভ করেন এবং জানান তদন্ত চলছে। এরপর ১৮ জানুয়ারি আমি ঢাকা চলে আসি।
অভিজ্ঞতা
আমার ধারণা, কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট থানা বা এয়ারপোর্ট পুলিশের সঙ্গে এসব ট্যাক্সি ড্রাইভার ও প্রতারকদের ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। এয়ারপোর্ট পুলিশ, ফাস্ট ফুড দোকানদাররা সবকিছুই জানে।
শুধু আমি একা না, প্রতি ভোর রাতে আমার মতো অনেক বাংলাদেশি যাত্রী তাদের অর্থ হারাচ্ছে এভাবে। জোহরবারুতেও একজন বাংলাদেশি লোকের সঙ্গে পরিচয় হয়, তিনি ৪০ ডলার এবং ১০০ রিঙ্গিত খুইয়েছেন। আর এই প্রতারকরা সেদিন আমার সামনের আরেকজন লোককেও এভাবে ধরেছিল।
আমার মতে, কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টের একটি বিশেষ দুর্বলতা এটি। এবং মালয়েশিয়ায় পর্যটকদের প্রবেশে বাধার কারণ।
এসব প্রতারক সালামের জবাব দেয় এবং মালয় মুসলিমের মতো ব্যবহার করে। কিন্তু তারা বিদেশিদের কাছে মালয় মুসলিমদের একটি বাজে ধারণা তৈরি করে।
যদি তারা গ্রেপ্তার না হয় এবং সাজা না হয়, আমি নিশ্চিত তারা এ কাজ করতেই থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৫
এমএন/জেডএম/এটি