ঢাকা: দেশের অন্যতম রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপির) নাম ভাঙ্গিয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন কিছু ব্যক্তি।
ঢাকায় কেন্দ্রীয় বিএনপির অনুমতি না থাকলেও মালয়েশিয়াতে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এছাড়াও মালয়েশিয়ানদের মাঝে বাংলাদেশি সম্পর্কে বিরুপ মনোভাবও তৈরি করছেন এসব ব্যক্তি।
শুধু তাই নয়, বিএনপি’র নাম ভাঙ্গিয়ে মালয়েশিয়ায় চলছে চাঁদাবাজি, মানবপাচার ও আদম ব্যবসা। এসব রাজনৈতিক ব্যক্তির দ্বন্দ্ব কখনো কখনো গড়াচ্ছে সংঘর্ষে। দেশ ও বিএনপির ইমেজ সংকট তৈরি করছেন এসব দুবৃর্ত্ত। তবে এরা কেউই বিএনপি’র কর্মী বা সদস্য নন বলে জানিয়েছেন দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরামের নেতারা।
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিএনপি সমর্থক কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিক বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রকে অমান্য করে মালয়েশিয়ায় কয়েকজন আদম ব্যবসায়ী সুযোগ-সুবিধা নিতে চাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া কোন দেশেই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন না থাকলেও, এখানে মিছিল মিটিং করছেন তারা।
অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে শুরু করে মালয়েশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কমিটি দিয়ে যাচ্ছেন এই কয়েকজন। অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিত শ্রমিকদের কাছ থেকে রিঙ্গিত হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। ব্যবহার করছেন নিজেদের স্বার্থে।
ঢাকায় বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। আর নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী রাজনৈতিক দলের কোন বিদেশি শাখা থাকতে পারে না। তবে প্রবাসীরা বেশ কয়েকটি দেশে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন।
তারা বলেন, মালয়েশিয়ায় অবস্থানকারী বিএনপি সমর্থকরা ‘মালয়েশিয়া বিএনপি’ গঠন করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নিতে হবে।
আমাদের জানা মতে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিরা নাগরিকত্ব পান না। এবং সেখানে বিদেশিরা কোন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনও নিতে পারেন না।
দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় বসবাস করা একজন প্রবাসী বাংলানিউজকে বলেন, মালয়েশিয়ায় বিএনপি’র নামে যারা প্রভাব খাটাচ্ছেন, এদের সবার পেছনে আদম ব্যবসায়ীর ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে।
শুধু নিজেদের আদম ব্যবসার হাতকে প্রসারিত করতেই এ ধরনের সংগঠন তৈরি করা হয়েছে। মূলত কোতারায়া ও বাংলা মার্কেটেই মালয়েশিয়া বিএনপির মূল কার্যক্রম।
দেশে বিএনপি’র অবস্থান নড়বড়ে হলেও মালয়েশিয়ায় গ্রুপিং, মারামারির মাধ্যমে দলটির জন্যে বদনাম কুড়াচ্ছেন এই গুটি কয়েক লোক।
প্রবাসীরা জানান, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর ফাঁসির রায় হলে, কুয়ালালামপুরে এই তথাকথিত বিএনপি স্থানীয়দের ক্ষিপ্ত করে তোলেন।
ধর্মপ্রাণ মালয়দের প্রভাবিত করতে বলেন, বাংলাদেশে একজন ধর্মীয় নেতার ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে। সেই সময় মালয় নাগরকিদের নিয়ে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস ঘেরাওয়ে নেতৃত্ব দেয় এই বিএনপি।
মালয়েশিয়ায় বেশ কয়েকটি দল, উপদলে বিভক্ত এই নাম ভাঙ্গানো বিএনপি। এসব আদম ব্যবসায়ী নেতারা বেশিরভাগই স্থানীয় মালয় নারীকে বিয়ে করে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন।
মালয়েশিয়া বিএনপি’র কতগুলো ভাগ রয়েছে, তার সঠিক হিসেব বলা কঠিন। শহীদুল্লাহ গ্রুপ, মাহবুব গ্রুপ, মোশাররফ গ্রুপ, ইঞ্জিনিয়ার বাদল গ্রুপ- ইত্যাদি গ্রুপে তারা বিভক্ত।
বর্তমানে শহীদুল্লাহ শহীদুল স্থানীয় বিএনপির একাংশের প্রস্তাবিত সভাপতি ও মাহবুব আলম শাহ অপর অংশের আহবায়ক বলে নিজেদের দাবি করছেন। তবে এদের কারো কাছেই ঢাকার কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদনের কোন সনদ নেই। অথবা মালয়েশিয়াতেও কোন নিবন্ধন নেই।
এ সম্পর্কে একটি গ্রুপের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সালাহউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা কমিয়ে নিজের ব্যবসায় মনোযোগ দিচ্ছেন তিনি।
শুধু বিএনপির নামেই এ ধরনের অপকর্ম নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটানো হচ্ছে মালয়েশিয়ায়। ৫ মাস আগে কোকো স্মৃতি পরিষদ নামেও একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে!
এসব বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রি. জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বুধবার বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না। দলের মহাসচিব ভাল বলতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৫
জেডএম/