ঢাকা: ভিসা স্টিকারে ৬শ’ টাকা ফি লেখা থাকলেও মালয়েশিয়া ভিসার জন্যে ৫ গুণের বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে ভ্রমণকারীদের।
ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনের নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান ভিসা লুয়ার নেগারা (ভিএলএন) কৌশলে প্রতি ভিসা প্রতি ২ হাজার ৫শ’ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঢাকায় ভিনদেশি অন্য হাইকমিশনগুলোর মতোই মালয়েশিয়ার ভিসার জন্যে পাসপোর্ট জমা নেয়া এবং ডকুমেন্টেশনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানকে। তবে এ প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন এখন খোদ মনোনয়ন দেয়া এজেন্সিগুলোরই। গত ২ বছর ধরে ভিএলএন এভাবেই মানুষের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।
এছাড়া ভিসা প্রত্যাশীদের অভিযোগ, এই বছরের আগস্টের পর থেকে ভ্রমণের জন্যে কাউকে মাল্টিপল ভিসা দেয়া হয়নি। ফলে যারা ভ্রমণপিয়াসু তারা চাইলেও তিন বা চার মাসের মধ্যে একবারের বেশি মালয়েশিয়ায় যেতে পারছেন না। প্রয়োজন হচ্ছে বারবার ভিসা করার। এর ফলে লাভবান হচ্ছে ভিএলএন।
মালয়েশিয়ায় যেসব দেশ থেকে মানুষ ঘুরতে যায়, তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশিরা। মালয়েশিয়া ট্যুরিজমের উপ-পরিচালক মিজান রোডজি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জানান, ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে ৮৬ হাজার ৪৬৫ জন পর্যটক মালয়েশিয়া ভ্রমণ করেন। ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৬৩ জন। ২০১৪ সালেও এই সংখ্যা বেড়েছে। তবে ২০১৫ সালে এই সংখ্যা পড়ে গেছে বলে জানিয়েছে ট্রাভেল এজেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
ট্রাভেল এজেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, তারা নিজেরাও সরাসরি ভিএলএন’এ পাসপোর্ট জমা দিতে পারেন না। মালয়েশিয়ান হাইকমিশন থেকে ২৪টি ট্রাভেল এজেন্ট প্রতিষ্ঠানকে ভিসার জন্যে আবেদনের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তাদের মাধ্যমেই ভিএলএন’র কাছে ভিসার আবেদন জানাতে হয় ট্রাভেল এজেন্টদের। তবে বর্তমানে মনোনীত কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্ট প্রতিষ্ঠানকে অনিয়মের অভিযোগে বাদ দেয়াও হয়েছে বলে জানিয়েছেন সূত্র।
একজন পর্যটকের পাসপোর্ট মালয়েশিয়া হাইকমিশনের ভিসা শাখায় পৌঁছাতে ৪টি হাত বদল হতে হয়। আর খরচও পড়ে যায় অনেক বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মনোনীত এজেন্সির একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ৩ হাজার ১শ’ টাকা জমা দিতে হয় ট্যুরিস্ট ভিসার জন্যে। তবে ভিসা স্টিকারে ফি লেখা থাকে ৬শ’ টাকা।
মালয়েশিয়া ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে পর্যটকরা বেশি যান ভারত এবং থাইল্যান্ডে। এসব হাইকমিশনের মনোনীত ভিসা সেন্টারে টাকা জমা দেয়ার বুথ রয়েছে। তবে ভিএলএন’এ টাকা জমা দিতে হয় যে কোন ব্যাংকে ড্রাফটের মাধ্যমে। সেখানে আমরা ব্যাংক ড্রাফট করে ৩১০০ টাকা দেই।
এই এজেন্ট আরও জানান, থাইল্যান্ডের ভিসার জন্যে ৩ হাজার ৪শ’৪০ টাকা জমা দেয়া হয়, সেখানে ভিসা স্টিকারে ভিসা ফি লেখা থাকে ২ হাজার ৯শ’৯০ টাকা, আর ৪শ’৫০ টাকা মনোনীত ভিসা প্রতিষ্ঠানের ফি। বিষয়টি স্বচ্ছ। আবেদন করলে ডাবল এন্টি এবং মাল্টিপল এন্ট্রিও পাওয়া যায়। চাইলে গ্রাহকরা সরাসরি নিজেই পাসপোর্ট জমা দিতে পারেন।
অপরদিকে ভারতীয় ভিসার জন্যে জমা দিতে হয় মাত্র ৬শ’ টাকা। শহীদুল ইসলাম নামে একজন পর্যটক বলেন, ভারতের ভিসার জন্যে আমরা সরাসরি ভিসা সেন্টারে এসে পাসপোর্ট জমা দিতে পারি। তবে মালয়েশিয়ার ভিসার জন্যে ৪র্থ হাতে জমা দিতে হয় পাসপোর্ট। ফলে স্টিকারে ৬০০ টাকা লেখা থাকলেও এজেন্ট আমাদের কাছে থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকার নিচে নেন না।
এই সুযোগে কাজের লোভ দেখিয়ে মানুষ ভেদে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত আদায় করে প্রতারক চক্র।
এদিকে মাল্টিপল ভিসা বন্ধ করে দেয়ায় বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন নিয়মিত ভ্রমণ পিপাসুরা। এজেন্টদের অভিযোগ অতিরিক্ত আয়ের জন্যেই পর্যটকদের বারবার বিড়ম্বনার শিকারে পরিণত করছে ভিএলএন। প্রতিবারের ভিসার জন্যেই আড়াই হাজার টাকা করে নিচ্ছে তারা।
সূত্র জানায়, ভিএলএন’এর এই অসাধু কর্মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ঢাকায় মালয়েশিয়ার হাইকমিশনের কর্তাব্যক্তিরাও। ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে কয়েক হাজার টাকায় অযোগ্য ব্যক্তিদেরও ভিসা দেয়া হচ্ছে এখান থেকে।
তবে ঢাকায় মালয়েশিয়া হাইকমিশন বরাবরই গণমাধ্যম থেকে নিজেদের আড়াল করে রেখেছে। এ বিষয়ে হাইকমিশনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অভ্যর্থনা থেকেই ফিরিয়ে দেয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৫
এমএন/আরআই