কুয়ালালামপুর: মালয়েশিয়ায় অপহরণের আট দিন পর এক বাংলাদেশি শ্রমিককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি দেশটির সুবাং জায়া শহরের একটি দোকানে কাজ করতেন।
৩৯ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশিকে অপহরণ করে চার লাখ রিঙ্গিত (৬৮ লাখ টাকা) মুক্তিপণ দাবি করেন অপহরণকারীরা।
সুবাং জায়া পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার ইয়াহায়া রামলির বরাতে শনিবার (৩০ জানুয়ারি) মালয়েশিয়ার স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে এ তথ্য জানা যায়।
ইয়াহায়া রামলি জানান, গত ২২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশি ওই ব্যক্তিকে ইউএসজে-১৪ এলাকার একটি দোকান থেকে অপহরণ করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অপহৃতকে বহন করা নাম্বারবিহীন সাদা গাড়িতে দু’জন মালয়েশিয়ান নাগরিক ছিলেন।
অপহরণকারীরা অপহৃতের মোবাইল ব্যবহার করে বাংলাদেশে পরিবারে ফোন দেন। চার লাখ রিঙ্গিত মুক্তিপণ না দেওয়া হলে মেরে ফেলার হুমকিও দেন তারা।
রামলি আরও জানান, অপহৃতের স্ত্রী বাংলাদেশ থেকে ফোন দিয়ে মালয়েশিয়া অবস্থানরত এক আত্মীয়কে বিষয়টি জানান। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে থানায় পুলিশ রিপোর্ট দায়ের করলে সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশিকে উদ্ধারে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। এরই মধ্যে বাংলাদেশি ব্যক্তিকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে দেশ থেকে তার পরিবার অনলাইনের মাধ্যমে অপহরকারীদের কাছে ৩০ হাজার রিঙ্গিতও (৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা) পাঠান।
এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত গত ২৫ জানুয়ারি সেমেনিয়াহর একটি রেস্টুরেন্ট থেকে ২৩ বছর এবং ৩৩ বছর বয়সী দুই মায়ানমার নাগরিককে আটক করেছে। তবে এই দুই ব্যক্তি তাদের পরিকল্পনার বিষয়ে মুখ খোলেনি।
এছাড়া, বাতু কেভসের একটি হোটেল কক্ষ থেকে ৪২ বছর বয়সী এক মালয়েশিয়ানকেও আটক করা হয়েছে। পুলিশ ধারণা করছে, এই ব্যক্তি ওই আপহরণ চক্রের প্রধান। এই লোকটির বিরুদ্ধে আরও ছয়টি বাণিজ্যিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ তাকে খুঁজছিলো বলেও জানান রামলি।
তিনি বলেন, পুলিশ এ সময় তিনটি মোবাইল ফোন, অপহৃতের মানিব্যাগ, নগদ দুই হাজার রিঙ্গিত, একটি ভুয়া পরিচয়পত্র ও প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ভুয়া ব্যাজ জব্দ করে। পরিচয়পত্র এবং ব্যাজ আটক হওয়া মালয়েশিয়ান ব্যক্তিটি ব্যবহার করতেন।
গত ২৭ জানুয়ারি উলু ইয়ামে সুংগাই বাগানের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় অপহৃত বাংলাদেশিকে। এ সময় ১৯ বছর বয়সী এক মায়ানমারের নাগরিককেও আটক করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে এক বাংলাদেশি ও মায়ানমারের দুষ্কৃতকারী পালিয়ে যায়।
সুবাং পুলিশের এই সহকারী কমিশনার আরও জানান, অপরাধে জড়িত থাকায় পুলিশ শাহ-আলমের জালান তেরাতাই উতামা থেকে ২৭ বছর বয়সী একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারকেও আটক করেছে। দুষ্কৃতকারীদের কাছ থেকে মুক্তিপণের ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত মাসে গেন্টিং হাইল্যান্ডের জঙ্গলে অপহরণের শিকার দুই বাংলাদেশির মৃতদেহ পাওয়া যায়। সেখানে একজনের পরিবার বাংলাদেশ থেকে ২৭ হাজার (৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা) রিঙ্গিত পাঠিয়েছিলেন মুক্তিপণের। তবে অপহরণকারীদের দাবি ছিল ৫০ হাজার রিঙ্গিত (নয় লাখ টাকা)। পরে ২০ ও ২৯ বছর বয়সী ওই দুই বাংলাদেশিকে মেরে জঙ্গলের গিরিখাতে ফেলে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
এমএন/টিআই