ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

ফের ঢাকায় ঢুকতে মরিয়া কালো তালিকার লিংকন

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৩ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৬
ফের ঢাকায় ঢুকতে মরিয়া কালো তালিকার লিংকন

কুয়ালালামপুর থেকে ফিরে: নিয়ম নীতি না মেনে কোটার অতিরিক্ত বিদেশি শিক্ষার্থী  মালয়েশিয়ায় নেওয়ার অপরাধে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে লিংকন ইউনিভার্সিটিতে। ২০১৫ সালের প্রথম মাসেই এই প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়।



কিন্তু ফের নতুন করে ঢাকা থেকে শিক্ষার্থী নেয়ার কোটা চালুর জোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে ভিসা ব্যবসার এই কথিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে শ্রীলংকা এবং নেপাল থেকে শিক্ষার্থী নিতে শুরু করেছে তারা। বর্তমানে কুয়ালালামপুরে এই দুই দেশের দালালদের বেশ সক্রিয় দেখা গেছে।

কলেজ সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশি শিক্ষার্থী নিতে পুনরায় কেডিএন অনুমোদন পাওয়ার জন্য বেশ তোড়জোড় শুরু করেছে লিংকন ইউনিভার্সিটি। বর্তমানে ক্লাসে উপস্থিত না থাকলেও সপ্তাহে ১ বা ২ দিন গিয়ে স্বাক্ষর করে আসতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তবে আদতে কোন ক্লাস সেখানে হচ্ছে না। কার্যত ক্লাস করার মতো কক্ষই নেই তাদের।  

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ফাইল আটকা পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।

এমন পরিস্থিতিতে ২০১৬ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি কালো তালিকা থেকে মুক্ত হচ্ছে বলে বিভিন্ন দেশে প্রচারণা চালিয়ে আসছে চিহ্নিত কিছু এজেন্ট। যদিও ইউনিভার্সিটি সূত্র জানিয়েছে, এ বছরও কালো তালিকাভুক্ত থাকছে প্রতিষ্ঠানটি। তাই এই প্রতিষ্ঠানের নামে কেউ ভিসার লোভ দেখালে সেটি প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ বছর না হলেও ২০১৭ সালের শুরু থেকে আবারো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আনার বৈধতা প্রাপ্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে লিংকন ইউনিভার্সিটি। এই চেষ্টার অংশ হিসেবে গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে এক ছাত্রনেতাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।

এসময় লিংকন ইউনিভার্সিটি কলেজের প্রো চ্যান্সেলর দাতো ড. বিবি ফ্লোরিনা আব্দুল্লাহর সঙ্গে ওই ছাত্রনেতার সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়া হয়। কলেজটির এশিয়া বিষয়ক পরিচালক বাংলাদেশের এস এম জহিরুল ইসলাম সবুজ পুরো পরিকল্পনাটির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এর মাধ্যমে লিংকন ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর চাহিদার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূলত শিক্ষার্থীর নামে শ্রমিক আনার কাজে ব্যবহৃত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। বাংলাদেশ থেকে গত অর্ধযুগ ধরেই মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থীর নামে শ্রমিক পাঠানোর এজেন্টদের প্রথম পছন্দের তালিকায় ছিল লিংকন ইউনিভার্সিটি। ভুয়া সার্টিফিকেট, কাগজপত্র জমা দিয়েও ভর্তি করানো হয় এখানে। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র য়ে মালয়েশিয়ায় এলেও অনেক শিক্ষার্থী কখনোই এর ক্যাম্পাসে পা রাখেন না। গত এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহেও এই কলেজের ভিসা নিয়ে কাজ করতে যাওয়া প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।

বলা হয়ে থাকে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে যতো বিদেশি শিক্ষার্থী এনেছে লিংকন, তারা সত্যিকারের শিক্ষার্থী হলে তাদের ক্লাসের জন্য স্টেডিয়াম নেগারা ভাড়া নিতে হতো।  

প্রতারণার শিকার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ দমনে ইতিমধ্যে কলেজটিতে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশি এক ছাত্রসংগঠনের কমিটি। ওই কমিটির নেতা হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দমিয়ে রাখছে সুবিধালোভীরা।  

সরেজমিন দেখা যায়, কেলানা জায়া এলআরটির পাশে সেলানগড়ে পেটালিং জায়ায় মায়াং প্লাজায় একটি ফ্লোরে গড়ে উঠেছে লিংকন ইউনিভার্সিটি। সেখানেই কয়েকটি লোক দেখানো ক্লাসরুম আর অফিস নিয়ে চলছে জমজমাট শিক্ষার্থী ব্যবসা। কলেজটিতে ক্লাস রুম না থাকলেও রয়েছে বড় পরিসরে ভিসা সেন্টার। ক্লাসরুমে শুধু স্বাক্ষর করেই চলে যান শিক্ষার্থীরা। বেরিয়ে পড়েন কাজে।

শুধু শ্রমিক নন, এজেন্টদের প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক শিক্ষার্থীও এই নামকাওয়াস্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে রয়েছেন ঝুঁকিতে।

বাংলাদেশের একজন শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থী না এলেও এখনো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে কলেজটি। কারণ প্রতি সেমিস্টারে আমাদের পুন:ভিসা নবায়নের জন্যে ৬ থেকে ৭ হাজার রিঙ্গিত করে খরচ দিতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬১১ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৬
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ