কুয়ালালামপুর থেকে: খোলা ছাদের রেলিং ঘিরে গাছগাছালি। ফুটে আছে লাল গোলাপ আর সাদা বেলী।
এ বিবরণ মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের ব্যস্ত এলাকা জালান পুডুতে গড়ে ওঠা মার্ক হোটেলের রুফ টপ রেস্টুরেন্টের। এখানে বসলে হাইরাইজের ফাঁকফোকর গলে নজরে আসে কসমোপলিটান সিটি কুয়ালালামপুরের নিরন্তর ব্যস্ততা।
হোটেলটির ঠিক বিপরীতেই রাস্তার ওপারে কুয়ালালামপুরের সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল পুডু সেন্ট্রাল। পূর্ব দিকে বিখ্যাত বুকিত বিনতাং মাত্র মিনিট পাঁচেকের হাঁটা পথ। পশ্চিম দিকে কেনাকাটার স্বর্গ হিসেবে পরিচিত চায়না টাউনের দূরত্ব তিন মিনিটের বেশি নয়। উত্তরে মিনিট দশেক হাঁটলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে কুয়ালালামপুরের আইকন হয়ে ওঠা পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার। তার আগে বাঙালি অধ্যুষিত কোতারায়া।
২৪ ঘণ্টাই ট্যাক্সি পাওয়া যায় মার্ক হোটেলের সামনের মোড় থেকে। মাথার ওপর দিয়ে ছুটে চলা এলআরটি (লাইট রেল ট্রানজিট), ছাদ খোলা হুপ অন হুপ অফ আর কেটিএম রেলের স্টেশনও খুব একটা দূরে নয়।
এমন অবস্থানে গড়ে ওঠা মার্ক হোটেলের তাই পর্যটকদের পছন্দের নাম হয়ে উঠতে সময় লাগেনি। ২০১৩ সালের ১৫ জুন যাত্রা শুরুর পর তিন বছর পেরুনোর আগেই তাই বাংলাদেশি আবহে কুয়ালালামপুরে জাঁকিয়ে বসেছে হোটেল মার্ক। থ্রি স্টার মানের এই হোটেলটিতে আরো আসছেন অস্ট্রেলিয়া আর ইউরোপের পর্যটকও।
এ নামে আরো একটি আবাসিক হোটেল আছে অস্ট্রেলিয়ায়। মূলত ওটাই মার্ক এর মাদার হোটেল। সেখান থেকে মালয়েশিয়াতে এর শাখা খুলে কঠিন চ্যালেঞ্জ জয় করে নিয়েছেন ম্যানেজার অপারেশন নাহীদুল হক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে মূলত টেলকো আর ফার্মাসিউটিক্যালসে ক্যারিয়ার গড়ছিলেন স্বপ্নের এই কারিগর। সেখান থেকে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাত্র বছর চারেক আগে আসেন কুয়ালালামপুরে। তারপর স্বপ্বের পসরা বিছিয়ে এখন গোটা বাংলাদেশকেই করতে চাইছেন তার স্বপ্নের সঙ্গী। হতাশার ভেতরেও আশা ফোটানোর দুরূহ কাজে নিজ গুণে সফল হতে চান তিনি।
তাই বলেন, মালেয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের প্লেন দুর্ঘটনার পর ট্যুরিস্ট কমে গেছে মালয়েশিয়ায়। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ট্যুরিস্ট আসছে এখানে।
প্রতিদিন মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ৩টি ফ্লাইট আসছে ঢাকা থেকে। এছাড়া বাংলাদেশ বিমান, মালিন্দো, রিজেন্ট আর ইউনাইটেড’র ফ্লাইট আসছে নিয়মিত। আগামী আগস্টে চালু হচ্ছে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট।
তিনি বলেন, যেখানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রিটার্ন টিকিটের জন্য ১৪ হাজার টাকা গুণতে হয়, সেখানে ২১ হাজার টাকায় মানুষ কেনো মালয়েশিয়া কেনো আসবে না? ঠিকঠাক প্রচারণা চালাতে পারলে বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়াতেই ছুটবে।
নাহীদুল হকের এই স্বপ্ন জয়ের প্রেক্ষিতটাও কিন্তু তৈরি হয়েই আছে। তুলনামূলক কম প্লেন ভাড়া, বাংলাদেশের চেয়ে সস্তা খাবার আর আবাসিক সুবিধা তার এই স্বপ্ন বুননে সহায়ক হচ্ছে। সারাবছর একই রকম উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়া বিরাজ করায় বছরজুড়েই পর্যটন মৌসুম ধরা হয় এখানে। দেশটিতে ছড়িয়ে আছে হাজারেরও বেশি ট্যুরিস্ট-স্পট। প্রতিটিই আলাদা, বৈচিত্র্যপূর্ণ। একটির চেয়ে আর একটি আলাদা। তারওপর প্রতিনিয়ত ফুলেফেঁপে উঠতে মেডিকেল ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি।
এমন সম্ভাবনার দেশে কিন্তু বাংলাদেশিরাই টার্গেট মার্ক হোটেলের। জনসংখ্যার বিচারে বাংলাদেশিরা এখন মালয়েশিয়ার পঞ্চম বৃহত্তম কমিউনিটি। সব মিলিয়ে এখানে বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা ১৬ লাখেরও বেশি। তাই বাংলাদেশিদের নিয়েই স্বপ্ন দেখছেন নাহীদুল হক। বাংলাদেশিদের নিয়ে মালয়েশিয়া জয়ের স্বপ্ন তার।
তার মার্ক হোটেলে মোট ৪৪টি রুমে শতাধিক অতিথির থাকার ব্যবস্থা আছে। রুমগুলো চার ক্যাটাগরিতে ভাগ করা। ন্যুনতম সুযোগ-সুবিধা সংবলিত রুমের নাম মার্ক অ্যাসেনশিয়াল। এছাড়া আছে মার্ক সুপেরিয়র, মার্ক ডিলাক্স ও মার্ক প্রিমিয়ার। রুম ভাড়া ১শ’ থেকে ১৮০ রিঙ্গিতের (১ রিঙ্গিতে ২০ টাকা) মধ্যে। হোটেলে চেক ইন টাইম দুপুর ২টা। চেক আউট বেলা ১২টা। আর অধিকাংশ স্টাফই বাংলাদেশি নজরকাড়া ইন্টেরিয়রে সাজা মার্ক হোটেলে।
**অন টাইমে রিজেন্টে উড়ে মালয় দ্বীপে
**মালয়েশিয়া থেকে খবর দিচ্ছেন বাংলানিউজের জাকারিয়া মণ্ডল
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৬
আইএ/জেডএম/