কুয়ালালামপুর থেকে: চীন সাগরের ওপরে মেঘের দাপট। সেই মেঘের দল ঠেকিয়ে রেখেছে সকালের সূর্যটাকে।
বিমানবন্দর থেকে রাজধানী কুয়ালালামপুর পর্যন্ত পুরো পথটাতে মেঘের পেছনে তড়পালো সূর্যটা। তার সামনে বাগড়া দিয়ে রইলো পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ। কখনো পাহাড় হলো। কখনো ভেলা বা সাদা চাদরের রূপ নিলো মেঘের দল।
এই না দেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মাসুদ রানা বললেন, এই যে একটা দেশ, এখানে প্রতিদিনই বৃষ্টি আসে। এখানকার আবহাওয়া ভালো। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না।
তবে ক্ষতিকর না হলেও এই সাত সকালেই তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ঝুলে রইলো। সাড়ে ৮টা নাগাদ মেঘ সরিয়ে আকাশ দখলে নিলো সূর্যটা। তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বেড়ে ২৮ ডিগ্রিতে স্থির হলো। এই তাপমাত্রাকে কিছুতেই শরীর পোড়ানো গরম বলা যাবে না। কিন্তু ভ্যাপসা গরমে অবিরাম ঘাম ছুটলো শরীরে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ সেই ঘাম কমাতে পারলো না।
বেলা বেড়ে দুপুর হলো, দুপুর গড়িয়ে বিকেল এলো। বিকেল শেষে রাত। কিন্তু তাপমাত্রা যেনো ২৮ ডিগ্রি থেকে নামবে না বলে পণ করেছে।
যদিও সন্ধ্যা গড়ানোর পর দিনের সেই ঘাম ঝরানো গরমটা আর টের পাওয়া যায়নি। আর সারাসময়ই পশ্চিম থেকে প্রবাহিত বাতাস শরীর জুড়িয়ে দিয়েছে। রাতে তা উপভোগ্য হয়ে উঠলো আরও।
সারা সময়ই চাঁদ ঝুলে রইলো মাথার ওপরে। বাংলাদেশে যেমন একেক সময় একেক দিকে চাঁদের উপস্থিতি চোখে পড়ে, এখানে তেমন নয়। এখানে চাঁদ খাড়া রইলো ঠিক মাথার উপর অনেকটা সোজাসুজি। কখনো পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, কখনোবা মিনারা কুয়ালালামপুরের সুচালো মাথার ওপরে চাঁদের উপস্থিতি দেখা গেলো। মনো হলো, যেনো কুয়ালালামপুরের সব সুউচ্চ অট্টালিকাই মাথার ওপর চাঁদ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এই রোদ, বৃষ্টি, মেঘলা দিন আর মেঘের ফাঁকে চাঁদ-সূর্যের লুকোচুরি বছরভরই বিরাজ করে এশীয় ভূ-খণ্ডের সর্বদক্ষিণ প্রান্ত মালয় উপদ্বীপের আকাশে।
গ্রীষ্ম আর বর্ষার মিশেলে এই দেশটি তাই এক ঋতুর। আর এই এক ঋতুর ফাঁদেই জমে উঠেছে পর্যটন। সারাবছরই পর্যটক আসে এখানে।
মূলত গোটা মালয়েশিয়া নিরক্ষ রেখার খুব কাছে হওয়াতেই এমন আবহাওয়া। এখানে পরিষ্কার আকাশের পূর্ণদিন পাওয়া যায় না বললেই চলে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দমিয়ে রাখে রোদের দাপট। দিনে গড়ে ৬ ঘণ্টা রোদ হাসে মালয়েশিয়ায়। উপদ্বীপের উত্তরে কেদাহ রাজ্যের রাজধানী আলোর সেতার আর উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে কেলানটান রাজ্যের রাজধানী কোটাহ বাহরুতে দিনে গড়ে ৭ ঘণ্টা হাসে সূর্য। আর পূর্ব মালয়েশিয়ার কুচিংয়ে সূর্যের হাসি দেখা যায় গড়ে ৫ ঘণ্টা করে। তবে জানুয়ারিতে দিনে গড়ে ৩.৭ ঘণ্টার বেশি রোদ থাকে না কুচিংয়ে। একই মাসে দিনে ৮.৭ ঘণ্টা রোদ হাসে আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার ড. মাহাথির মোহাম্মদের শহর আলোর সেতারে।
বলা চলে, সারাবছরই উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজ করে মালয়েশিয়ায়। আবহাওয়ার বড় ধরনের পরিবর্তন বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ খুব একটা হয় না। বড় জোর অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা ভোগায় সাময়িকভাবে। তবে এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট টাইফুন ফিলিপাইন পেরিয়ে আসে পূর্ব মালয়েশিয়ায়।
মালয় উপদ্বীপে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১শ’ ইঞ্চি বা ২৫০ সে.মি.। তবে পূর্ব মালয়েশিয়া বা সাবাহ ও সারাওয়াকে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১৫০ ইঞ্চি বা ৩৮০ সেন্টিমিটার।
দিনে গড় তাপমাত্রা থাকে ৩০ ডিগ্রি সে. এর মত। আর রাতে ২২ ডিগ্রি সে. এর মত। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মালয়েশিয়ার প্রায় পুরোটা জুড়েই নিবিড় বৃষ্টি অরণ্য। তবে উপকূলবর্তী এলাকার তাপমাত্রা ২১ থেকে ৩২ ডিগ্রি। পর্বত এলাকার তাপমাত্রা ১৩ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ক্যামেরন হাইল্যান্ডসে তাপমাত্রা সবচেয়ে কম।
দেশটির জলবায়ুতে মূলত উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর শাসন। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রবাহিত হয় উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু। এই বায়ু প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। প্লাবন সৃষ্টি করে মালয় উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলে। তৈরি হয় ঘন ঘন ব্যাপক বন্যা। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রবাহিত হয় মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ সময় গোটা দেশে তাই তুলনামূলক শুকনো মৌসুম। তবে বৃষ্টি যে কখন এসে পড়বে তা বলা মুশকিল।
পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের আন্দামান সাগর ও মালাক্কা প্রণালী এবং পূর্বে থাই সাগর ও দক্ষিণ চীন সাগরের বেড়ে শুয়ে থাকা মালয় উপদ্বীপের দক্ষিণে জোহর বা সিঙ্গাপুর প্রণালী। মোটামুটি ১৩ ডিগ্রি ২৩ ইঞ্চি থেকে ১ ডিগ্রি ২২ ইঞ্চি উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১২শ’ কিলোমিটার লম্বা। প্রস্থের বিস্তৃতি সর্বোচ্চ ৩২০ কিলোমিটার। এই উপদ্বীপের উত্তরের অংশ মায়ানমার ও থাইল্যান্ডের অংশ।
এই উপদ্বীপের উত্তর-দক্ষিণ বরাবর একটি বিচ্ছিন্ন পর্বতমালা বিস্তৃত।
পূর্ব মালয়েশিয়ার উত্তর-পশ্চিমে দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্বে সেলেব সাগর ও সুলু সাগর। ওই অংশটির অবস্থান বোর্নিও দ্বীপে।
থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই এর সঙ্গে স্থল সীমান্ত আছে মালয়েশিয়ার। সমুদ্র সীমানা আছে ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে। দেশটির উপকূল রেখার মোট দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৬৭৫ মিটার। দক্ষিণ চীন সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ পূর্ব ও পশ্চিম মালয়েশিয়াকে আলাদা করে রেখেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৬ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৬
জেডএম/
**বাংলাদেশি আবহে জাঁকিয়ে বসেছে হোটেল মার্ক
**অন টাইমে রিজেন্টে উড়ে মালয় দ্বীপে
**মালয়েশিয়া থেকে খবর দিচ্ছেন বাংলানিউজের জাকারিয়া মণ্ডল