কুয়ালালামপুর থেকে: মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন কাজ করার পর দেশে ফিরে বেকার হয়ে পড়ছে বাংলাদেশি শ্রমিকরা। দীর্ঘ সময়ের শ্রমে-ঘামে পাওয়া অভিজ্ঞতা আর দক্ষতা কাজে লাগানোর সুযোগই পাচ্ছে না তারা।
কার্যত, মালয়েশিয়া আর বাংলাদেশের শ্রমখাতের চরিত্র এক না হওয়ায় এমনটি ঘটছে। কর্মক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শ্রমিকদের কাজগুলোকে ১০ ভাগে ভাগ করলে ৭টিরই পেশা হিসেবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বাংলাদেশে।
এখনো মালয়েশিয়ায় অধিকাংশ শ্রমিক কাজ করছে পামওয়েল আর রাবার প্ল্যান্ট, মেটাল, মেনুফ্যাকচারিং, হাই স্কিলড স্পেসিফিক ওয়ার্ক, তেল-গ্যাস ও রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু বাংলাদেশে এসব খাতে কাজের কোনো সুযোগই নেই।
বাংলাদেশে নেই পামওয়েল আর রাবার বাগান। মালয়েশিয়াতে হয়তো হাই স্কিলড স্পেসিফিক কাজের আওতায় কাউকে দিয়ে একই ধরনের কাজ করানো হচ্ছে। মোবাইল হ্যান্ডসেটে যে ক্রু সাঁটছে, দিনের পর দিন তাকে থাকতে হচ্ছে ওই কাজেই নিয়োজিত। ওই শ্রমিকের কাছে তাই পুরো হ্যান্ডসেট অ্যাসেম্বলিং এর জ্ঞান নেই। দেশে ফিরে ওই অভিজ্ঞতার কোনো মূল্যই পাচ্ছে না সে। মেটাল আর মেনুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ এর অবস্থাও তথৈবচ। একই অবস্থা রিসাইক্লিংয়ে। আর তেল-গ্যাস কোম্পানিতে যে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে সে সুযোগও নেই।
মেসেজ পার্লার আর বারে যারা কাজ করছে তারাও দেশে ফিরে কোনো কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। কেননা বাংলাদেশে অর্থনীতিতে এসব খাত নিয়ে চিন্তা-ভাবনার বাস্তবতাই নেই।
বাংলাদেশে চাইলেই যেমন মেসেজ পার্লার বসিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই, তেমনি চাইলেই একটা মোবাইল কারখানা খুলে লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান করাও কঠিন।
আর নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে যে দিনে ১ হাজার টাকা আয় করছে, দেশে ফিরলে তাকে ওই টাকায় কাজে রাখবে না কোনো ঠিকাদারই।
এখানে ১০ বছর বাবুর্চির কাজ করেও তাই কেচো গন্ডুস করতে হচ্ছে ভাগ্য বিড়ম্বিত শ্রমকিদের। অন্য দেশে শেফ এর চাকতি পাওয়ার জন্য কোনো সনদ বা স্বীকৃতিও জুটছে না তাদের কপালে।
যদিও রেস্টুরেন্টের মতো সার্ভিস সেক্টরে কিছু কিছু কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। তারা রপ্ত করছে ক্লায়েন্ট সামলানোর দক্ষতা। ক্লিনারের কাজ করে বুঝতে শিখছে কোথায় কোন কেমিকেল ব্যবহার করতে হবে, কতোটুকু দিতে হবে। কিন্তু দেশে ফিরে স্বল্প বেতন আর সামাজিক মর্যাদার বিচার যে ওই কাজ চালিয়ে অসম্ভব তারে পক্ষে।
২ মাস জেল খাটার পরও তাই দেশে ফিরে ফের মালয়েশিয়াতেই ফিরে এসেছেন লক্ষ্মীপুরের রামগতির ইসমাইল হোসেন। রেস্টুরেন্ট খুলেছেন মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায়। কাজের জন্য দেশে ফেরার কথা এখন আর ভাবতেই পারেন না তিনি।
কিন্তু এ অবস্থা থেকে বের হওয়া দরকার। গড়ে তোলা দরকার বিদেশ ফেরত শ্রমিকদের অভিজজ্ঞতা কাজে লাগানোর উপযোগী শিল্পখাত।
শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা এনজিও মাইগ্র্যান্ট-৮৮ এর নির্বাহী পরিছালক আশিকুর রহমানের বিবেচনায়, এখন আর শুধু রেমিটেন্সের মধ্যে পড়ে থাকলে চলবে না। জাতীয় স্বার্থের কথাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদেশে যাওয়ার জন্য অনেক ট্রেনিং করানো হয়। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার পর দেশে ফেরত এলে তারা কি করবে তা শেখানো হয় না। মোদ্দাকথা, একটা সময় উপযোগী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অবশ্য অবশ্যই দরকার বাংলাদেশে।
লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে না এসে দেশের ভেতরওই ওই টাকা বিনিয়োগের পরামর্শও দেন আশিকুর।
কেননা, বিদেশ যারা কাজ করতে যান তাদের অধিকাংশই শিক্ষা-দীক্ষায় বেশ পিছিয়ে। তাই তাদের অধিকাংশই দেশে ফিরলে বেকার জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
***মালয়েশিয়ায় জেঁকে বসতে পারে বাংলাদেশ
***টিনঘেরা চৌহদ্দিতে ক্রীতদাস জীবন!
***লজ্জা নয় ওরা অহংকার
***মেডিকেল ট্যুরিজমের পালে হাওয়া মালয়েশিয়ায়
*** বাংলাদেশি পরিচয়েই যতো লজ্জা!
***এক ঋতুর দেশে
**বাংলাদেশি আবহে জাঁকিয়ে বসেছে হোটেল মার্ক
**অন টাইমে রিজেন্টে উড়ে মালয় দ্বীপে
**মালয়েশিয়া থেকে খবর দিচ্ছেন বাংলানিউজের জাকারিয়া মণ্ডল
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৬
জেডএম/