ঢাকা: দিন দিন ফুলেফেঁপে উঠছে মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থী পাচারের ব্যবসা। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের কাছে ভিসা বিক্রি করে কিছু প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিচ্ছে মেটা অংকের টাকা।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা বলছেন, মালয়েশিয়া সরকার এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে আরো ৪টি নতুন চালু হয়। যারা আরো বেশি শিক্ষার্থী পাচার করে এ দেশে নিয়ে আসে।
এ ধরনেরই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম 'ইয়েস একাডেমি'। যেখানে বর্তমানে কয়েকশ’ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত পার্ট টাইম চাকরি এবং উচ্চ শিক্ষার কথা বলেই তাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। যে দুটোর একটিও এখানে পাওয়া সম্ভব নয়। তবে সম্ভব হোক আর না হোক, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে শিক্ষার্থী পাচার থেমে নেই। আর কুয়ালালামপুরে এই প্রতিষ্ঠানের সোল এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন মাসুদ রানা নামে একজন বাংলাদেশি।
তার প্ররোচনায় পড়ে প্রতারিত একজন ছাত্র হলেন কুমিল্লার রাজিব। তিনি ২০১৫ সালে একজন আত্মীয়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার খবর পান। তার মাধ্যমেই পরিচয় মাসুদ রানার সঙ্গে। কুয়ালালামপুরের ইয়েস একাডেমির মাধ্যমে কম খরচে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মাসুদ রানা। একই সঙ্গে সেখানে পৌছার পর পার্ট টাইম চাকরির সুবিধা রয়েছে বলে প্রলোভন দেখান।
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রাজিবকে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় পাঠান তার বাবা-মা।
মালয়েশিয়ায় পৌছে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় রাজিবের। টুইন টাওয়ারের পাশে ইয়াপ কাওয়ান সেংয়ের মেগান এভিনিউ ২ এর ব্লক সি এর ৫ম তলায় এই ইয়েস একাডেমি। ৩ টি কক্ষ মিলে এই একাডেমি। আর এখানে রয়েছে শুধুই নামসর্বস্ব সার্টিফিকেট কোর্স।
রিসিপশন ছাড়াও রয়েছে একটি অফিস কক্ষ ও একটি ক্লাসরুম এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানের বসার রুম। অফিসেই শিক্ষার্থীদের ভর্তির কাজ ও অন্যান্য কাজ করে দেয়া হয়। ক্লাসরুমটিতে এসে সিগনেচার করে যায় শিক্ষার্থীরা। কোনো ক্লাস করার দরকারই হয় না।
নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমানের অভিযোগ, এখানে এসিসিএ করার কথা বলে তাকে কুয়ালালামপুর নিয়ে আসেন মাসুদ রানা। তবে এখানে এসে দেখতে পান, কোন ক্লাস নেই। শিক্ষার্থী ভিসায় যারা আসেন তারা মূলত কাজ করতেই আসেন।
এসব শিক্ষার্থীর অভিযোগ, মালয়েশিয়ায় আসার পর আর সাহায্য করেন না মাসুদ রানা। বরং তার দেখা পাওয়াই ভার হয়ে ওঠে।
আব্দুর রহমান বলেন, সাহায্যের জন্যে মাসুদ রানার লো-ইয়াটের দোকানে বেশ কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখেন। কিন্তু কোন সাহায্য করেন না।
সূত্র জানায়, এরই মধ্যে শিক্ষার্থী পাচারের টাকায় টাইম স্কয়ারেও একটি দোকান দিয়েছেন মাসুদ রানা। তবে তার ব্যবসার মূল অর্থের যোগান আসে ইয়েস একাডেমি থেকেই।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৬
এমএন/জেডএম