মালয়েশিয়া ঘুরে: মালয়েশিয়ায় নেমে এয়ারপোর্ট থেকে বাস, ট্রেন বা ট্যাক্সিতে সহজেই পৌছে যেতে পারেন রাজধানী কুয়ালালামপুরে। গণপরিবহনে যেতে না চাইলে কার ভাড়া করে নিজেই নিতে পারেন চালকের ভূমিকা।
নামে কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট হলেও এর অবস্থান মালয় উপদ্বীপের দক্ষিণ করিডোরে সেলানগর ও নাগেরি সেমবিলান রাজ্যের সীমান্তে, সেপাং জেলায়। রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার।
এখানে পাশাপাশি দুই এয়ারপোর্ট। প্রথমটি কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট (কেএলআইএ)। দ্বিতীয়টি কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট-২ (কেএলআইএ-২)। দু’টি এয়ারপোর্টের মধ্যবর্তী দূরত্ব ২ কিলোমিটারের বেশি নয়। এয়ারপোর্ট দু’টির অবস্থান মূলত মালয়েশিয়ার বিখ্যাত ৪ শহর কুয়ালালামপুর, শাহ আলম, সেরেমবান ও মালাক্কার মধ্যবর্তী স্থানে।
মূলত ‘বনে এয়ারপোর্ট, এয়ারপোর্টে বন’ ধারণাকে সামনে রেখে সেপাং জেলায় এই দুই এয়ারপোর্ট নির্মাণ করে মালয়েশিয়া সরকার। দেশটির ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় সবুজে ঘেরা এয়ারপোর্ট দু’টির সৌন্দর্যও অতুলনীয়। ২০১৪ সালের ২ মে চালু হওয়া কেএলআইএ-২ তে মূলত ফ্লাইট পরিচালনা করে এয়ার এশিয়া, এয়ার এশিয়া এক্স ও টাইগার এয়ারওয়েজ এর মতো বাজেট এয়ারলাইন্স। আর সব এয়ারলাইন্সের হাব হলো ১৯৯৮ সালের ২৭ জুন চালু হওয়া কেএলআইএ।
কেনাকাটা, বিনোদন আর অবসরযাপনের সব উপকরণই বিছিয়ে রাখা হয়েছে কুয়ালালামপুরের এ দুই এয়ারপোর্টে। আছে বিশ্বের বিভিন্ন নামি ব্র্যান্ডের পণ্য দিয়ে সাজানো অত্যাধুনিক সব শপিং মল।
বাসেই খরচ কম
সবচেয়ে কম খরচে কুয়ালালামপুর যেতে উঠে পড়ুন বাসে। কেএলআইএ থেকে বিভিন্ন কোম্পানির বাস ছাড়ে। সব বাসই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এখান থেকে এক্সপ্রেস কোচে কেএল সেন্ট্রাল যেতে ভাড়া পড়বে মাত্র ১০ রিঙ্গিত (১ রিঙ্গিতে ২০ টাকা)। শিশুদের ভাড়া ৬ রিঙ্গিত। স্টার শাটলে পুডু সেন্ট্রালে যেতেও একই ভাড়া পড়বে। তবে ১৮ রিঙ্গিত দিলে বাস কোম্পানিই আপনাকে পৌছে দেবে হোটেল পর্যন্ত।
একইভাবে কম খরচে কেএলআইএ২ থেকে কুয়ালালামপুর যেতে হলে বাসই সবচেয়ে ভালো বিকল্প। এয়ারপোর্ট ভবন থেকে বাইরে পা ফেলেই বিভিন্ন কোম্পানির বাসে চড়ার সুযোগ আছে এখানে। তবে একেক বাসের গন্তব্য রাজধানীর একেক এলাকা। যেমন কাছের কমিউটার স্টেশনে যাওয়ার জন্য আছে এয়ারপোর্ট লাইনার ও সিটি লাইনার। টার্মিনাল বারসিপাডু সেলানটানে (টিবিএস) যাবে জেটবাস। কেএল সেন্ট্রাল ও উতামা শপিং সেন্টার যাবে স্কাইবাস। পুডুরায়া ও জালান ইপোহ যাবে স্টার শাটল। বাসে চড়ে এয়ারপোর্ট থেকে রাজধানীতে যেতে সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। পিক আওয়ার, মানে অফিস আওয়ার শুরু ও শেষ হওয়ার সময় হলে ট্রাভেল টাইম বাড়বে।
সময় কম লাগে ট্রেনে
এয়ারপোর্ট থেকে কুয়ালালামপুর যাওয়ার আর একটি আরামদায়ক বাহন হলো ট্রেন। গেটওয়ে ভবনের লেভেল ২তে স্টেশন। কেএলআইএ এক্সপ্রেস ও কেএলআইএ ট্রানজিট চলাচল করে এয়ারপোর্ট থেকে কেএল সেন্ট্রাল পর্যন্ত। বিরতিহীন কেএলআইএ এক্সপ্রেসে কেএল সেন্ট্রাল যেতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। এই ট্রেনের একমাত্র স্টপেজ কেএলআইএ-১। আর কেএলআইএ ট্রানজিট ট্রেন থামে কেএলআইএ১, সালাক টিগ্গি, পুত্রাজায়া সেন্ট্রাল ও বন্দর তাসিক সেলানটানে। সময় লাগে ৩৮ মিনিট।
ট্রেনের ওয়ানওয়ে ভাড়া ৫৫ রিঙ্গিত, শিশুদের ২৫ রিঙ্গিত। রিটার্ন টিকিটের ভাড়া ১০০ রিঙ্গিত ও ৪৫ রিঙ্গিত।
পিক আওয়ারে প্রতি ১৫ মিনিট ও অফ পিক আওয়ারে প্রতি ২০ মিনিট অন্তর ছাড়ে কেএলআইএ এক্সপ্রেস। দিনের প্রথম ট্রেনটি কেএল সেন্ট্রাল ছাড়ে ভোর ৫টায়। কেএলআইএতে পৌছে সাড়ে ৫টায়। কেএলআইএ২ এ পৌছে ৫টা ৩৩ মিনিটে। দিনের শেষ ট্রেনটি কেএল সেন্ট্রাল ছাড়ে রাত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে। রাত ১টা ১০ মিনিটে কেএলআইএতে থেমে এটি ১টা ১৩ মিনিটে কেএলআইএ২ তে পৌছায়।
কেএলআইএ২ থেকে দিনের প্রথম ট্রেনটি ছাড়ে ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে। ৫টায় কেএলআইএতে স্টপেজ দিয়ে এটি ৫টা ২৮ মিনিটে কেএল সেন্ট্রালে পৌছে। শেষ ট্রেনটি কেএলআইএ২ ছাড়ে রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে। রাত ১টায় কেএলআইএতে থেমে ১টা ২৮ মিনিটে এটি কেএল সেন্ট্রালে পৌছায়।
দুই এয়ারপোর্টের মধ্যে যাত্রী পরিবহনে এক্সপ্রেস রেইল ট্রানজিট (ইআরএল) ও শাটল বাসের ব্যবস্থা আছে। এতে ভাড়া পড়বে ২ থেকে আড়াই রিঙ্গিত।
নিজের মতো ট্যাক্সি
ট্যাক্সিতে যেতে চাইএলে কাস্টমস চেকিং শেষ হওয়ার পর লাগেজ সংগ্রহ করে চলে যান টিকিট কাউন্টারে। কেএলআইএ২ থেকে ট্যাক্সি ধরতে হলে আপনাকে যেতে হবে গেটওয়ে বিল্ডিং এর লেভেল ১এ। সেখান থেকে ২ রিঙ্গিতে কুপন কিনে গেট ৪ এ গিয়ে কোনো একজন ড্রাইভারকে বলুন আপনার গন্তব্যের কথা। এখানে তিন ধরনের ট্যাক্সি পেতে পারেন আপনি। মিটার ট্যাক্সিতে উঠলে মিটারে ওঠা বিলের সঙ্গে বিভিন্ন রাস্তার টোল চার্জ যোগ হবে আপনার বিলে। বাজেট কুপন ট্যাক্সিতে নির্দিষ্ট গন্তব্য অনুযায়ী ফিক্সড প্রাইজ কুপন কিনতে হবে আপনাকে। গেট ৪ দিয়ে বের হলে আপনাকে নির্দিষ্ট ট্যাক্সি খুঁজে দেওয়ার লোক আছে সেখানেই। প্রিমিয়াম ট্যাক্সিতে চড়লে আপনি পাবেন বিলাসী ভ্রমণ। কিন্তু এজন্য গুণতে হবে চড়া মূল্য। বাজেট কুপন ট্যাক্সির চেয়ে এর ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ।
কেএলআইএ থেকে ট্যাক্সিতে উঠতে চাইলেও একই নিয়ম। এখানে আপনি নির্দিষ্ট গন্তব্যের কথা জানিয়ে স্বল্পমূল্যের বাজেট ট্যাক্সি, উচ্চভাড়ার প্রিমিয়ার ট্যাক্সি বা ফ্যামিলি কুপন কিনতে পারবেন পৃথক তিন কাউন্টার থেকে। বাজেট ট্যাক্সিতে কুয়ালালামপুর যেতে ভাড়া পড়বে ৭৪ রিঙ্গিত, প্রিমিয়ার ট্যাক্সিতে ১০২ রিঙ্গিত এবং ফ্যামিলি কুপনে ১৯৯.৮০ রিঙ্গিত। তবে মধ্যরাতের পর ট্যাক্সিতে কুয়ালালামপুর যেতে বা আসতে চাইলে চুক্তিতে ভাড়া পড়বে ১১০ থেকে ১২০ রিঙ্গিত। মধ্যরাতের পর ট্যাক্সি ভাড়া ৫০ শতাংশ বেড়ে যায় কুয়ালালামপুরের রাস্তায়।
গ্র্যাব ট্যাক্সি
কুয়ালালামপুরের রাস্তায় এখন তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গ্র্যাব ট্যাক্সি। এই ট্যাক্সির ভাড়া কম। পাওয়াও যায় সহজে। আর এই ট্যাক্সির অপারেটিং পুরো জিপিএস সিস্টেম নির্ভর বলে নিরাপত্তারও কোনো সংকট সৃষ্টি হয় না।
গ্র্যাব ট্যাক্সি ধরতে চাইলে প্রথমে এর অ্যাপস ডাউনলোড করে নিতে হবে এন্ড্রয়েড বা স্মার্টফোনে। এরপর ওই অ্যাপস থেকে গন্তব্য লিখে গ্র্যাব ট্যাক্সি সার্চ দিলে কাছাকাছি থাকা গ্র্যাব ট্যাক্সির ড্রাইভার রেসপন্স করবেন। মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠবে তার চেহারা, নাম, বয়স, ঠিকানা ইত্যাদি। সঙ্গে কতো ভাড়া পড়বে আর আসতে কতো সময় লাগবে তাও উঠবে স্ক্রিনে। কনফার্ম করলে আপনার মোবাইলে ফোন দিয়ে অবস্থান নিশ্চিত হবেন ড্রাইভার।
গ্র্যাব ট্যাক্সিতে মাত্র ৬৫ রিঙ্গিতে কুয়ালালামপুর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের এয়ারপোর্টে যাওয়া যায়।
নিজেই যখন চালক
নিজে গাড়ি হাঁকিয়ে যেতে চাইলে পাসপোর্ট ও আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স তো লাগবেই, সঙ্গে থাকতে হবে পর্যাপ্ত ব্যালান্সসহ আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড। গাড়ি বুঝে পাওয়ার পর এলিট হাইওয়ে, এলডিপি হাউওয়ে, কেসাস হাউওয়ে, মাজু এক্সপ্রেসওয়ে, নর্থসাউথ এক্সপ্রেসওয়ে সেন্ট্রাল লিংক বা নিউ ক্ল্যাং ভ্যালি এক্সপ্রেসওয়ে এর যে কোনটি ধরে এয়ারপোর্ট থেকে দেশটির পছন্দমতো শহরে চলে যেতে পারবেন অনায়াসে।
পরবর্তী পর্ব ‘কম খরচে কুয়ালালামপুর চষা (ট্রেন পর্ব)’ পড়ুন আগামীকাল সোমবার
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৬
জেডএম/