ঢাকা: শিক্ষার্থী ভিসায় মানবপাচারের অভিযোগে ২০১৫ সালের শুরুতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো লিংকন ইউনিভার্সিটি ও কলেজ। এরপর বছর খানেকের বিরতি দিয়ে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে ফের মাঠে নেমেছে বিতর্কিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এরই মধ্যে কলঙ্কিত লিংকনে শিক্ষার্থী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে পান্থপথের ইউনিভার্স ইমিগ্রেশন ও এডুকেশন এব্রোড নামে দুই এজেন্ট প্রতিষ্ঠান। শ্রীলংকা আর নেপালের দালালরাও বেশ সক্রিয় কুয়ালালামপুরে।
যদিও সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এ বছর না হলেও ২০১৭ সালের শুরু থেকে আবারো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আনার বৈধতা প্রাপ্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে লিংকন। তবে বর্তমানে এমবিএ এবং পিএইচডি শাখায় শিক্ষার্থী ভর্তি চলছে।
কলেজ সূত্র জানায়, সরকারের কোন নিয়ম নীতি না মেনে কোটার অতিরিক্ত বিদেশি শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় নেওয়ার অপরাধে ২০১৫ সালের শুরুতেই কালোতালিকাভুক্ত করা হয় লিংকন ইউনিভার্সিটিকে। কিন্তু মালয়েশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশি শিক্ষার্থী নিতে পুনরায় কেডিএন অনুমোদন পাওয়ার জন্যে বেশ তোড়জোড় শুরু করে লিংকন। বর্তমানে ক্লাসে উপস্থিত না থাকলেও সপ্তাহে ১ বা ২ দিন গিয়ে স্বাক্ষর করে আসতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তবে আদতে কোন ক্লাস সেখানে হচ্ছে না। কারণ ক্লাস নেওয়ার মতো রুমই নেই তাদের।
২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ফাইল আটকা পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। ২০১৬ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি কালো তালিকাভুক্তি থেকে মুক্ত হচ্ছে বলে দেশে প্রচারণা চালায় কিছু এজেন্ট। তবে ইউনিভার্সিটি সূত্র জানায়, এ বছরেও কালো তালিকাভুক্ত থাকছে প্রতিষ্ঠানটি। তাই এই প্রতিষ্ঠানের নামে কেউ ভিসার লোভ দিলে সেটি প্রতারণা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূলত শিক্ষার্থীর নামে শ্রমিক আনার কাজেই ব্যবহৃত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। বাংলাদেশ থেকে গত অর্ধযুগ ধরেই মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থীর নামে শ্রমিক পাঠানোর এজেন্টদের প্রথম পছন্দের তালিকায় ছিল লিংকন ইউনিভার্সিটি। ভুয়া সার্টিফিকেট, কাগজপত্র জমা দিয়েও ভর্তি করানো হয় এখানে। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে মালয়েশিয়ায় আসা অনেক শিক্ষার্থী কখনো এর ক্যাম্পাসে পাই রাখেনি।
গত এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহেও এই কলেজের ভিসা নিয়ে কাজ করতে যাওয়া প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।
বলা হয়ে থাকে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে যতো শিক্ষার্থী এনেছে লিংকন তাদের ক্লাস করাতে হলে স্টেডিয়াম নেগারা ভাড়া নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে।
সরজমিনে দেখা যায়, সেলানগড়ে কেলানা জায়া এলআরটির পাশে পেটালিং জায়ায় মায়াং প্লাজায় একটি ফ্লোরেই গড়ে উঠেছে এই ইউনিভার্সিটি। সেখানেই কয়েকটি লোক দেখানো ক্লাসরুম আর অফিস নিয়ে চলে জমজমাট শিক্ষার্থী ব্যাবসা। কলেজটিতে ক্লাস রুম না থাকলেও রয়েছে বড় পরিসরে ভিসা সেন্টার। ক্লাসরুমে শুধু স্বাক্ষর করেই চলে যায় শিক্ষার্থীরা। বেরিয়ে পড়ে কাজে।
এ বিষয়ে ইউনিভার্স ইমিগ্রেশন এবং এডুকেশন এব্রোডের ব্যবস্থাপক ফরিদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থী পাঠিয়ে থাকি। নিলাই ইউনিভার্সিটি, আইআইইউএম এর মতো প্রতিষ্ঠানে আমরা শিক্ষার্থী পাঠাই।
লিংকন ইউনিভার্সিটি কলেজ যে এরই মধ্যে শিক্ষার্থী নিতে শুরু করেছে সেটাও নিশ্চিত করেন ফরিদ।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৬
এমএন/জেডএম