মালয়েশিয়া থেকে: রবিউল ইসলাম। মালয়েশিয়ার সরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
ইমিগ্রেশনে আনুষ্ঠানিকতা শেষে বোর্ডিং ব্রিজের দিকে পা বাড়াতেই একজন কর্মকর্তা বিনীত ভঙ্গিতে বললেন, স্যার আপনার অপেক্ষায় আমাদের ইমিগ্রেশন পুলিশের অফিসার ইনচার্জ। দয়া করে আমার সঙ্গে আসুন।
দীর্ঘ ১২ বছরের বেশি সময় ধরে এই পথের যাত্রী অধ্যাপক রবিউল ইসলাম। এমনটি কখনো হয়নি। আলাদা করে কেউ ডাকেনি। কিছুটা দ্বিধা সত্ত্বেও পা বাড়ালেন তিনি।
সেখানে পৌঁছামাত্র অবাক। একি! এতো সমাদর! এত সম্মান! যেন স্বজন সান্নিধ্য অনুভব করলেন তিনি!
দ্রুত কফির পেয়ালা এগিয়ে এলো তার দিকে। আর চেয়ার ছেড়ে শিশুটির কাছে এলেন ইমিগ্রেশন ইনচার্জের চেয়ারে বসা সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মুকিত হাসান খান। শিশু যাত্রীকে পরম মমতা আর ভালোবাসায় তার হাতে তুলে দিলেন ক্যান্ডি আর চকলেট।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) সন্ধ্যা গড়াতেই ইমিগ্রেশন পুলিশের এ আতিথিয়েতা চোখ এড়ালো না ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
অভূতপূর্ব এ ব্যবহার অনেকেই তখন মেলাতে ব্যস্ত চিরচেনা আগের দৃশ্যগুলোর সঙ্গে।
প্রতিক্রিয়ায় বাংলানিউজকে রবিউল ইসলাম বলেন, ইট ইজ বেটার দেন প্রিভিয়াস। অবশ্যই নির্বিঘ্নে ইমিগ্রেশন সারলাম। এই যে আন্তরিকতা আর সম্মান পেলাম, এক কথায় অসাধারণ।
বোর্ডিং কার্ড হাতে নিয়ে ইমিগ্রেশনে ঢোকা মাত্রই হাসিমুখে অভ্যর্থনা। তারপর পাসপোর্ট নিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসারের চোখের দৃষ্টি দ্রুত চলে যায় সামনে রাখা ডেক্সটপের মনিটরে। তারপর কারও পাসপোর্টে কিছুটা তথ্যের অসঙ্গতি থেকে সন্দেহ। শুরু হলো সর্তক জিজ্ঞাসা।
‘আপনি তো এর আগে মালয়েশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া যেতে গিয়েও যেতে পারেননি। ফেরত এসেছেন। আসলে আপনি কি করেন। মালয়েশিয়া হয়ে এলে আপনি কোন দেশে যাবেন?’
পাশ থেকে কথাগুলো ভেসে আসে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার কণ্ঠে। জবাবের অসঙ্গতি। তারপর ঊর্ধ্বর্তন কর্মকর্তাদের ডেকে জেরা।
আবার সব ঠিক আছে এমন যাত্রীদের হাসিমুখে সেবা। শিশু হলো তো কথাই নেই। আলাদা খাতির।
হঠাৎ করেই ইমিগ্রেশনের ডেস্কগুলোতে বিশেষ বার্তা নিয়ে গেলেন মুকিত হাসান খান। বেশকিছু নির্দেশনা নিজেই পৌঁছে দিলেন এক ডেস্ক থেকে অন্য ডেস্কে গিয়ে। আর সে নির্দেশনায় ফলও মিললো তাৎক্ষণিক। নানা পথ ঘুরে যারা অবৈধভাবে ভিন্নপথের পথিক ছিলেন, আগেভাগেই বাতিল করে দিলেন তাদের যাত্রা।
যে সর্তকতার কারণে ভিন দেশের ইমিগ্রেশন বিভাগেও আগেভাগে রক্ষা পায় দেশের ইমেজ।
নিজ দায়িত্বের বাইরে যাত্রীদের প্রতি সংবেদনশীলতা, শিশুদের আদর, আপ্যায়ন, আর পেশাদারিত্বের কারণে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের মুখে আলোচনায় স্পেশাল ব্রাঞ্চের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মুকিত হাসান খান।
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে অধ্যায়ন শেষে মুকিত হাসান খান ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শান্তি ও সংঘর্ষ বিষয়ে অধ্যয়ন শেষে বিসিএস দিয়ে ২০১২ সালে যোগ দেন পুলিশে। বাবা বরকত আলী খান। অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। চার ভাই দু’বোনের মধ্যে মুকিত তৃতীয়।
ইমিগ্রেশন বিভাগের এ বদলে যাওয়া চিত্র নিয়েই নিজ দপ্তরে বাংলানিউজের মুখোমুখি হন পুলিশের ৩০তম ব্যাচের এ কর্মকর্তা।
জানান, এসবই স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজিপি ড. স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী স্যারের কৃতিত্ব। স্যারই আমাদের শিখিয়েছেন হাসিমুখে সেবা দেওয়ার পদ্ধতি। তার নির্দেশনাতেই নতুন অাঙ্গিকে আমাদের বিভাগ।
বলেন, সবার আগে দেশ। আমরা কাজ করি দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায়। এখন বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক। সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতা। তাই বাড়তি সতর্কতা। আমাদের কাছে অভিবাসী শ্রমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সবাই সমান। কিন্তু সন্দেহ আর নজরদারির মধ্যে থাকলে রক্ষা নেই। সে যেই হোন না কেন। তাকে যথাযথ স্ক্রিনিং হয়ে তবেই অতিক্রম করতে হবে ইমিগ্রেশন।
এর বাইরে যারা তাদের মধ্যে শিশুদের প্রতি আমাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা আর সন্মানিত যাত্রীদের প্রতি আন্তরিকতা। এভাবেই স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইমিগ্রেশন বিভাগ নতুন পরিচয়ে। আরও সেবার মনোভাব নিয়ে জাতির সামনে। যোগ করেন এ সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার।
**যে আদালতের শক্তিই জনগণ
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৬
এএ