মালয়েশিয়া থেকে: মাত্র ১৫ বছর আগে শিক্ষার্থীর বেশে মালয়েশিয়া এসেছিলেন চাঁদপুরের আকতার হোসেন গাজী (৩৭)। নিজের মেধা আর অদম্য চেষ্টায় আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা কোতারায়ায় তার রয়েছে ১২টি দোকান। আরো ৩১ জন বাংলাদেশির কর্মস্থলের ঠিকানা এখন এসব দোকান।
তবে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার পরানপুর গ্রামের ছেলে আকতার হোসেন গাজীর "পরান" পরে থাকে দেশে। মন কাঁদে দেশের মানুষের জন্যে।
তিনি কেবল নিজেই প্রতিষ্ঠিত হননি। এলাকার নতুন প্রজন্মের কাছে নারী শিক্ষার আলো জ্বালাতে প্রতিষ্ঠা করেছেন মেয়েদের জন্যে হাইস্কুল, মাদ্রাসা আর এতিমখানা। প্রতি মুহূর্তেই দেশে থাকা সেইসব এতিমদের খবর নিতেই দিন কেটে যায় তার।
তবে শুরুর দিনগুলোর সংগ্রামকে এখনো গর্বের সাথে স্মরণ করেন আকতার হোসেন গাজী।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, চার ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলাম। বাবা মৃত আরব আলী। বড়ভাই অানোয়ার হোসেন তখন কাজ করতেন একটি কারখানায়। তার চেষ্টাতেই ২০০০ সালে মালয়েশিয়ায় আসি। তখন থেকেই স্বপ্ন ছিলো জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। বয়স সবে মাত্র ২১ বছর। কাজ নিলাম একটি রেস্তোঁরায়। ইংরেজি ভাষার ওপর শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি নিজেই টিউশনি শুরু করলাম। এতেও নিজের খরচ নির্বাহ করাই কঠিন হয়ে পড়লো। শুরু করলাম কলিং কার্ডের ব্যবসা।
তখন মিনিট প্রতি ঢাকায় ফোনে কথা বলতে খরচ হতো বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮০ টাকা। কলিং কার্ডের মাধ্যমে খরচ হতো প্রায় ৩০ টাকা। ব্যবসা জমে গেলো। আবার বির্পযয়-ও নেমে এলো। তবুও হেরে যাইনি। টিকে থাকার সংগ্রাম আজ আমাকে নিয়ে এসেছে এই অবস্থানে।
প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ২০০৬ সালে বিয়ে করলাম মালয়েশিয়ার নাগরিক নাসিরা বিনতি নামছিকে।
এখানকার নিয়ম অনুযায়ী যে কোন ব্যবসা করতে গেলেই মালয়েশিয়ার নাগরিককে অংশীদার করা বাধ্যতামূলক। এই দম্পতির কোলজুড়ে দুই কন্যা। নূর সাহিপা বালকিস বিনতি আকতার হোসেন (৯) ও নূর সাহিরা বাত্রিসা বিনতি আকতার হোসেন (৬)।
আকতার হোসেন গাজী জানান, নীরবে কাজ করাটা আমার লক্ষ্য। আমি দেশের প্রতি ভালোবাসা আর মমতা থেকেই মানুষের জন্যে কাজ করছি। তাই কখনোই আসতে চাইনি প্রচারের আলোয়। এভাবেই জীবনকে দেশের কল্যাণে নিয়োজিত করতে চাই।
যোগ করেন আকতার হোসেন গাজী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৬
আরআই