কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া) থেকে: নানা বর্ণ-ধর্ম-সংস্কৃতির মানুষের দেশ মালয়েশিয়া। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রে অবস্থিত দেশটির মাটিতে পা রেখে কেউ কেউ নিজের মেধা আর যোগ্যতার দৌলতে অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেছেন নিজের দেশকে।
২৫ বছর আগে সামান্য কৃষি শ্রমিকের ভিসায় দেশটিতে এসে এখন ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিশাল চারটি রেস্টুরেন্ট। ট্রাভেল এজেন্সিসহ অনেককিছু।
মালয়েশিয়ায় শতভাগ দেশি খাবারের স্বাদ স্বদেশীদের মুখে তুলে দেওয়ার প্রথম ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগই ঘুরিয়ে দেয় তার জীবনের মোড়।
পরিশ্রম আর একাগ্রতা থাকলে যে ক্ষুদ্র অবস্থান থেকে সাফল্যের শিখরে ওঠা যায়, তার প্রমাণ স্কুল শিক্ষক শাহ আলম মোল্লার ছেলে খায়রুল কবির।
পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় কবির ১৯৯১ সালে পাড়ি জমান স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায়। ক্যামেরুন হাইল্যান্ডে সবজি বাগানে কাজ নেন। বেতন মাসে ৩শ রিঙ্গিত। সে সময়ের মুদ্রামান অনুযায়ী মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা। তখন প্রতি রিঙ্গিতে টাকার মান ছিলো ১২ টাকা। রোদ, বৃষ্টিতেও রেহাই নেই। কাজটাই দিন শেষে আসল। এটাই হিসাব।
সেটা ছেড়ে কাজ নিলেন একই এলাকায় ফুল বাগানে। এভাবে বছর দেড়েক কাজ করার পর ঘুরেছেন রাস্তায় রাস্তায়। করেছেন বিপণন কর্মীর কাজ।
১৯৯৬ সালে এক বন্ধুর ট্রাভেল এজেন্সিতে যোগ দেন। তারপর বন্ধুদের অর্থ সহায়তা নিয়ে খোলেন গ্রোসারি দোকানের ব্যবসা।
২০০০ সালে বাংলাদেশিদের প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত কোতারায়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জাকিরুল ইসলাম খানকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘চারিস’ নামে রেস্টুরেন্ট।
দু’জন রাত-দিন খেটে গড়ে তোলেন সেই রেস্টুরেন্ট। এভাবে টিকে থাকার সংগ্রামে একে একে গড়ে তোলেন আরও তিনটি রেস্টুরেন্ট। অন্য দু’টিও কোতারায়ায়। অন্যটি বুকিত বিনতাংয়ে।
খায়রুল কবির বাংলানিউজকে জানান, এখন আর সেভাবে লাভের হিসেব করা হয় না। কারণ, অসম প্রতিযোগিতার কারণে রেস্টুরেন্ট ভাড়া বেড়েছে বহুগুণে। খরচও বেড়ে গেছে। সে তুলনায় আগের চাইতে লাভ কম ধরেই ব্যবসা করতে হচ্ছে।
রেস্টুরেন্টের অংশীদার জাকিরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে জানান, ৫০ জনের মতো বাংলাদেশির কর্মের ঠিকানা আমাদের রেস্টুরেন্ট। এটাই গর্বের। সব মিলিয়ে অন্যরকম সংগ্রামের মধ্যে আমরা ভালো আছি।
খায়রুল জানান, নিয়মিত পর্যটক ছাড়াও দেশ থেকে আসা এমপি, মন্ত্রীরা এখানে আসেন। খাবারের স্বাদ নিয়ে তারিফ করেন। এটাও বড় গর্বের বিষয়। সাধারণত কোনো মালয় রেস্টুরেন্টে গেলে বাংলাদেশিরা খুব নিচু স্বরে কথা বলেন। এখানে এসে তাদের বুকের ছাতি বেড়ে যায়। লম্বা করে নিঃশ্বাস নিয়ে প্রিয় স্বাদের খাবার খান। এই দৃশ্যগুলোকেই এখন মনে হয় বিশাল প্রাপ্তি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৬
এসএনএস