ঢাকা: বাংলাদেশে থাকতেই বহু ঘাটের পানি খাওয়ার খাসলত ছিলো তার। স্বভাবটা ছাড়তে পারেননি মালয়েশিয়া গিয়েও।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটি সূত্র জানায়, নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে মালয়েশিয়া পৌছান পারভেজ। বাংলাদেশ থেকে প্লেনে থাইল্যান্ড, সেখান থেকে পাঁয়ে হেটে জঙ্গল পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া পৌছান তিনি।
১৯৮৬ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত একজন বাংলাদেশি বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৯১-৯২ সালে মালয়েশিয়ায় আসেন পারভেজ। থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে আসেন প্রথমে। এরপর কুয়ালালামপুর। এখানে এসেই বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।
সেই সময় বাতেন নামে এক ব্যক্তি কুয়ালালামপুরে পুলিশের সোর্স হিসেবে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে কাজ করতেন। তার শিষ্য হিসেবে কাজ শুরু করেন পারভেজ। পুলিশের কাছে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন দুর্বলতা তুলে ধরতেন তিনি। অবৈধ বাংলাদেশি বা তথ্যগত ত্রুটি থাকতো যেসব বাংলাদেশিদের, তাদের ধরিয়ে দিতেন। এরপর পুলিশের সঙ্গে সমঝোতা করে আবার ছাড়াতেন সেই পারভেজই। সেসময় পানদান জায়ায় মনু মিয়া নামে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে অপহরণের ঘটনা সবাই জেনে যায়।
১৯৯০ দশকের মাঝামাঝিতে স্থানীয় মালয়, তামিল আর বখে যাওয়া বাংলাদেশিদের সমন্বয়ে কুয়ালালামপুরে কিডন্যাপার গ্যাঙ গড়ে তোলেন পারভেজ। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ব্যবসায়ীদের এয়ারপোর্ট বা বুকিত বিনতান থেকে কিডন্যাপ করে গভীর জঙ্গলে নিয়ে রাখতেন তিনি। তারপর আদায় করতেন মোটা অংকের মু্ক্তিপন।
সে সময় শ্রমজীবী নির্মাণ শ্রমিকদেরও হরহামেশা কিডন্যাপ করতো পারভেজ গ্যাঙ। এই গ্যাঙ লীডার পারভেজের স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যেমন সখ্য, তেমনি দহরম মহরম বিভিন্ন দেশের অপরাধীদের সঙ্গেও।
পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিতি থাকায় প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির সবাই যেমন তাকে ভয় করেন, তেমনি এড়িয়ে চলেন তার সঙ্গ।
নানামুখী অপকর্মের জন্য নব্বই দশকের শেষ নাগাদ তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয় মালয়েশিয়া সরকার। ২০০৭ সালে মোখলেস নামে এক ব্যবসায়ীর সহায়তায় ফের তিনি ফেরত যান কুয়ালালামপুরে। এবার হয়ে ওঠেন আরো বেপরোয়া।
২০০৯ সালে বিডিটিভি নামে এক সার্ভার খুলে বাংলাদেশি চ্যানেলগুলো দেখানোর ব্যবসা শুরু করলেও এর আড়ালে অপহরণ বাণিজ্য নতুন করে চালাতে থাকেন তিনি। শ্রমিক ও পুলিশ উভয় পক্ষের কাছ থেকে কমিশন নিতে তিনি হয়ে ওঠেন আরো বেপরোয়া।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করে নিজেই হন সভাপতি। বের করেন প্রবাসী কথা নামে এক স্থানীয় পত্রিকা।
এ সময় জাতীয় পার্টির সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তার। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বরিশালে তার বাড়ির আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেলেও আওয়ামী লীগের কাছে আসনটি ছাড়তে হওয়ায় কপাল পোড়ে পারভেজের।
বর্তমানে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটির কাছে তিনি মূর্তিমান এক আতংকের নাম। নাম এসএম রহমান পারভেজ হলেও তাকে এখন ‘কিডন্যাপ পারভেজ’ বলেই চেনে সবাই।
অপহরণ ছাড়াও ভয়-ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের এন্তার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। মালয়েশিয়ায় কোন বাংলাদেশি ব্যবসায় ভাল করলেই তাকে পুলিশ ও গ্যাংস্টার দিয়ে ভয়ভীতি দেখান তিনি। তারপর আদায় করেন অর্থ। প্রয়োজনে কিডন্যাপ করেন। কিডন্যাপ করার পর তার নির্যাতনে টাঙ্গাইলের এক যুবকের মৃত্যু হয় বলেও অভিযোগ আছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৬
এটুজেড