কোনা কিনাবালু (বোর্নিও) থেকে: হুট করে লাফ দিলো বিশাল এক কাঁকড়া। মাটিতে পড়েই গড়গড়িয়ে ছুটলো দিগ্বিদিক।
এ মাছটা আগেরটার চেয়ে ঢের ছোট। বোধ হয় মরাও। একদমই নড়ছে না। তবু গালি ভুলে লবস্টার হাতে ছবির পোঁজ দিলেন সেই লোক। আপাতত সমস্যার সমাধান। বোঝা গেলো, এমন ঘটনা হরহামেশা ঘটে এখানে। আর ঘটবেই না বা কেনো? চীন সাগরের যতো প্রজাতির মাছ, কাঁকড়া আর অক্টোপাস আছে সবই তো খামালে খামাল বিক্রি হচ্ছে এখানে। কতোগুলোর তো নাম বলাই মুশকিল।
সি ফুডের আয়োজন যে এতো বিশাল হয় তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিনই বটে। পূবের জেসেলটন পয়েন্ট থেকে শুরু করে পশ্চিমে ওয়াটার ফ্রন্ট পেরিয়ে জেটিঘাটও পার হয়ে গেছে নানা রঙ, প্রজাতি আর বাহারি মাছের বাজার। সব তাজা। প্রতিটার সামনে দাম লিখে রেখেছে দোকানিরা।
পছন্দ করে অর্ডার দিন। ব্যাস, কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাজা মাছ বারবিকিউ করে আপনার পাতে তুলে দেবে দক্ষ বাবুর্চি। সাবাহ’র রাজধানী কোটা কিনাবালুর উত্তর আর পশ্চিম সৈকতের পুরোটা জুড়েই এই জ্যান্ত সি-ফুডের বাজার। পূবের জেসেলটন পয়েন্ট থেকে পশ্চিমে প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটেও এ বাজারের শেষ প্রান্ত বের করা কঠিন হয়ে পড়লো।
চীন সাগরের মাছ। খাওয়াটাও চীন সাগরের একদম তীরে বসে। সাগর ছুঁয়ে আসা বাতাসে প্রাণ জুড়াতে জুড়াতে পছন্দের সি-ফুডে জিভ জুড়ানোর আয়োজন। কইয়ের তেলে কই ভাজার এমন সুযোগ কি আর হরহামেশা মেলে? ভোজন রসিকরা তাই হাজির দলে দলে। ছেলে-বুড়ো, ছুঁড়ি-বুড়ি কেউই বাদ নেই। হাজারে হাজারে ক্রেতা। বোর্নিওর এই বহুরূপী শহরে বেড়াতে আসা সব মানুষই যেন হাজির হয়েছে সি-ফুড খেতে। স্থানীয়রাও খুব একটা পিছিয়ে আছে বলে মনে হলো না। দোকানের পর দোকান ঘুরে পছন্দের মাছ কিনে জগৎজয়ের হাসি ফুটছে সবার মুখে।
তবে এই মাছ উৎসবে ভারতীয়দের যে এখানকার বিক্রেতারা খুব একটা পছন্দ করেন না তা বেশ বুঝা গেলো তাদের আচরণে। বাংলাদেশের এক ছা-পোষা সাংবাদিককে ছবি তুলতে দেখে তারা ভাবলো ইন্ডিয়ান। মাছ কিনবে না, কেবল দেখতে এসেছে। দুই ছোকরা চায়নিজ তাই শরীর দুলিয়ে গান ধরলো, ইন্ডিয়ান গো চাইয়া চাইয়া, ইন্ডিয়ান গো চাইয়া চাইয়া।
ভারতীয়দের অপছন্দ করলেও মুম্বাই ইন্ডাস্ট্রির হিন্দি গান তাদের মাথায় ভালোই ঢুকেছে বুঝা গেলো। বাস্তবিকও তো তাই। এখানকার রেস্তোরাঁগুলোতে হিন্দি সিনেমার গান হরদম বাজছে। কোথাও কোথাও তো রীতিমতো টিভি মনিটরই বসিয়ে দিয়েছে তারা।
মাছ ছাড়াও সাগরের বিভিন্ন প্রজাতির শৈবাল আর শ্যাওলাও সাজিয়ে রাখা দোকানে। কোনো কোনোটাতে তো পানি দিয়ে মাছ তাজা রাখার পাকা ব্যবস্থা। তবে সবচেয়ে বেশি তাজা কাঁকড়াগুলো। দামেও সস্তা। লবস্টারের দাম দু’শ’ রিঙ্গিত (১ রিঙ্গিতে ১৯ টাকা) কেজি হলেও বিশাল বিশাল কাঁকড়া বিকোচ্ছে ৪০ রিঙ্গিত দরে। আছে টুনা, শাপলা পাতা মাছ, বড় বাইন। আছে নানা রঙা কচ্ছপও। তবে সবগুলোরই এতো প্রজাতি আর রঙ, দেখতে দেখতেই সময় বয়ে যাবে।
প্রতিদিন বিকেলে শুরু হয়ে গভীর রাত অবধি জমজমাট থাকে দক্ষিণ চীন সাগরের এই সিফুড মেলা। তাইতে নাইট মার্কেট নামেও ব্যাপক পরিচিতি এর।
** চীন সাগর পেরিয়ে ওরাংওটাংদের দেশে
বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
জেডএম/এসএইচ