বাংলাদেশ গ্লোবাল সামিট ডটকম (http://www.bangladeshglobalsummit.com/) ওয়েবসাইটে ক্লিক করলেই গিটারের ছন্দের সঙ্গে বেজে ওঠে কালজয়ী গান ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’...। এই গানের সুর চোখের কোণে অশ্রু গড়িয়ে দেয় যেন অজান্তে।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বার্জায়া টাইম স্কয়ার হোটেলের সুপরিসর বলরুমে ১৯ ও ২০ নভেম্বর দু’দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ গ্লোবাল সামিট’ এমনই আবেগে ছুঁয়ে দিয়েছে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বাংলাদেশিদের।
১৯ নভেম্বর সামিটের উদ্বোধনকালে বাংলা ও বাঙালির প্রাণের সুর ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাবাসি...’ বাজতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে দেশের লাল সবুজ পতাকা উঁচিয়ে ধরা হলে আবেগে সবার যেন হৃদয় ছুঁয়ে যায়, অশ্রু গড়াতে দেখা যায় কারও কারও চোকে। মুহূর্তে যেন পুরো হলঘর পরিণত হয় এক টুকরো বাংলাদেশে। প্যারিসের কাজী এনায়েতউল্লাহ, এথেন্সের ড. জয়নুল আবেদীন, লন্ডনের শামসুল আলম লিটন ও সাংবাদিক মাঈনুল ইসলাম নাসিমসহ সব উদ্যোগী প্রবাসীদের ধন্য ধন্য করেন অভ্যাগতরা। মাতৃভূমিপ্রাণ হাজারো প্রবাসীকে এক সুঁতোয় গাাঁথার মিছিলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এরা যে রাত্রিদিন অক্লান্ত শ্রম করেছেন।
প্রথমবারের মতো ‘বাংলাদেশ গ্লোবাল সামিট’ নামে প্রবাসীদের এ মহাসম্মেলনের আয়োজন করে অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন-আয়েবা। গ্রিসের এথেন্সে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালে আয়েবা গঠন করা হয়। ইউরোপ প্রবাসীদের একসূত্রে গেঁথে দেশের উন্নয়ন ও প্রবাসীদের কল্যাণের লক্ষ্যে কাজ করে অনেক আগেই আলোচনায় ওঠে সংগঠনটি। নেতাদের স্বপ্ন এখন পুরোবিশ্বকে এই সুঁতোয় গাঁথার। গ্লোবাল সামিট যেন সেই স্বপ্ন ছোঁয়ারই এক বিশাল কর্মযজ্ঞ।
সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেই স্বপ্নের কথাই বলেন আগত প্রতিথযশা সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীরা।
সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, “কবি বলেছেন, ‘আকাশকে বলো, একটু ওপরে উঠুক, আমি দাঁড়াতে চাই’। বাংলাদেশ এখন বিশ্বজুড়ে এমনভাবে দাঁড়াচ্ছে....আকাশকে তার জায়গা ছেড়ে ওপরে উঠে যেতে হবে। আমাদের স্বপ্ন আকাশসমান। ”
সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, “আপনাদের প্রত্যেকের রয়েছে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আলাদা আলাদা গল্প। সাফল্যের সেই গল্প ও অভিজ্ঞতা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগবে। ”
সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান বললেন, “আজ বিশ্বজুড়ে বাঙালি এমনভাবে ছড়িয়ে আছে যে বিশ্ব থেকে ব্রিটিশের সূর্য অস্তমিত হয়, বাংলাদেশের সূর্য অস্ত যায় না। ”
সাংবাদিক মাহমুদ হাফিজ বললেন, “আজ পেছনের ব্যানারটিতে একটি বড় স্বপ্ন লেখা আছে। ইউরোপ পাড়ি দিয়ে তা আজ বিশ্বকে ছুঁতে যাচ্ছে। এখন আপনারা শুধু প্রবাসী নন, আপনাদের নতুন নাম ‘স্বপ্নসন্ধানী’। ”
পর্যটনশিল্পের বিকাশের অন্যতম পথিকৃৎ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, “বিদেশি পর্যটকদের বোঝাতে হবে বাংলাদেশ আর ভয়ের দেশ নয়, বেড়ানোর দেশ। ”ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম বলেন, “হাতেখড়ি বইয়ে অ-তে ‘অজগর’ তুলে দিয়ে ‘অপূর্ব বাংলাদেশ’ লেখার সময় এসেছে। ”
মালয়েশিয়ার মন্ত্রী নাজরি বিন আবদুল আজিজ তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন মজার মজার অভিজ্ঞতা। তিনি বাংলাদেশিদের সেকেন্ড হোম করে মালয়েশিয়ায় আসার আহবান জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশিরা না হলে মালয়েশিয়ার এতো উন্নতি হতো না। ” মালয়েশিয়া হয়ে হজে যেতেও বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। দু’দিনের সামিটে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও ছিল বিশেষ কর্মশালা, মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের নিয়ে ব্যতিক্রমী টকশো, প্রযুক্তি, বিনিয়োগ, অভিবাসন আর পর্যটন শীর্ষক সেমিনার এবং সবশেষে সমাপনী অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানে উঠে আসে সমস্যা-সমাধান আর সম্ভাবনার হাজারো পথ-উপায়।
সামিটে আয়েবা মহাসচিব ফ্রান্সের কাজী এনায়েত উল্লাহ, যুক্তরাষ্ট্রের মাসুদ চৌধুরী, হাকিকুল ইসলাম খোকন, সালেহ আহমেদ, ইমিগ্রেশন ল’ইয়ার তাহমিনা ওয়াটসন, এস এম গিয়াস উদ্দিন, সাইফুল খন্দকার, মায়া নেহাল, অস্ট্রেলিয়ার আহমেদ ফিরোজ, ড. কামাল মাহমুদ, সরওয়ার কামাল, মাহবুব সিরাজ তুহিন জেপি, নিউজিল্যান্ডের কাজী এ এইচ আহসান, যুক্তরাজ্যের আহমেদুস সামাদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন, শামসুল আলম লিটন, কোরিয়ার আবু বকর সিদ্দিক, জাপানের ড. শেখ আলীমুজ্জামান, সিঙ্গাপুরের ড. এম এ রহিম, ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন, শিকদার গিয়াস উদ্দিন, এ কে এম মহসীন, , ফখরুল আকম সেলিম, পর্তুগালের রানা তসলিম উদ্দিন, সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়ক মাঈনুল ইসলাম নাসিম, এম এ এইচ ফেরদৌস, ডা. নাসরিন জাহান, সাইফুল খন্দকার, মালয়েশিয়ার মকবুল হোসেন মুকুল, অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সামিটের শেষ দিন ‘বাংলাদেশ নাইটে’ ছিল নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ফকির আলমগীর, নুরজাহান আলীম, হৃদি শেখের সংগীত আর প্রবাসী শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনায় মুখর হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল।
‘কুয়ালালামপুর ঘোষণা’র মধ্য দিয়ে গ্লোবাল সামিটের সমাপ্তি টানা হয়। দেশের উন্নয়ন ও প্রবাসীদের স্বার্থরক্ষায় ২৩ দফা ঘোষণা স্থান পায় এতে। সামিটে গঠিত হয় বিশ্বের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ‘ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ অর্গাইনাইজেশন-ডব্লিউবিও’, এর আহ্বায়ক করা হয় কাজী এনায়েত উল্লাহকে।
সবকিছু ছাপিয়ে সামিটের সমাপ্তিতে ভেসে ওঠে লাল সবুজের বাংলাদেশের পতাকা, আর বাজতে থাকে সুরের মুর্চ্ছনা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি...!’ যে সুরে উচ্চকিত হয়ে দেশগড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামিটস্থল থেকে বিদায় নেন আগত অতিথিরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৬
এইচএ/