সকাল থেকেই সড়কটিতে ডেকোরেটর এনে অস্থায়ী মঞ্চ ও সামিয়ানা টানানো হচ্ছিল। দুপুরের মধ্যেই পুরোপুরি প্যান্ডেল তৈরির কাজ শেষ হয়।
রোডের বাসিন্দা প্রবাসী বাঙালি মাইনুল হোসেন উজ্জ্বল জানান, চীনা নববর্ষ উদ্যাপনের এ আয়োজনে ভূড়িভোজে রয়েছে শুকরের মাংস। আবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মুসলিম অধ্যুষিত মহল্লাটির মুসলমানদেরও।
তবে সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠান জমে উঠলে দেখা গেলো, চমৎকার সম্প্রীতির বন্ধন। চীনারা যখন টেবিলে গোল হয়ে শুকরের মাংসের নানা পদের খাবারের সঙ্গে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদের বোতলে বুঁদ হয়ে রয়েছেন। ঠিক তখনই মাত্র হাতখানেক দূরের টেবিলে, কোথাও আবার পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে আয়েশ করে মুসলিমরা উদরপূর্তি করছেন নানা পদের হালাল খাবারে।
চীনাদের টেবিলে মদের বোতলের ছড়াছড়ি। একের পর এক পেগ করে মেরে যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু এতো লোকের সমাগম, এতো গান-বাজনা-খানা-পিনা, কোথাও ঢুলু ঢুলু নেই! আবার কাউকে বেসামাল হতেও দেখা গেলো না।
মধ্যরাত পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া করে যার যার গন্তব্যে ফিরে গেলেন।
এতো সব আয়োজনেও আশপাশে ছিলো না পুলিশের কড়াকড়ি বা প্রহরা। যে যার অবস্থানে উৎসব করছেন। আর ক্ষণে ক্ষণে চলছে বিকট শব্দের আতশবাজি ও আলোর ঝলকানি।
বাংলাদেশেও আতশবাজি হয়। তবে অনেক সময় তা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কারো কারো কাছে, যখন আকাশে ফেটে গেলেও তার ছররা নিচে এসে কারো গা স্পর্শ করে। কিন্তু এখানে এতো মানুষের মধ্যেই চলছে আতসবাজি। আকাশে ফেটে মাঝ আকাশেই মিলিয়ে গেলো ছররাগুলো। যে কারণে অনেকে নিচে দাঁড়িয়ে ভিডিও ধারণ করলেন নির্বিঘ্নে।
নাগাসারির এ উৎসব থেকে ৫শ’ মিটার দূরে জালান আলরে আরেকটি চীনা উৎসব চলছিল। এখানে অবশ্য আয়োজকদের পক্ষ থেকে খাবার- দাবারের তেমন আয়োজন করা হয়নি।
এ রোডটিতে গায়ে গায়ে লাগিয়ে বসে আছে গ্রিল-কাবার ও সি-ফুডের দোকান। রাস্তার মাঝে সামান্য অংশ ফাঁকা, যা দিয়ে কোনো রকমে একটি রিকশা চলতে পারবে। আর দু’দিকে চেয়ার টেবিল পাতানো।
সেখানে চলছে নিজ খরচে খাওয়া-দাওয়া। কুয়ালালামপুর সিটির রাত জাগিয়েদের আঁখড়া এটি। এ এলাকাটি তাই নগরীর ‘নাইটপাড়া’ হিসেবে পরিচিত। সারারাত জেগে থাকেন লোকজন। আবার অনেক বেলা করে ঘুমান।
এলাকার আশপাশে সারি সারি রয়েছে নাইট ক্লাব, ডিসকো, মদে বার ও স্পা। ফুটপাত দিয়ে হাঁটলে আমন্ত্রণ জানাবেন স্পা’র স্বল্পবসনা সেলসগার্লরা। কখনও কখনও প্রলুব্ধ করার জন্য খানিকটা সামনে এসে মূল্য তালিকা দেখানোর চেষ্টা করবেন। তবে কেউ সাড়া দিতে না চাইলে খুব বেশি বিরক্ত করবেন না।
নানা কারণে মালয়েশিয়াকে উদার আধুনিক মুসলিম দেশ বলা হয়। আর সে কারণে সারা বিশ্ব থেকে পর্যটকরা ছুটে আসছেন এখানে। রাস্তায় কিংবা শপিংমলে ঘুরে বেড়ান নানা জাতের, নানা বর্ণের, নানা উচ্চতার মানুষ। আর দ্রুতই গগনচুম্বি সারি সারি ভবনের মতো বিশ্ববাসীর কাছে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে দেশটি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
এসআই/এএসআর
** মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের আস্থা ‘লাকম ইনন’
** বাংলানিউজের সিরাজ এখন মালয়েশিয়ায়