ভবনটি নিয়ে রয়েছে নানা রকম কল্পকাহিনী। জায়গাটি আগে শ্মশানঘাট হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
মুকুলের অংশে সিঁড়ির গোঁড়া থেকে মাঝ বরাবর করিডোর। করিডোরের দু’পাশে করপোরেট অফিসের মতো গ্লাসে মোড়ানো। পশ্চিমের পুরো অংশ জুড়ে রেস্টুরেন্ট। আর পূর্বের অংশে তার ব্যক্তিগত অফিস ও একটি হলরুম রয়েছে।
দক্ষিণ দিকের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই প্রথমে পড়বে গ্লাসে মোড়ানো একটি কক্ষ। সেই কক্ষের ভেতরে রয়েছে বেশ কয়েকটি কম্পিউটার ও একটি ফটোকপি মেশিন। দরজায় এফোর সাইজের কাগজে লেখা ‘ছবি তোলা, ফটোকপি, অনলাইনসহ যাবতীয় সেবা প্রদান করা হয়। ’
গ্লাসের দরজায় ‘পাসপোর্ট ফি সম্পর্কে জ্ঞাতব্য’ সচেতনতামূলক লিফলেট সাঁটানো। তার পাশেই সাঁটানো হাই কমিশনের দু’টি নোটিশ। ঠিক যেভাবে সরকারি অফিসের দেয়াল ও নোটিশ বোর্ডে সাঁটানো হয়।
এতে খুব সহজেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন প্রবাসী বাঙালিরা। অনেকে তো হাই কমিশন ভেবে ভেতরে গিয়ে পাসপোর্টের জন্য ফরমও পূরণ করছেন। আবার কেউ কেউ ফরম জমাও দিয়ে আসছেন সেখানে। সেই সুযোগটিই সুদাসলে উসুল করছেন মুকুলের লোকজন।
পাসপোর্টের ফরম পূরণ থেকে দ্রুত পাসপোর্ট করে দেওয়ার চুক্তি নিচ্ছেন তারা। এ জন্য দিতে হয় ১শ ৬০ থেকে ২শ রিঙ্গিত (১ রিঙ্গিত=১৮টাকা)। আবার কারও বেশি জরুরি হলে সে ব্যবস্থাও করছেন তারাই। এ জন্য গুণতে হয় বাড়তি অর্থ।
অনেক প্রবাসী যেমন বুঝতে না পেরে এখানে এসে প্রতারিত হচ্ছেন, আবার কেউ কেউ জানার পরও হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পেতে দ্বারস্থ হচ্ছেন মুকুলের লোকজনের।
মুকুলের মাধ্যমে না গেলে কাজ হবে না। অথবা অযথা হয়রানির শিকার হতে হয়। আর মুকুলের লোকজনের মাধ্যমে গেলে দ্রুত হয়ে যায় সবকিছু। এরকম কথা চাউর রয়েছে সেখানে।
বাইরের দালালদের একটি গ্রুপের সঙ্গে রয়েছে মুকুল গ্রুপের যোগাযোগ। যারা মক্কেল ধরে সোজা নিয়ে যাচ্ছেন মুকুলের সেই অফিসে। হাই কমিশনের কাউন্টার থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে বসে দফারফা হচ্ছে পাসপোর্টের। সহজ-সরল প্রবাসীরা বুঝতেই পারছেন না তারা কোথায় টাকা দিলেন পাসপোর্ট তুলতে।
দালালদের ভাষায়, একটি হচ্ছে বাংলাদেশ হাই কমিশন আর অপরটি হচ্ছে মুকুল কমিশন! তারা বলেন, মুকুল কমিশনের ভেতর দিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। মুকুল কমিশনকে এড়তে চাইলে বিড়ম্বনায় পড়ে যাবেন। তারচেয়ে তারাও মিলেঝিলে কাজ করেন।
ভোলা জেলার পাসপোর্ট অফিসের এক দালাল নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, বাংলানিউজতো আমাদের (দালালদের) বিরুদ্ধে নিউজ করেছে। কিন্তু আমরাতো চার থেকে পাঁচশ টাকা নেই। ওরা যে মানুষ জবাই করছে, একেকটি পাসপোর্টের জন্য তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি আদায় করছে। হাই কমিশনে গিয়ে দেখেন ওদের লোকদের অবাধ যাতায়াত।
তিনি আরও বলেন, মুকুলের হোটেলের ভেতর দিয়ে রয়েছে একটি গোপন রাস্তা। যে দিক দিয়ে তারা যাতায়াত করেন। মানুষ সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকে ফরম জমা দিতে পারে না। আর তারা পাঁচ মিনিটের মধ্যে জমা দিয়ে দেন। পারলে তাদের বিরুদ্ধে লেখেন।
মুকুলের এসব ব্যবসা নাকি দেখাশোনা করেন তার ভাগনে হাসমত ও জাহিদ। তাদের আঙুলের হেলনিতে চলে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ হাই কমিশন। আর তাদের সহযোগী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা জোসেফ, যুবলীগ নেতা কাজল ও রায়হান।
কে এই মকবুল হোসেন মুকুল?
মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের বিদায়ী কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন মুকুল। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি নেই। দু’টি কমিটির কাগজ জমা হয়েছে কেন্দ্রে। মকুল হচ্ছেন একাংশের প্রস্তাবিত সভাপতি।
কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি মুকুল। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার শহিদুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মকবুল হোসেন মুকুলের এসব কর্মকাণ্ডে ইমেজ সংকটে রয়েছে মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগ। আবার হাই কমিশনের কিছু লোকজন ভালো থাকলেও তাদের দাপটের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০৭
এসআই/এএ