কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাই কমিশন সম্পর্কে ফেসবুক পেজে এমন দুর্ভোগের কথা লিখেছেন একজন প্রবাসী। দশ বছর ধরে কুয়ালালামপুরে থাকেন তিনি।
Mrhshuhag Bhuiyan নামে এক ভুক্তভোগী কমেন্ট করেছেন, ‘কথায় বলা চলে হাই কমিশন যদি দুর্নিতি না করে, ঘুস বানিজ্য বন্ধ করে প্রবাশী বাংলাদেশীদের সেবা প্রধান করে তাইলে একটা দালাল ও হাইকমিশনের আশে পাশে থাকবে না, সবাই পরিশ্রমী হবে, কাজ করে খেতে শিখবে”।
তিনি আরো লিখেছেন, “হাই কমিশনে গেলে বুঝা যায় মৃতদেহ পাঠানোর জন্য ঘুশ দিয়ে ফাইল পাস করাতে হয়, আমি নিজেই জলন্ত প্রমান। হাই কমিশন না বলে হাই লেবেলকৃত ঘুসখোর বলা যেতে পারে। ধন্যবাদ অপ্রিয় সত্য কথা লিখার জন্য”।
Khaled Saifullah নামে একজন লিখেছেন, ‘হাই কমিশনার হচ্ছে সবচেয়ে বড় দালাল না হয় এগুলো হয় কিভাবে?’
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘দালালে ভরপুর মালয়েশিয়া বাংলাদেশ হাই কমিশন’ শিরোনামে একটি নিউজ আপলোড হয় বাংলানিউজে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কয়েক হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারি তাদের ওয়ালে নিউজটি পোস্ট দেন। কয়েক লাখ পাঠক নিউজটি পাঠ করেন। আবার বাংলানিউজের ফেসবুক পেজে এসেও অনেকে কমেন্ট করে তাদের দুর্ভোগের কথা জানান। প্রবাসীরা কেউ কেউ সরাসরি বাংলানিউজ অফিসে ফোন করে তুলে ধরেন চরম দুর্ভোগের গল্প।
সুজন নামে এক প্রবাসী সরাসরি ঘুষ দিয়ে পাসপোর্ট তুলেছেন। ফোনে বাংলানিউজকে তিনি জানান, তিনি ও তার এক বন্ধু মিলে সম্প্রতি পাসপোর্ট করতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ হাই কমিশনে। সকাল ৭ টায় এসে দেখেন দীর্ঘ লাইন। দুপুর ১টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর হতাশ হয়ে পড়েন। তিনি থাকেন মালাক্কা প্রদেশে। ঘুরে গেলে পরদিন আসা খুবই কঠিন। একদিকে যেমন খরচ ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, তেমনি ছুটি পাওয়ারও বিষয় আছে।
কিন্তু সুজন মিয়ার অনেক পরে হাই কমিশনে এসেও কেউ কেউ নতুন পাসপোর্টের আবেদন জমা দিয়েছেন। যাওয়ার সময় মুচকি হাসি দিয়ে মোলাকাত করে চলে গেছেন।
দ্রুত কাজ করিয়ে নিতে তাই দালালের দ্বারস্থ হন সুজন। সকালে এখানে আসতেই যে দালাল তাকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেছিল সে তখনো ঘুরঘুর করছে লাইনের আশপাশেই। লাইনে দাঁড়িয়েই দেড়শ’ রিঙ্গিতে (১ রিঙ্গিত=১৮ টাকা) তার সঙ্গে রফা করে নেন সুজন। এরপর মাত্র ৩০ মিনিটেই কাজ হয়ে যায় তার।
বাংলাদেশের মালয়েশিয়া হাই কমিশনের চিত্রটা কিন্তু এমনই। বাইরে অসংখ্য দালাল, নতুন কেউ গেলেই ঘিরে ধরেন, কি করবেন, পাসপোর্ট, ব্যাংক ড্রাফট নাকি ওয়ার্ক পারমিট? আমরা করে দিচ্ছি। খুব কম সময়ে, আপনি নিজে করতে গেলে অযথা হয়রানি হবেন। কাজের কাজ করতে পারবেন না।
এক সময় আমপাঙ এলাকায় ছোট্ট পরিসরে ছিল বাংলাদেশের কুয়ালালামপুর মিশন। জানুয়ারি মাসে টিটিবাংসা এলাকায় রাজকীয় ভবনের সুপরিসর স্থান জুড়ে বাংলাদেশ হাই কমিশন বসেছে। কিন্তু সেবার মান নিয়ে কেউই সন্তুষ্ট হতে পারছেন না।
তাদের অভিযোগ, হাই কমিশন জিম্মি হয়ে পড়েছে একটি দালাল চক্রের কাছে। যে চক্রটিতে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছেন মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের নেতা মকবুল হোসেন মুকুল। হাই কমিশনের লোকজনের সঙ্গে বেশ দহরম মহরম তার।
কিন্তু দালালদের চেয়ে হাই কমিশনের উপরই বেশী ক্ষোভ প্রবাসীদের। ফেসবুকে কার্যত সেই ক্ষোভেরই বহিপ্রকাশ ঘটেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৭
এসআই/জেডএম