ইচ্ছা করেই নীরবে ফুল ঘেঁষে ‘লাকম ইনন’ রিসিপশনে গিয়ে দাঁড়ানো। চারদিকে বাহারি ফুল ও পাতাবাহারে ঠাসা।
কারণ এর আগে নেপাল ভ্রমণের সময়ে ‘বাজেট হোটেল’ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বেশ সুখকর ছিল না। মালয়েশিয়া যাওয়ার সময়ও অনেকে বাজেট হোটেল সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। বলেছিলেন ৭৯ রিঙ্গিত রুম ভাড়া, ভালো কিছু আশা করা কঠিন। যাও, ছারপোকা ফ্রি পেতে পারো।
সে কারণে মনের মধ্যে একটা শঙ্কা থেকেই গিয়েছিল। ভেবে রেখেছিলাম, যদি খুব খারাপ হয় তাহলে একদিন পরেই ছেড়ে দেবো। আর যদি মন না টেকে তাহলে একদিনের ভাড়া গচ্চা দিয়েই অন্য হোটেলে।
ম্যানেজার এগিয়ে এলেন, আপনি মিস্টার ....? বাংলাদেশ থেকে এসেছেন? হ্যাঁ, জবাব দিতেই হাত থেকে ব্যাগ নিলেন। বললেন, চলেন রুম দেখিয়ে দিচ্ছি। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বললেন, এতো দেরি কেনো ফ্লাইট কি ডিলে ছিল। কোনো সমস্যা হয়নি তো। ম্যানেজার শেখ জহিরের আন্তরিকতায় মনটা ভরে উঠলো। বিদেশ বিভূঁইয়ে বাংলা বলার লোক দেখে আরও অনেকটা নির্ভার মনে হলো।
ম্যানেজারের পিছু পিছু সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলাম দ্বিতীয় তলায়। রুমের পরিসর ছোট হলেও অনেক পরিপাটি। রুমে একটি আলমিরা, ছোট্ট একটি টেবিল তাতেও এক থোকা সতেজ ফুল, বেডের বিপরীতে ওয়ালে ঝুলছে টিভি। বেড কভারও নতুনের মতো ধবধবে সাদা।
ফ্রেস রুমটা ভালো হলে কেল্লাফতে। ঢুঁ মারতেই সব দুর্ভাবনা দূর হয়ে গেলো। পুরো টাইলস ফিটিংস, ঝকঝকে একেবারে নতুনের মতো। ফোর স্টার হোটেলের চেয়েও সুন্দর।
হোটেলের লোকেশনও জেনেও দারুণ ভালো লাগলো। এখানে অবস্থান করা মানে সিটির সেন্টার পয়েন্টে থাকা। সিটির হৃদপিণ্ডে আপনি অবস্থান করছেন তাতেও বেশি বলা হবে না। সিটি অব সিম্বল টুইন টাওয়ার, লাকম ইনন থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
তাবত অভিজাত শপিংমলও এই হোটেলের চারদিকে ঘিরে অবস্থিত। কেএল টাওয়ার মাত্র হাফ কিলোমিটার, প্যাভিলয়ন সিটি হাফ কিলোমিটার, টাইম স্কয়ার দুই কিলোমিটার, সুংগাই ওয়াং প্যালেস হাফ কিলোমিটার। মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় আইটি মার্কেট (প্লাজা ল ইয়েট) মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এখানে সারা বিশ্বের নামিদামি সব কোম্পানি পসরা সাজিয়ে অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
আবার এখানে থেকে দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে যান, তাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। মালয়েশিয়ান সরকারের ফ্রি বাস সার্ভিস গো কেএল (কোনো চার্জ দিতে হয় না) রুট ও স্ট্যান্ড মাত্র তিন মিনিটের হাঁটা পথ। আবার র্যাপিড বাস সার্ভিস, মনোরেল স্টেশনও একেবারে পায়ের নাগালে।
রাতের কুয়ালালামপুরকে উপভোগ করতে হলে ‘লাকম ইনন’র জুড়ি নেই। রাত ১০টায় সিটির অন্য এলাকা যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন সরগরম হয়ে ওঠে লাকম ইনন’র (বুকিত বিনতাং) আশপাশ। দিনরাত আলাদা করা কঠিন। বর্ণিল আলোসজ্জা ও হৈ হুল্লোড়ে মেতে থাকে সারারাত।
শত শত নাইট ক্লাব, মেসেজ পার্লার ও বারে ঠাসা। এখানের স্ট্রিটফুডের জুড়ি মেলা ভার। এক লাইনে কয়েকশ দোকান। রয়েছে লাইফ ফিস বারবিকিউ উপভোগের দারুণ আয়োজন।
যারা বাঙালি খাবারের স্বাদ নিতে চান তাদের জন্য নো টেনশন। দু’কদম হেঁটে গেলে সব বাঙালি হোটেলের স্বাদ নিতে পারবেন। এখানে পাশেই রয়েছে হোটেল তাজসহ বেশ কয়েকটি বাঙালি খাবারের দোকান। সুদূর মালয়েশিয়ায় বসে ডাল-ভাত, আলুভর্তা, বেগুনভর্তা কিংবা শাক-সবজি দিয়ে উদরপূর্তি করতে পারবেন মাত্র ষাট টাকায় (বাংলাদেশি টাকা)।
শতভাগ বাঙালি মালিকানার ‘লাকম ইনন’ বৈশাখ উপলক্ষে দিচ্ছে বিশেষ ছাড়। বাংলাদেশে পেমেন্টে পাচ্ছেন ২০ শতাংশ কম দামে। বুকিংয়ের সময় ইউসিবির হেল্পবিডি হিসাব নম্বরে টাকা দিলেই এই ছাড় প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছেন, লাকম ইনন’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুল হোসেন উজ্জ্বল।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, মানের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হয় না। এটাকে শুধু ব্যবসা নয়, সেবার মাধ্যম মনে করি। অনেক হোটেল রয়েছে রাতে একটা সময়ের পর ঠিকভাবে সার্ভিস দেয় না। কিন্তু আমাদের হোটেলের সার্ভিস পাবেন টোয়েন্টিফোর আওয়ার।
বিস্তারিত জানতে ভাইবার, হোয়ার্টস অ্যাপ এবং আইএমওতে যোগাযোগ করুন +৬০১০৭৬৬৬৫১৫। অথবা ভিজিট করুন http://lacommeinn.com.my
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৭
এসআই/এএ