হাসপাতালের রিসিপশন থেকে জানালো বি-ব্লকে যেতে হবে, যা আরেকটি বিল্ডিংয়ে। এরইমধ্যে পাশে সিকিউরিটি গার্ড এসে হাজির।
তিন-চার মিনিটেই গাড়ি বি-ব্লকে পৌঁছে দিলো আবু রায়হানকে। হাসপাতালে ব্লক ও রুম খোঁজার বিড়ম্বনার মধ্যে এমন সেবা তার কাছে এক বিস্ময়! প্রথমেই এমন আন্তরিকতায় হাসপাতালটি মন জয় করলো রায়হানের।
চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের বিড়ম্বনা, দৌড়ঝাঁপ ও ক্লান্তি দূর করতে এমন অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে মালয়েশিয়ার জিকেএল হাসপাতাল। জালান আমপাং এলাকার কূটনৈতিক পাড়ায় হাসপাতালটির অবস্থান। শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় বিদেশি নাগরিকদের যাতায়াতে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয় না।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের প্রত্যাশা থাকে চিকিৎসাসেবা সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশও যেন মনোরম ও রোগীবান্ধব হয়। রোগীদের এমন চাওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে জিকেএল হাসপাতাল।
হাসপাতালটিতে রোগীর প্রতি আন্তরিক যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি রয়েছে ঘরোয়া পরিবেশ। জিকেএল হাসপাতালের রোগীদের কক্ষগুলো বেশ বড় বড়, হাঁটাচলা জন্য রয়েছে প্রশস্ত করিডোর আর রয়েছে জিমের ব্যবস্থা। পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি হাসপাতালটির করিডোর নানা ধরনের ফুল ও পাতাবাহার গাছে সাজানো।
বইপ্রেমী রোগী ও স্বজনদের পড়ার জন্য রয়েছে চেয়ার-টেবিলে গোছানো আলাদা কক্ষ। হাসপাতালের ভেতর থেকেই রোগী ও স্বজনরা কিনতে পারবেন পছন্দের বই কিংবা ম্যাগাজিন।
দীর্ঘদিন হাসপাতালে থেকে চুল ও দাড়ি-গোঁফ বেড়ে গেছে। নারী রোগীর অনেকদিন পার্লারে যাওয়া হয় না কিংবা রোগীর সাথে আসা স্বজনও সময় পাচ্ছে না ত্বকের যত্ন নেওয়ার। এমন টেনশন দূর করতে জিকেএল হাসপাতালেই রয়েছে পার্লারের ব্যবস্থা।
সাজানো-গোছানো জিকেএল হাসপাতালের পথচলা ১৯৯৬ সালে। প্রথমে কেবল ব্লক-এ বিল্ডিংয়ে কার্যক্রম শুরু হলেও গতবছর আনুষ্ঠানিকভাবে ব্লক-বি’র যাত্রা শুরু হয়। বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশের রোগীর সেবাদানে অনুমোদনপ্রাপ্ত এই হাসপাতাল। ৩৩০টি শয্যা ও ১৫০ জন স্পেশালিস্ট কনসালট্যান্ট রয়েছেন এই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে।
এ-ব্লক থেকে বি-ব্লকে যাওয়ার সংযোগ ব্রিজ থাকলেও রোগীদের জন্য আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে রোগী যাতে অবসাদে না ভোগেন সেদিকে সার্বক্ষণিক নজরদারি হয়।
কেবিন ও স্যুইট কেবিনের মানকে পাঁচ তারকা হোটেলের কাছাকাছি মানের বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে রয়েছে বিশাল কক্ষ, আরামদায়ক বিছানা, টিভি ও সোফা সেট।
চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা যাতে কমফোর্ট ফিল করেন সেদিকে সম্পূর্ণ নজর রাখা হয় বলে জানালেন জিকেএল’র মাতৃপ্রতিষ্ঠান পার্কওয়ে পানতাইর মালয়েশিয়া অপারেশন্স ডিভিশনের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং বিভাগের ম্যানেজার সাইমন চিওক।
তিনি বলেন, হাসপাতাল শুনলেই রোগী ও তার স্বজনদের মনে একটা ভীতি কাজ করে। ছোটাছুটি-ভোগান্তি, রোগ সারাতে এসে কেবল হয়রানিতেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য রোগীর যত আরাম নিশ্চিত করা যায়। রোগীরা যেন হাসপাতালে অবস্থানের সময়টুকুকে জীবনের সেরা মনে করেন।
চিকিৎসাসেবায় বিশ্বে সেরা হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উন্নত সেবার পাশাপাশি পরিবেশের দিকে সমান নজর রয়েছে বোঝা গেল। হাসপাতাল ঘুরে দেখাচ্ছিলেন সাইমন চিওক ও বাইরের রোগীদের তত্ত্বাবধায়ক হাজিমা।
হাসপাতালের এ-ব্লক ২১ বছর আগে নির্মিত হওয়ায় খানিকটা আটোসাঁটো। সে তুলনায় বি-ব্লক অত্যাধুনিক। পুরো হাসপাতালের দেয়ালজুড়ে রয়েছে তৈলচিত্র, যা হাসপাতালটির সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। ছাদে খোলা আকাশের নিচে পায়চারি করার সুযোগ রয়েছে রোগীদের।
মোট কথা রোগী ভর্তি করানো, ডাক্তার দেখানো, পরীক্ষা করা ও রেজিস্ট্রেশনসহ হাসপাতালের সবকিছুতেই একটা পরিচ্ছন্ন-পরিপাটি ভাব সুস্পষ্ট।
সাইমন চিওক বলছিলেন, এখানকার চিকিৎসক থেকে সেবিকা, সবাই উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সবাই নিবেদিতপ্রাণ হয়ে সেবা দেন রোগীদের। উন্নত চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি রোগীর অবসাদ দূর করা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
চিকিৎসাসেবায় অবদানের কারণে জিকেএল মালয়েশিয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা শিল্পের স্বীকৃতি পুরস্কার, ইন্টারন্যাশনাল ওয়েলনেস অ্যান্ড হেলথকেয়ার ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইডব্লিউএইচটিএ) সদস্যপদ লাভ, আমেরিকান গণমাধ্যম রিডার ডাইজেস্টের বিচারে ‘সবচেয়ে আস্থার ব্র্যান্ড পুরস্কার’ পেয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৭
এমসি/এমজেএফ