বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মীদের রি-হায়ারিংয়ের সময় যাতে আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়-হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সে চেষ্টা অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতাও বেশ এগিয়েছে।
কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকিমশন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে।
সূত্র বলছে, মালয়েশিয়ায় অবৈধ নাগরিকদের চিহ্নিতকরণ ও তাদের বৈধ হবার কর্মসূচিই হচ্ছে রি-হায়ারিং। যা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। যারা বৈধভাবে প্লেনে বা ইমিগ্রেশন পেরিয়ে মালয়েশিয়ায় ঢুকেছিলেন শুধু তাদের জন্যই এ কর্মসূচি হচ্ছে।
এর মধ্যে যারা সমুদ্রপথে কিংবা অন্যান্যভাবে অবৈধ পথে মালয়েশিয়ায় এসেছেন তারা সুযোগ পাচ্ছেন না। তাদের জন্যে আলাদা প্রোগ্রাম ই-কার্ড চালু করেছে মালয়েশীয় সরকার।
কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হলেও তা আরও ৬ মাস বাড়ানোর জন্য হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আশা করি মেয়াদ বাড়বে। ’
তবে সতর্ক করে তিনি এও বলেন, ‘এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই সবাই যেনো ৩১ ডিসেম্বরের আগেই নথিভুক্ত হন। ’
এর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে কুয়ালালামপুর সফরের সময় দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধতা দিতে মালয়েশীয় সরকারকে অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরবর্তীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হাইকমিশনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে বসবাসরত অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দিতে ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রি-হায়ারিং কর্মসূচি চালু করে দেশটির সরকার। প্রথমে এর মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
পরে হাইকমিশনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও শ্রমবাজারের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে দেশটির সরকার তা ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ায়। এরপর আবারও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে তা ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে যারা বৈধভাবে বন্দর দিয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেননি তাদের রি-হায়ারিং কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হবার সুযোগ নেই। ফলে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক।
সে কারণে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে টেলিফোনে আলোচনা হয়। ওই আলোচনা এবং কূটনৈতিক তৎপরতায় চলমান রি-হায়ারিং কর্মসূচির সহায়ক হিসেবে অবৈধদের সাময়িক বৈধতা হিসেবে চালু হয় এনফোর্সমেন্ট কার্ড (ই-কার্ড)।
এই ই-কার্ড কর্মসূচির মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত। ই-কার্ড কর্মসূচিতে নিবন্ধিত হলেও দীর্ঘমেয়াদে বৈধতা পেতে প্রত্যেককে অবশ্যই রি-হায়ারিং কর্মসূচিতেও নিবন্ধন করতে হবে।
এদিকে এ দুই কর্মসূচি সম্পর্কে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবহিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ হাইকমিশন। এরই অংশ হিসেবে শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচারপত্রও বিলি করা হয়।
হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ই-কার্ড কর্মসূচির আওতায় প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার বিদেশি অভিবাসী ই-কার্ড সংগ্রহ করেছেন; যার মেয়াদ রয়েছে আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
‘রি-হায়ারিংয়ের মতো ই-কার্ডপ্রাপ্ত অভিবাসীদের মধ্যেও বাংলাদেশিদের সংখ্যা সর্বাধিক। ই-কার্ডপ্রাপ্তির পর বিদেশিকর্মীরা স্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার জন্যে পরিচালিত রি-হায়ারিং প্রোগ্রামের আওতায় চলে আসবেন। ’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, এরই মধ্যে যেসব বাংলাদেশি ই-কার্ড পেয়েছেন অথবা রি-হায়ারিং কর্মসূচিতে নিবন্ধিত হয়েছেন অথচ পাসপোর্ট করেননি বা নেই- এমন শ্রমিকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাইকমিশন থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বৈধতা অর্জনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৭
কেজেড/এমএ