বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এম রেজাউল করিম রেজা একথা বলেন। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের দুর্দিন যাচ্ছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে রেজা বলেন, এর আগে মালয়েশিয়ায় আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি ছিল না। যুবলীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের কার্যক্রম ছিল। আমার নেতৃত্বেই ২০০৮ সালে বর্ণাঢ্য আয়োজনে কাউন্সিল করা হয়। সেই কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০১৫ সালে কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে হলে তাকে করা হয় আহ্বায়ক।
‘মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগে কিছুটা টানাপড়েন শুরু হয়েছে। অনুমোদনের জন্য পাল্টাপাল্টি কমিটি জমা হয়েছে কেন্দ্রে। কথিত রয়েছে কমিটি অনুমোদনের জন্য ধর্না দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রে। আবার চলছে নাকি টাকার খেলাও। ’
এসব বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের এই অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকায় দলে কিছু অনুপ্রবেশকারী দেখা যাচ্ছে। যারা জিয়ার সময় জিয়াকোট, এরশাদের সময় এরশাদের সাফারি পরতো তারাই এখন মুজিবকোট পরে দলে অনুপ্রবেশ করেছে। এরা আওয়ামী লীগের নয়, বিএনপি-জামায়াতের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাইছে।
এক সময় যাদের বিএনপির সভা-সমাবেশে দেখা যেতো তারা এখন আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এরা আসলে আওয়ামী লীগের ভালো চায় না। আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার গোপন মিশন নিয়ে নেমেছে। বলেন রেজাউল করিম রেজা।
তিনি বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি তারা যে কমিটি জমা দিয়েছে সেখানে যদি ভোটাভুটি হয় সত্তর শতাংশ ভোট আমি পাবো। কয়েকদিন আগেও চিটিংয়ের দায়ে হাজত খেটেছে তেমন কাউকে আওয়ামী লীগের কর্মীরা নেতা হিসেবে দেখতে চাইবে না।
যিনি আওয়ামী লীগের নেতা হতে চাইছেন তাকে লোকজন ব্যবসায়ী হিসেবে জানে। ৯৫ শতাংশ ব্যবসায়ী আর ৫ শতাংশ রাজনীতিবিদ। আর আমি ৮৫ শতাংশ রাজনীতিবিদ, মাত্র ১৫ শতাংশ ব্যবসায়ী। আমার দ্বারা কখনও কারো ক্ষতি হয়নি। আর যিনি নেতা হতে চাইছেন, তার সম্পর্কে খোঁজ নিলে অনেক কিছু জানতে পারবেন। তার নৈতিকতার স্খলনের অভিযোগ রয়েছে।
দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবাসী অধ্যুষিত মালয়েশিয়ায় আওয়ামী লীগের বিপুল কর্মী-সমর্থক রয়েছে। যারা জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এখানে সংগঠন শক্তিশালী হওয়া খুবই জরুরি। আর যদি সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচনে ব্যর্থ হয় তাহলে স্বাধীনতাবিরোধীরা সুবিধা পাবে। মন্তব্য করেন তিনি।
রেজা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তিনি সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন। কারো কথায় কোনো অনুপ্রবেশকারীর হাতে দলের দায়িত্ব দেবেন না।
আওয়ামী লীগের এই পরীক্ষিত নেতা মনে করেন, মালয়েশিয়া সরকার শ্রমবাজারটি দশজনের সিন্ডিকেটের হাতে দিয়ে রেখেছে। তারা চড়ামূল্য আদায় করছে। সরকারের উচিত হবে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া। না হলে ৫ বছরে ১৫ লাখ শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হবে না। এতে শ্রম বাজারটি নেপাল, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও ভারতের হাতে চলে যাচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এম রেজাউল করিম রেজা। তার দুই দাদা শহীদ হয়েছে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে। একজন পেয়েছে বীরবিক্রম উপাধি। শ্রীপুর কলেজে অধ্যয়নের সময় ছাত্রলীগে যোগ দেন। মেধা ও প্রজ্ঞার কারণে অল্পদিনের মধ্যেই কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শ্রীপুর থানায় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ক্ষমতার পালাবদলে বিএনপি মসনদে বসলে বিএনপি নেতা মজিদুল হকের রোষানলে পড়েন। তার বিরুদ্ধে একেকপর এক মামলা দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাকে হত্যার জন্য সর্বহারা ভাড়ার বিষয়ে জানতে পারলে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান।
প্রথম দিকে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ায় ঘোরাফেরা করেন। পরে মালয়েশিয়ায় অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রথম গার্মেন্ট পণ্যের স্টকলটের ব্যবসা শুরু করেন। তাকে স্টকলট ব্যবসার পায়নিয়ার হিসেবে গণ্য করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
এসআই/এএ