প্রথমবার মালয়েশিয়া ভ্রমণের তিনদিন জৌলুস আর চাকচিক্যে ভরা কুয়ালালামপুর শহর দেখা হলেও পুত্রাজায়ায় যাওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে কুয়ালালামপুরের রমরমা অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক হালচাল আর বুকিত বিনতাং সড়কের ঝলমলে সন্ধ্যা দিয়েছে অনন্য এক অনুভূতি।
শেষ দিন মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দেশে ফেরার পথে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের উদ্দেশে মালয়দের জনপ্রিয় পরিবহন সেবা ‘গ্র্যাব’ ভাড়া করে ফিরছিলাম আমরা পাঁচজন। চালক একজন নারী, নাম নুরাইন।
চটপটে ও সদা হাস্যোজ্জ্বল নুরাইন নিমিষেই পটাতে পারেন ট্রাভেলারদের। নিজেও তিনি বেশ উদ্যমী ট্রাভেলার। নিজ থেকেই আমাদের জিজ্ঞেস করছিলেন কোথায় কোথায় ট্রাভেল করেছি। পুত্রাজায়া দেখা হয়নি শুনে সেখানে ঘুরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করলেন নুরাইন। ভোররাতে ফ্লাইট হওয়ায় আমাদের হাতে সময়ও ছিল অনেক। নুরাইনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম।
গাড়ি চললো একশ’ কিলোমিটার গতির উপরে। একটুখানি ঘুরে নুরাইন আমাদের নিয়ে চললেন পুত্রাজায়ার পথে। যেতে যেতে দেখালেন কোথায় কী আছে। মধ্যরাত হওয়ায় সড়ক প্রায় যানবাহন শূন্য। নিমিষেই পৌঁছে গেলাম পুত্রাজায়ায়।
দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিলো সারি সারি উঁচু ভবনে জ্বলে থাকা বাতিগুলো। রাতের অন্ধকার ফুঁড়ে মাতিয়ে রেখেছে পুত্রাজায়া। খানিক এগিয়ে দেখা গেলো সড়কের উপর সাদা উঁচু পিলারের গায়ে শত শত বাতির আলো পানিতে পড়ে প্রতিবিম্ব হয়ে অসাধারণ রূপ নিয়েছে রাতের পুত্রাজায়া।
নুরাইন জানালেন এটি পুত্রাজায়া ব্রিজ; শহরের সবচেয়ে বড় ব্রিজটি পুত্রাজায়ার একটি ঐতিহ্য। গ্র্যাব কার থামলো ব্রিজের উপরেই। সেখানে নেমে কিছুক্ষণ বিরতি দিলেন নুরাইন। তুলে দিলেন আমাদের গ্রুপ ছবি।
এবার তাড়া দিলেন নুরাইন। আবার গাড়িতে উঠে পড়ে সামনে কিছুদূর এগিয়ে দেখালেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরপর সচিবালয়, আদালত, কূটনৈতিক পাড়ার বিরাট আকৃতির অফিসগুলোর কোনটা কী বলে দিলেন নুরাইন। রাস্তার এপাশ ওপাশে মুখোমুখি আদালত ভবন ও সচিবালয়। আবারও ছবি তুলে দিলেন তিনি।
রাজধানী কুয়ালালামপুর মালয়েশিয়ার বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রস্থল। তবে অধিক জনসংখ্যা ও ঘিঞ্জি পরিবেশের কারণে কুয়ালালামপুর থেকে ১৯৯৯ সালে পুত্রাজায়ায় স্থানান্তর করা হয় প্রশাসনিক রাজধানী।
‘পুত্র’ অর্থ ছেলে সন্তান আর ‘জায়া’ অর্থ সাফল্য বা বিজয়। ১৯৯০ সালে পুত্রজায়ার উন্নয়ন শুরু হয়ে কয়েক বছরেই পূর্ণরূপ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে রাজধানী। দুটি রাজধানী হওয়ায় চাপ কমেছে দুটিতেই। আর পর্যটকের দেশ মালয়েশিয়া টানছে দেশি-বিদেশি লাখো দর্শনার্থী।
আমাদের গ্র্যাব কার ছুটে চলছিল বিমানবন্দরের দিকে। আলো ঝলমলে সড়ক, ফ্লাইওভার ও ওভারপাস পেরিয়ে খানিক পরই পৌঁছে গেলাম কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর। সেখানে শেষবারের মতো কিছু ছবি তুলে দিলেন নুরাইন।
পুত্রাজায়ায় যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত পথের ভাড়াটা নিতে নিজেই অস্বীকৃতি জানাচ্ছিলেন এই মালয় কন্যা। তবে আমরা জোর করেই অতিরিক্ত পথের ভাড়া নিতে অনুরোধ করলাম। বাড়তি রিঙ্গিতগুলো হাতে নিয়ে সহাস্যে নুরাইন বললেন, ইটস হালাল?
আমাদের সম্মতি সূচক হাসিতে নিজেও হাসতে হাসতে পকেটে পুরলেন গ্র্যাবের ভাড়া। শেষে হাসিমুখে আমাদের বিদায় দিলেন নুরাইন। এভাবে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে বিদেশিদের আকৃষ্ট করার ক্ষমতা দিয়ে নুরাইনদের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার পর্যটনশিল্প।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
এমআইএইচ/এমজেএফ