ঢাকা: রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপি কার্যালয়কে প্লেস অফ অকারেন্স (পিও) ঘোষণা দিয়ে কর্ডন করে রেখেছে পুলিশ। এছাড়া আশপাশের এলাকায় যানচলাচল, জনসাধারণের চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে পল্টন থানার সামনে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশসনস) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এ এলাকা (পল্টন) আমরা পরিপূর্ণ নিরাপদ মনে না করবো ততক্ষণ পর্যন্ত এ এলাকায় যানচলাচল, জনসাধারণের চলাচল বন্ধ থাকবে। আমরা কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে আটকাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির দলীয় কার্যালয়কে আমরা এখন আইনের ভাষায় বলছি, প্লেস অফ অকারেন্স (পিও)। যে কারণে আমরা বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে কর্ডন করে রেখেছি। বিশেষজ্ঞ এবং ক্রাইম সিনের লোকজন ছাড়া কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত পুলিশের কাজ শেষ না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে কোনো কিছুই হতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, আমরা (পুলিশ) বুধবার থেকে সতর্কতামূলক অবস্থানে ছিলাম। কাউকে মারধর, হামলা করার উদ্দেশ্য পুলিশের ছিল না। কিন্তু একপর্যায়ে যখন বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তায় ব্লক করে অবস্থান নেয়, জনসাধারণের চলাচল বিঘ্ন সৃষ্টি করে, তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
কিন্তু একপর্যায়ে ডিসি মতিঝিলসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা হয়। যখন পুলিশের ওপর হামলা হয় তখন জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে, বাধ্য হয়েছি অভিযান পরিচালনার জন্য। পুলিশের ওপরে হামলা হয়েছে, ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে, নাশকতার চেষ্টা হয়েছে, নাশকতার সব ধরনের উপকরণ এখানে আনা হয়েছিল বলেও আমরা জানতে পারি। অভিযানে নাশকতার যাবতীয় উপাদান আমরা এখান থেকে উদ্ধার করেছি।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে নাশকতার উপাদান পাওয়া যায়, ককটেল পাওয়া যায়। এটা খুবই দুঃখজনক বিষয় যে, এটা রাজনৈতিক কোনো সংস্কৃতির মধ্যেই পড়ে না। ককটেল রাখার জায়গা হিসেবেই আমরা এখন বিএনপি কার্যালয়কে ট্রিট করছি। আমাদের ক্রাইম সিন ইউনিট কাজ করছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপাতত এ এলাকায় যানচলাচল এবং জনসাধারণের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
যে রাস্তা ব্লক হওয়ার কারণে বিএনপি নেতা কর্মীদেরকে আপনারা সরিয়ে দিয়েছেন সে রাস্তাটি পুলিশ বন্ধ করেছে, কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত। এটি একটি মারাত্মক বড় ঘটনাস্থল। এখানে অনেক ককটেল পাওয়া গেছে, এখানে আরো ককটেল থাকতে পারে। আমাদের কাছে বেশকিছু ইন্টেলিজেন্স তথ্য রয়েছে। তার ভিত্তিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এ এলাকাটিকে আমরা পরিপূর্ণ নিরাপদ মনে না করবো ততক্ষণ পর্যন্ত এই এলাকায় যানচলাচল, জনসাধারণের চলাচল বন্ধ থাকবে। আমরা কোন ব্যক্তিকে টার্গেট করে আটকাচ্ছি না। একান্ত জরুরি সেবার মানুষ, বিদেশগামী, অফিসগামী হাসপাতাল গ্রামের মানুষদেরকে না ছেড়ে দিচ্ছি। এখানে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার কোনো অবকাশ নেই।
বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি ডিএমপির পক্ষ থেকেই সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে এ বিষয়ে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, রাজনৈতিক দলীয় কার্যালয় ছাড়াও এখানে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অফিস-আদালত, বাসাবাড়ি রয়েছে। তাদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা বিধান করা পুলিশের পবিত্র দায়িত্ব। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য যা যা প্রয়োজন পুলিশের পক্ষ থেকে তাই তাই করা হবে।
সমাবেশের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ভিন্ন প্রসঙ্গ৷ যারা সমাবেশের আয়োজন করেছেন তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। জনসাধারণের চলাচল বিঘ্নিত হয় এমন কোনো স্থানে সমাবেশের অনুমতি দেবে না ডিএমপি।
এর আগে বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৩টায় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশ ও নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নয়াপল্টন। এদিন সকাল থেকেই বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন দলটির নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়। এক পর্যায়ে রাস্তার একপাশ বন্ধ হয়ে গেলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে যায়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
সংঘর্ষের সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। জবাবে পুলিশও পাল্টা টিয়ার শেল ও শটগানের গুলি ছুঁড়ে। এতে নিহত হন মকবুল নামে একজন, আহত হয় বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২২
এমএমআই/জেএইচ