কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় জালিয়াত চক্রের দৌরাত্মে রেকর্ড করা সাধারণ জমির মালিকরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বলে একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ।
প্রতিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তারা।
সদর উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার সুব্রত রায় সিংহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলছেন, জমির প্রকৃত মালিক এবং জালিয়াত চক্রের লোককে ভেরিফাই করার কো ব্যবস্থা না থাকায় চক্রটি জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ছে। পদ্ধতিগত ভুলের সুযোগ নিয়ে করা জালিয়াতি বন্ধ করার কোনো সুযোগ নেই সাব রেজিস্ট্রারের হাতে।
তবে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানা ও পিবিআইয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, জালিয়াতি করে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জোবায়দা নাহার শেখ নামে এক নারী ও তার বোন সরকারি কর্মকর্তা জামিলা নাহার শেখের প্রায় ১০ কোটি টাকার জমি কুক্ষিগত করার অভিযোগে ৯ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় নয়জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সোমবার বিকেলে এমামলার এজাহারভুক্ত এক ইউনিয়ন ভূমিকর্মকর্তাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন বলে জানান পিবিআই কুষ্টিয়ার পুলিশ পরিদর্শক রবিউল আলম।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দুর্বাচারা গ্রামের বাসিন্দা মৃত শাহ উজির উদ্দিনের ছেলে এবং মনোহরদিয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহসিলদার) শাহ মো. মেজবাহুর রহমান (৫৫), নড়াইল জেলার মাধবপাশা গ্রামের হামিদুল শেখের ছেলে এসএম জিয়াউর রহমান (৩৯) এবং তার স্ত্রী নড়াইলের পিরতলী গ্রামেরর মাহতাব উদ্দিনের মেয়ে সুমনা খাতুন (৩০)।
কুষ্টিয়া দেওয়ানী আদালতের কৌসুলি অ্যাডভোকেট আ আ স ম আকতারুজ্জামান মাসুম জানান, সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে শহরের জিরো পয়েন্টে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবনের প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি নিজেদের দাবি করে দখল করে নেওয়ার চেষ্টা এর জ্বলন্ত উদাহরণ। গত ১০ মাসের মধ্যে জালিয়াত চক্রের জাল দলিলে অন্যের জমি দখলের প্রতিকার চেয়ে অন্তত ডজনখানেক মামলা হয়েছে। সেগুলো এখন বিচারাধীন। এসব জাল দলিলের সবগুলোরই কুষ্টিয়া সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে উৎপত্তি হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা যায়, কমিশন কেস নং ১৫ তাং ১১/০৩/২০২২ দলিল নং ২৫৩৩/২০২২ দাতা জোবায়দা নাহার শেখ ও জামিলা নাহার শেখ এবং গ্রহীতা শাহ মো. মেজবাহুর রহমান ১ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকার দলিল হয়। কমিশন কেস নং ১৬, তাং ১১/০৩/২০২২ দলিল নং ২৫৩৪/২০২২ দাতা জামিলা নাহার শেখ ও জোবাইদা নাহার শেখ এবং গ্রহীতা শাহ মো. মেজবাহুর রহমান, শামসুল ইসলাম, ইউসুফ হাসাইন ও মো. সাদ্দম খাঁ। দলিল মূল্য ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। কমিশন কেস নং ১০, তাং ০৪/০২/২০২২ দলিল নং ১১৪৮/২০২২, দাতা জামিলা নাহার শেখ ও জোবায়দা নাহার শেখ এবং গ্রহীতা শামসুল ইসলাম, ৪ লাখ টাকা মূল্যের দলিল সম্পাদন করেন।
দলিল লেখক শাহ মো. খলিলুর রহমান সনদ নং ৮০, মামলার এজাহার নামীয় ০১ নং আসামি শাহ মো. মেজবাহুর রহমানের ভাই কর্তৃক সম্পাদিত এ তিনটি দলিল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ যদি জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে এসে নিজেকে ছলিমদ্দি বা কলিমদ্দি বলে দাবি করে দলিল লিখে দিতে বলেন, আমরা সেটাই করে দেব। এখানে বৈধ না অবৈধ, সেটা যাচাই করার দায়িত্ব আমার না, ওটা দেখার দায়িত্ব সাব রেজিস্ট্রারের।
পিবিআই কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার শহীদ আবু সরোয়ার জানান, ভুয়া দাতা গ্রহীতা সেজে জাল দলিল সৃষ্টি করে অন্যের জমি কুক্ষিগত করার অভিযোগে কুষ্টিয়া মডেল থানায় করা মামলার প্রাথমিক তদন্তে পিবিআই রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত কেয়ারটেকার, স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তা, দলিল লেখক ও সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সংঘবদ্ধভাবে জালিয়াতি করতেন বলে নিশ্চিত হয়েছে পিবিআই।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
এসআই